শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২১

দীর্ঘজীবী হতে চান? এই ৯টি নিয়ম মেনে চলুন

  বেশী দিন বেঁচে থাকার উপায় হচ্ছে কতগুলি সাধারণ নিয়ম কানুন মেনে চলা। কোন ধরণের জাদুকরী বিষয় এখানে নেই। কম বয়স থেকেই কিছু অভ্যাস যদি আপনি গড়ে তুলতে পারেন তাহলে, দীর্ঘ জীবন পাওয়া যেমন সম্ভব, তেমনি বার্ধক্যের সময়টাও তুলামূলক শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখতে পারবেন আপনি।

 বেশী বেঁচে থাকতে চাওয়া একটা স্বাভাবিক প্রবণতা মানুষের। মৃত্যুকে এড়ানোর কোন উপায় এখন পর্যন্ত নেই আমাদের হাতে। তারপরও সেই অবধারিত পরিণতির সাথে নিজের দূরত্ব বাড়ানোর একটা চেষ্টা তো অন্তত করা যেতে পারে। বর্তমান সময়ে মানুষের গড় আয়ু সত্তর বছরের মত। আপনি যদি সুস্থ সুশৃঙ্খল ভাবে জীবনযাপন করেন, সত্তর বছরের বেশী সময় জীবনকে উপভোগ করা সম্ভব।

  বিভিন্ন উন্নত ও ধনী দেশে, অবস্থাপন্ন নাগরিকগণ এখন অনায়াসেই আশির কোঠা পার করে যান। এবং এই বার্ধক্যের এই সময়টাও তাদের শরীরে যৌবনে সমস্ত গুনাবলী না থাকলেও, সম্পূর্ণ অক্ষম বা অশীতিপর হয়ে পড়েন না। তাদের এই দীর্ঘ জীবনের মূলে রয়েছে, কতগুলো স্বাভাবিক অভ্যাস ও নিয়ম কানুন মেনে চলা। এই নিয়মগুলো এতটাই প্রমাণিত যে, উন্নত দেশে এগুলো তাদের সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়েছে।


১। লাল-মাংস বা রেড মিট বর্জন করুন :

 গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি চতুষ্পদ গবাদি পশুগুলোর মাংস রেড মিট বা লাল মাংস। রেড মিটের সাথে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার যেমন : কোলন ক্যান্সার, স্টমাক ক্যান্সারের সরাসরি যোগসূত্র লক্ষ্য করেছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তাছাড়াও এই সব মাংসের সাথে যে চর্বি থাকে, সেটি শরীরের জমা হয়ে সামগ্রিক মেদবৃদ্ধি ঘটায়। হৃদপিন্ডের রক্তবাহী নালিকাগুলোর গায়ে এই চর্বি জমা হয়ে রক্তনালীকে সরু করে ফেলতে পারে, রক্ত চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ, কিডনীর সমস্যা ইত্যাদির সম্ভাবনা বিবেচনা করে বলা যায় - যারা বেশী দিন বেঁচে থাকতে চান, তারা অবশ্যই আজকে থেকেই রেডমিট বর্জন করুন। 

২।বেশী করে শাক সবজি খান :

 শাক সবজি ডায়েরটারি ফাইবারের অংশ। আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এই ফাইবার বা আঁশ। একটা কথা স্মরণ রাখা জরুরী - আপনার পেটের অবস্থা যেমন থাকবে, আপনার জীবনের সামগ্রিক মানও তেমন হবে। নিয়মিত শাক সবজিও খাওয়া পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখার একটি অন্যতম শর্ত। যারা পর্যাপ্ত শাক সবজি খায় না, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস ও পরবর্তী সময়ে কোলন ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের সম্ভাবনা তৈরী হয়। এধরণের রোগ ব্যাধি থেকে অকালমৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে প্রতি নিয়তই। শাকসবজিতে বর্তমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অত্যান্ত জরুরী। এমনকি শুধুমাত্র শাক সবজি ভিত্তিক একটি খাদ্যাভাস গড়ে তোলা গেলে সবচেয়ে ভালো হয়। মাংস বা প্রাণীজ উৎসের আমিষ সম্পূর্ণ বর্জন করে উদ্ভিজ উৎসগুলো খুঁজে নিন। প্রথম ক’দিন একটু কষ্ট হলেও, দ্রুতই আপনি শাক সবজি নির্ভর খাদ্যাভাসের উপকারিতা উপলব্ধি করবেন।

৩। দু্শ্চিন্তা মুক্ত থাকুন :

 দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেস মানুষের জীবনীশক্তি কমিয়ে দেয়। এটি বহু পরীক্ষায়  প্রমাণিত হয়েছে বহুবার। স্ট্রেস বা মানসিক পীড়ন উচ্চরক্তচাপের সৃষ্টি করে। দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর হরমোন তৈরী হয় ; সামগ্রিক দেহব্যবস্থায় একটি বিশৃঙ্খলা চলে আস। এর ফলে শরীরে ক্যান্সার বিকাশের আদর্শ পরিবেশ গড়ে ওঠে। দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ আপনার শরীরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ওপর কুপ্রভাব ফেলে।

