লোকালাইজিং লেশান্স ইন দি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম- (সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে ক্ষত বা লেশানের অবস্থান নির্ণয়)
রোগীর হিস্ট্রি নিয়ে, এবং তাকে এক্সামিন করার পর, ক্লিনিশিয়ানের মনে, যেকোন প্যাথলজির প্রকৃতি এবং স্নায়ুতন্ত্রের কোথায় এই প্যাথলজির অবস্থান, সেই সমন্ধে একটি ধারণা তৈরী হবে। ব্রেইনস্টেমের এনাটমি অত্যান্ত কুটিল (ইন্ট্রিকেট)। এখানে ক্ষতের অবস্থান (সাইট অফ লেশান) নির্ণয় করাটা বেশ কঠিন।
ব্রেইনস্টেমের লেশানগুলো কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গ নিয়ে প্রকাশ পায়। উপসর্গগুলোর কারণ সাধারণতঃ ক্রেনিয়াল নার্ভ, সেরেবেলার বা আপার মটর নিউরনের ডিসফাংশান বা অকার্যকারিতা। মূলতঃ ভাস্কুলার ডিজিজ বা রক্তনালীর রোগের কারণে এই লেশানগুলো হয়ে থাকে।
ব্রেইনস্টেমের এনাটমি অত্যান্ত সুবিন্যস্ত এবং নিখুঁত। যেকারণে, যত্ন সহকারে হিস্ট্রি নিলে এবং একজামিনেশান করলে, ঠিক কোন ট্র্যাক্ট বা নিউক্লিয়াইটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, চিহ্নিত করা সম্ভব। সাধারণতঃ, কোন একটি উপসর্গের বিপরীতে অল্প কয়েকটি লেশানের কথা ভাবলেই চলে।
যেমন ধরা যাক, একজন রোগীর হঠাৎ করেই এমন কিছু উপসর্গ দেখা দিল, যেগুলো আপার মটর নিউরন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াকে নির্দেশ করে। রোগীর ডানদিকের মুখ, হাত, পা আক্রান্ত। সাথে থার্ড নার্ভ পাল্সিও রয়েছে। এক্ষেত্রে তার মস্তিষ্কের লেশানটি রয়েছে ব্রেইনস্টেমের, লেফট সেরেব্রাল পিডাংকেলে। এখানে প্যাথলজি সম্ভবতঃ একটি ডিস্ক্রিট স্ট্রোক। কারণ, উপসর্গগুলো আকস্মিকই শুরু হয়েছে। লক্ষণ ও উপসর্গের এই সমন্বয়টি ওয়েবার্স সিনড্রোম নামে পরিচিত। ব্রেইনস্টেম সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি উপসর্গের পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যায়। ওয়েবার্স সিনড্রোম তার মধ্যে একটি।
নিউরোলজিকাল ইমেজিং : নিউরোলজির বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষা
অভিজ্ঞ ক্লিনিশিয়ানগণ সাধারণতঃ শুধু রোগীর হিস্ট্রি থেকেই অধিকাংশ নিউরোলজিকাল ডায়াগনোসিস করতে পারেন। একজামিনেশান এবং ইনভেস্টিগেশান এখানে তেমন অবদান রাখতে পারে না। ইদানীং ইনভেস্টিগেশান অনেক সহজ সুলভ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে প্রতিনিয়তই নতুন ও আরও জটিল ধরণের ইনভেস্টিগেশান আসছে। যে কারণে, নিউরোলজিকাল উপসর্গের চিকিৎসার ক্ষেত্রে, “প্রথমে স্ক্যান করি, পরে চিন্তা করা যাবে” এরকম একটি প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তবে এটি ভাল পদ্ধতি নয়। কারণ অনেক সময়ই ফলস পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া যায়। অনেক রোগের ক্ষেত্রেই পরীক্ষায় তেমন কিছু ধরা পড়ে না। তাছাড়াও অযথা পরীক্ষা করতে দিলে সেটি রোগীদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তার অনর্থক অর্থ ব্যায় হয়। মানসিকভাবে রোগী ও আত্নীয় পরিজন চাপের মধ্যে থাকেন। যেকারণে, আরও চিন্তা ভাবনা করে কাজ করতে হবে।