 আধুনিক মানুষের দুশ্চিন্তার কারণের অভাব নেই। পরিবার এবং ক্যারিয়ার এর মধ্যে প্রধান। আপনি রাতারাতি চাইলেই এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করা বন্ধ করতে পারবেন না। তারপরও চেষ্টা করা যায়। এজন্য পৃথিবীকে সুফি দার্শনিকদের চোখে দেখার চেষ্টা করুন। পৃথিবী ক্ষয়িষ্ণু। যা কিছু নিয়ে আপনি চিন্তা করে অস্থির হচ্ছেন, তার কিছুই আর মাত্র কয়েকদিন পরেই থাকবে না। ব্রক্ষান্ড বা ইউনিভার্স একটি বিশাল আয়োজন। সেখানে পৃথিবী অতি ক্ষুদ্র একটি ধূলিকণা। এই ক্ষুদ্র ব্যবস্থাটির ভেতরে আপনার ব্যাক্তিগত সমস্যা তো আরও তুচ্ছ। খামোখা পৃথিবীতে নিজের সময়টুকু কেন দুর্বিষহ করবেন? অর্থাৎ, সম্পূর্ণ উদাসীন হবেন না। কিন্তু ঔদাসীন্যের একটি পরিমিত চর্চা করতে পারেন।

 নিয়মিত প্রার্থণা, বই পড়া, ধ্যানও আপনাকে দুশ্চিন্তা দমনে সাহায্য করবে।

৪। ধূমপান করবেন না :

 যারা বেশীদিন বাঁচতে চান, তারা আজই ধূমপান ছেড়ে দিন। ধূমপান আপনার শরীরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি সাধন করে। ফুসফুস, হার্ট, মস্তিষ্ক তার মধ্যে অন্যতম। সিগারেটের প্যাকেটের ওপরই লেখা থাকে ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ। বা সিগারেট অকাল মৃত্যুর কারণ।

 তাছাড়াও ধূমপানে করে-করে যদি আপনি বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত টিকেও যান, সেক্ষেত্রেও নানা ধরণের দুর্বলতা, জটিলতায় ভুগতে হবে আপনাকে। অর্থাৎ, বেঁচে থাকার সুযোগ পেলেও সেই জীবন উপভোগ্য হবে না। সিগারেটের নিকোটিন আপনাকে মানসিক ভাবেও অস্থির অবস্থায় রাখবে। সুস্থ সুন্দর দীর্ঘ জীবনের জন্য ধূমপান ত্যাগের কোন বিকল্প নেই।

 ধূমপায়ীদের ব্যাধি - সিওপিডি সমন্ধে পড়ুন

৫। অ্যালকোহল ত্যাগ করুন :

 অ্যালকোহল আপনার লিভারকে নষ্ট করে। লিভারের ক্যান্সার, স্টমাক ও কোলন ক্যান্সারের কারণগুলোর মধ্যে মদ্যপান অন্যতম। তাছাড়া প্রতিবার মদ্যপানের সময় আপনার মস্তিষ্কের কিছু কোষ মরে যায়। অর্থাৎ, মদ্যপান আপনার বুদ্ধিশক্তিকেও নষ্ট করে ধীরে ধীরে।

 অ্যালকোহল আপনার শরীরে মেদের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে। রক্তবাহী নালীকাগুলো সংকুচিত হবে নিয়মিত অ্যালকোহল ব্যবহারে।  হঠাৎ করে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার প্রবণতা মদ্যপায়ীদের মাঝেই বেশী। সুতরাং দীর্ঘ জীবন যারা চান মদ্যপানের ধারে কাছেও না যাওয়া তাদের জন্য মঙ্গল।

 ৬। মৌসুমী ফলমূল খান :

 ফলমূল নানান ধরণের ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস। ফলে এমন অনেক পুষ্টি উপাদান আছে যেগুলোর প্রকৃতি ও কিভাবে আমাদের শরীরের উপকারে আসে - সেটি এখনও বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পারেনি। বলা যায়, ফল খাওয়ার যতটুকু উপকার আমরা জানি, বাস্তবে উপকারের পরিমাণ তার চেয়েও বেশী।

 ফলে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের শরীরের উপযোগী প্রাকৃতিক রূপে বিদ্যমান থাকে। বাইরে থেকে সাপ্লিমেন্ট বা অন্যান্য কৃত্রিম উপায়ে আপনি এই ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন না।

 প্রত্যেক মৌসুমের নির্দিষ্ট যে ফলগুলো বাজারে আসে, সেগুলি ঐ মৌসুমের প্রকৃতি, তাপমাত্রা ইত্যাদির মানানসই। সারা বছর সুস্থ থাকার জন্য এসব ফল খাওয়া তাই জরুরী। ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস আপনার জীবনীশক্তিকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়ে দেবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি খনিজ উপাদান 

৭। ভাজা-পোড়া, তেল চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করুন :

 ভাজা-পোড়া, তেল চর্বি জাতীয় খাবার আপনার শরীরকে মেদবহুল করে তোলে। এধরণের খাবারকে হজমে শরীরের প্রচুর শক্তি ব্যায় হয়। ফলে এসব খাবার খেয়ে এনার্জি পাওয়ার বদলে, আপনি বরঞ্চ আরও ক্লান্ত হয়ে যাবেন। আলস্য ও জড়তার অন্যতম কারণ ভাজা-পোড়া, তেল চর্বি জাতীয় খাবার।

 এছাড়াও খাদ্যনালীর ক্যান্সার, প্রদাহ, পাকস্থলীর ক্যান্সার, প্রদাহ এসবের অন্যতম কারণ তেল চর্বি জাতীয় খাবার বেশী খাওয়া। অতিরিক্ত তেল চর্বি আপনার শরীরের জন্য অস্বাভাবিক। শরীর এই উপাদানকে ঠিকমত প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে না। ফলশ্রুতিতে, গলব্লাডারে পাথর হতে পারে।

 হার্টের রক্তনালীর রোগ, উচ্চরক্ত চাপ ও অকাল মৃত্যুর অনেকগুলো কারণের জন্য দায়ী মানুষের ভাজা-পোড়া তেল-চর্বি খাওয়ার অভ্যাস। দীর্ঘজীবনের জন্য এই অভ্যাস থেকে নিজেকে মুক্ত করুন।

 হৃদযন্ত্রে কিভাবে কাজ করে ? জানতে পড়ুন

 

৮। চিনি খাওয়া বাদ দিন :

 শরীরে কোন কোষ যখন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বিভাজিত হতে থাকে, তখনই ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। অনিয়ন্ত্রিত এই বিভাজনের জন্য যথেষ্ট শক্তির প্রয়োজন। এই শক্তি ক্যান্সার কোষ আমাদের খাদ্য গ্রহণ করা চিনি থেকে সংগ্রহ করে থাকে বলে একাধিক গবেষক মনে করেন। অতএব , চিনি খাওয়া বাদ দেয়ার জন্য এটি একটি যথেষ্ট কারণ হতে পারে।

 তাছাড়াও, অতিরিক্ত চিনি খেয়ে আপনি স্বাভাবিক শারীরতাত্ত্বিয় কার্যক্রমকে ওলটপালট করে ফেললে, এক পর্যায়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবেন। ডায়াবেটিসে একবার  হয়ে গেলে, তখন চিনি খাওয়া বন্ধ করেও  তেমন একটা লাভ হবে না।

 চায়ের বাড়তি চিনি, বিভিন্ন কোমল পানীয় পান, চকলেট, কেক, পেস্ট্রি, ফাস্টফুড প্রতিটিতেই বিপুল পরিমাণে চিনি থাকে।  বেশী দিন বাঁচতে চাচ্ছেন এমন মানুষরা এসব খাবার এড়িয়ে যান।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সমন্ধে জানতে পড়ুন

 ৯। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন : 

দীর্ঘ জীবন পাওয়ার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চার কোন বিকল্প নেই। শরীরচর্চা একটি অভ্যাস, একটি শৃঙ্খলা। আপনাকে বডিবিল্ডার বা পেশাদার খেলোয়াড় হতে হবে না। প্রতিদিনই কমপক্ষে আধা ঘন্টা সময় রাখুন শরীরচর্চার জন্য। খুব ভারী কষ্টকর ব্যায়াম করা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু এমন কিছু করুন যা আপনাকে শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জ করে। আধা ঘন্টা হাঁটলেও হবে। যা-ই করবেন,  লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পর্যাপ্ত পরিশ্রম হয়। অর্থাৎ ঘাম হবে, হাঁপিয়ে যাবেন। আজকে যা করলেন, আগামীকাল তার চেয়ে কিছু বেশী করার চেষ্টা করুন।

 দীর্ঘ জীবনের জন্য নিয়মিত শরীরচর্চার বিকল্প নেই। কোন ঔষধ, চিকিৎসা আপনার প্রাত্যাহিক শরীরচর্চার প্রয়োজনকে পূরণ করতে পারবে না।

এই নিয়মগুলো আজকে থেকেই মনে চলা শুরু করুন। প্রথম ক’দিনে অস্বস্তি কেটে যাওয়ার পরই আপনি সুফল লক্ষ্য করতে শুরু করবেন। জীবন মৃত্যুর মালিক আমাদের প্রতিপালক। কিন্তু আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়।

বিশ্বজুড়ে অকাল মৃত্যুর পনেরটি প্রধান কারণ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নিউরোলজির বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষা

  লোকালাইজিং   লেশান্স   ইন দি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম - ( সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে ক্ষত বা লেশানের অবস্থান নির্ণয় )   রোগীর হিস্ট্রি নি...