নিউরোলজিকাল ইনভেস্টিগেশানের মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন দেহকাঠামোর অবস্থা (ইমেজিং) এবং তার কাজ (নিউরোফিজিওলজি)কে মূল্যায়ন করা। নিউরোফিজিওলজিকাল পরীক্ষা এখন এতই জটিল রূপ নিয়েছে যে, কিছু দেশে এই বিষয়টির ওপর আলাদা পড়াশোনা প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরী করা হয়। নিউরোফিজিওলজিকাল পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত এই বিষযগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইলেকট্রেএনকেফালোগ্রাফি, ইভোক্ড পটোনশিয়াল, নার্ভ কন্ডাকশান স্টাডিজ, এবং ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি।
নিউরোইমেজিং
আগের দিনে, নিউরোলজিকাল ইমেজিং-এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের বিভিন্ন কাঠামোর অবস্থা সমন্ধে কিছু সাধারণ তথ্য় ব্যাতীত আর তেমন কিছু জানা যেত না। কিন্তু বর্তমানে নিউরোইমেজিঙের প্রযুক্তিতে আরও উন্নতি হয়েছে।
ইমেজিং মোডালিটি (বা ছবি তৈরী করার বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি) যে বিভিন্ন উপায়গুলোর ব্যাবহার করে এখন -
- এক্সরে ( প্লেইন এক্সরে, কম্পিউটেড টমোগ্রাফি, সিটি এনজিওগ্রাফি, মায়লোগ্রাফি, এনজিওগ্রাফি
- ম্যাগনেটিক রিসোনেন্স (ম্যাগনেটিক রিসোনেন্স ইমেজিং, ম্যাগনেটিক রিসোনেন্স এনজিওগ্রাফি)
- আলট্রাসাউন্ড (রক্তনালীকাগুলোর ডপলার ইমেজিং_
- বিভিন্ন নিউক্লিয়ার মেডিসিন টেকনিক (সিঙ্গেল ফটোন এমিশান কম্পিউটেড টমোগ্রাফি)
এম-আর-আই সংকেতকে বিশ্লেষণের বিভিন্ন প্রকার ধারাক্রম রয়েছে। এগুলো বিভিন্ন টিস্যুর ও প্যাথলজির বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের যোগান দিতে পারে।
বিশেষায়িত বা স্পেশালিস্ট ম্যাগনেটিক রিসোনেন্স টেকনিক, যেমন ফাংশানাল এমআরআই (এফএমআরআই), এমআর স্পেকট্রোস্কোপি বা ডিফিউশান টেনসার ইমেজিং (ডিটিআই) ব্যাবহার করে মস্তিষ্কের বিপাক এবং রাসায়নিক বস্তুসমষ্টিকে (কেমিকাল কম্পোজিশান) সমন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। এর ব্যবহার হতে পারে বহুবিধ। বিভিন্ন কর্টিকাল ফাংশানের একটি ম্যাপ তৈরী করা সম্ভব স্পেকট্রোস্কোপির তথ্য থেকে। সেই ম্যাপটি ব্যবহার করে লেশানেকটোমি (ক্ষতস্থান অপসারণ) এবং এপিলেপ্সি সার্জারির পরিকল্পনা করা যেতে পারে। একইরকম ভাবে, এম-আর স্পেকট্রোস্কোপি বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট অংশগুলোর রাসায়নিক বস্তুসমষ্টি সমন্ধে একটি আউটলাইন প্রদান করতে পারে। সেখান থেকে ধারণা পাওয়া সম্ভব যে, এই লেশানটি ইশকেমিক, নিওপ্লাস্টিক নাকি ইনফ্লামেটরি।
কিছু ডিজেনারেটিভ নিউরোলজিকাল কন্ডিশানে মস্তিষ্কের কাঠামোগুলোতে দৃশ্যমান কোন অস্বাভাবিকতা থাকে না। কিন্তু মস্তিষ্কের ফাংশান বা স্বাভাবিক কাজ বিঘ্নিত হয়। এরকম পরিস্থিতিতে মেটাবোলিক এবং নিউরোকেমিকাল এসেসমেন্ট বা মূল্যায়ন খুব কাজে আসতে পারে।
ডিমেনশিয়া এবং এপিলেপ্সির ক্ষেত্রে পিইটি স্ক্যান গ্লুকোজ মেটাবলিজম দেখাতে পারে।
এস পি ই সি টি স্ক্যানিঙের মাধ্যমে বিভিন্ন রেডিওএকটিভ ট্রেসার (যাদের লিপিডে দ্রবণীয়তায় গুণ রয়েছে) ব্যবহার করে সেরেব্রাল ব্লাড ফ্লো (বা মস্তিষ্কে প্রতি মিনিটে প্রতি একশ গ্রাম টিস্যুর মধ্য দিয়ে যে পরিমাণ রক্ত প্রবাহিত হয়)কে মার্ক বা করা যায় বা রক্ত প্রবাহের গতি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা যায়। যেই সময় ইনেজেকশানটি দেয়া হবে ঐ সময়কার রক্তপ্রবাহ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। সিজার বা খিচুনীর কারণ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এই ইনভেস্টিগেশানটি কাজে আসে।
পার্কনসনিজম সন্দেহ করা হচ্ছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে নাইগ্রোস্ট্রায়াটাল পাথওয়ের অবস্থা সমন্ধে জানার চেষ্টা করা হয়। পার্কিনসনিজমের ক্ষেত্রে নাইগ্রোস্ট্রায়াটাল পাথওয়েটি দুর্বল হয়ে পড়ে। এই ক্ষেত্রে ডোপামিনার্জিক পাথওয়ে ট্রেসার ব্যবহার করা হয়।
মাথা এবং অক্ষিগোলক ( হেড এন্ড অরবিট)
নিউরোলজিকাল রোগব্যাধি নির্নয়ের ক্ষেত্রে সাধারণ স্কাল এক্স-রে (মাথার খুলির এক্সরে)-র ব্যবহার এখন বেশ সীমিত। ইন্ট্রাক্রেনিয়াল ইমেজিং বা করোটির ভেতরকার ছবি পাওয়ার জন্য -সিটি এবং এম-আর-আই ব্যবহার করা হয়।
মাথার হাড় এবং ক্য়ালসিফিকেশান দেখানোর জন্য সিটি ভালো কাজ করে। ব্রেইন এবং ভেন্ট্রিকেল বা মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠের মধ্যকার কোন অস্বাভাবিকতাকেও নির্ণয় করার যায় সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে। যেমন : এট্রফি (টিস্যুক্ষয়), টিউমার, সিস্ট, এবসেস, ভাস্কুলার লেশান এবং হাইড্রোসিফেলাস। ডায়াগনোস্টিক ফলাফলটি আরও নির্ভুল করার জন্য ইন্ট্রাভেনাস কন্ট্রাস্ট এবং থিনার স্লাইসিং ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে মেনিনজেসের, ক্রেনিয়াল নার্ভের লেশান, বা সূক্ষ্ণ প্যারেনকাইমাল পরিবর্তন নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সিটি সবচেয়ে ভালো উপায় নয়।
এমআরআইয়ের রিসোলুশান ( ছবির স্পষ্টত)র ওপর হাড় কোন প্রভাব ফেলে না। যেকারণে এটি পোস্টেরিয়ার ফোসার বিভিন্ন রোগ ব্যাধি নির্ণয়ে অনেক বেশী উপকারী। বিভিন্ন কর্টিকাল এবং হোয়াইট ম্যাটারের পরিবর্তনের প্রতি এমআরআই সংবেদী। যেকারণে প্রদাহমূলক বিভিন্ন রোগ (ইনফ্লামেটরী কন্ডিশান) যেমন মাল্টিপাল স্ক্লেরোসিস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এমআরআই ব্যবহার করা হয়। এপিলেপ্সির ইনভেস্টিগেশানেও ব্য়বহার করা হয় এমআরআই। কিছু এমআরআইয়ের ক্ষেত্রে পরীক্ষক নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্লুইড বা ফ্যাট থেকে আসা সিগনালকে দমিয়ে দিতে পারেন। ফলে, অনেক সূক্ষ্ণ প্যাথলজির প্রতি সেন্সিটিভিটি বাড়ানো যেতে পারে।
সার্ভিকাল, থোরাসিক এবং লাম্বার স্পাইন
হাড় প্রধান কাঠামোগুলোর ছবি পাওয়ার জন্য এক্সরে বেশ ভালো। যেমন, ভার্টেব্রার কোন ক্ষতির হলে সেটি এই ইমেজিঙের মাধ্যমে দেখা যেতে পারে। কিন্তু হাড়-নয় এমন কাঠামোগুলো যেমন ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্ক, স্পাইনাল কর্ড, এবং নার্ভ রুট- এগুলোর বিষয়ে তেমন তথ্য পাওয়া যাবে না।
ডায়নামিক ইমেজিঙের ক্ষেত্রে এটি কাজে আসতে পারে। যেমন স্পাইন বা মেরুদন্ডের ফ্লেকশান, এক্সটেনশান বিশ্লেষণ করে ‘ইনস্ট্যাবিলিটি’ বা মেরুদন্ডের অস্থিতিশীলতা সমন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। স্পাইনাল ইনভেস্টিগেশানের চেহারা বদলে দিয়েছে এমআরআই। কারণ এম-আর-আইয়ের মাধ্যমে, ভার্টেব্রা এবং ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্ক সমন্ধে তো জানা যায়ই, সেই সাথে স্পাইনাল কর্ড এবং নার্ভ রুটের ওপর তারা কি প্রভাব ফেলছে, সে সমন্ধেও জানা যায়।
মায়েলোগ্রাফি একটি ইভেসিভ টেকনিক। সাধারণতঃ সিটির সাহায্যে প্রক্রিয়াটি করা হয়ে থাকে। লাম্বার থেকা (স্পাইনাল কর্ডকে আবৃতকারী ডুরা ম্যাটারের আবরণ)-য় কন্ট্রাস্ট ইনজেক্ট করা হয়। বিভিন্ন নার্ভ রুট এবং স্পাইনাল কর্ডের আউটলাইন তৈরী করলে, স্পাইনাল কর্ডের কাঠামোগত কোন অস্বাভাবিকতা সমন্ধে কিছু আনুপুঙ্খিক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এম-আর-আই এখন যেমন নির্ভুল আর সহজলভ্য , তাতে আর এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করার তেমন প্রয়োজন হয় না। যেসব পরিস্থিতিতে, এম-আর-আই ব্যবহার নিষেধ, বা খোদ ব্যবস্থাটিই নেই, অথবা রোগীর ক্লস্ট্রোফোবিয়ার দরুন তাকে এম-আর-আই মেশিনে ওঠানো যাবে না, সেসব ক্ষেত্রে এখনও মায়েলোগ্রাফি ব্যবহার হয়।
বিভিন্ন নিউরোফিজিওলজিকাল টেস্টিং :
ইলেকট্রোএনকেফালোগ্রাফি
সেরেব্রাল কর্টেক্সের বৈদ্যুতিক ক্রিয়া ঘটে থাকে। স্কালপে (মাথার ত্বক) ইলেকট্রোড বসিয়ে, এই ইলেকট্রিকাল একটিভিটিকে নির্ণয় করা সম্ভব। এটাই ইলেকট্রোএনকেফালোগ্রাম বা ইইজির মূলনীতি। ইলেকট্রোড বসিয়ে যে তরঙ্গ বা ওয়েভফর্মগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর এমপ্লিচুড (রেস্ট এবং ক্রেস্টের দূরত্ব) এবং ফ্রিকোয়েন্সি রেকর্ড করা হয়।
চোখ বন্ধ অবস্থায়, সাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড একটিভি ৮-১৩ হার্টজ (যেটি আলফা রিদাম নামে পরিচিত)। সাধারণতঃ ‘অক্সিপিটালি’ সবচেয়ে প্রকট ভাবে পাওয়া যায় এই ওয়েভ। চোখ খুললেই আলফা রিদাম কমে আসে।
এছাড়া ভিন্ন পরিস্থিতে, মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন অংশে যে ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলো দেখা যায়, সেগুলো হচ্ছে
- বেটা ( ১৩ পার সেকেন্ডের চেয়ে দ্রুত)
- থেটা ( প্রতি সেকেন্ডে ৪-৮টি ওয়েভ)
- ডেল্টা ( প্রতি সেকেন্ডে ৪টি)
বয়স এবং ব্যাক্তি কতটুক সজাগ ছিলেন (এলার্টনেস) -এই দুটি বিষয়ে ওপর নির্ভর করে ইইজি’র বিন্যাস পাল্টাতে পারে। যাদের বয়স খুব কম তাদের ক্ষেত্রে লোয়ার ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যায়। একই রকম ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যায় ঘুমন্ত ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রেও।
সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি বেশ অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে। যার ফলে আরও দীর্ঘ, পরিচ্ছন্ন ইইজি রেকর্ডিং তৈরী করা সম্ভব। কয়েকটি প্রকারে এই রেকর্ডিংকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এবং কোন একটি ক্লিনিকাল ইভেন্টের ক্ষেত্রে, ইইজি’র পাশাপাশি ঘটনাটির ভিডিও রেকর্ডও করে রাখা সম্ভব।
এছাড়াও, বর্তমান সময়ে ইন্ট্রাক্রেনিয়াল রেকর্ডিঙের প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে। সার্জিকাল উপায়ে মাথার খুলির ভেতরে, বিভিন্ন ক্ষতস্থানের ওপর এবং আশেপাশে, ইলেকট্রোড স্থাপন করে আরও সূক্ষ (সেনসিটিভ) মনিটরিং করা সম্ভব। এপিলেপ্সি সার্জারির ক্ষেত্রে, ইন্ট্রাক্রেনিয়াল রেকর্ডিং, সার্জারির প্রক্রিয়াটিকে আরও কার্যকর এবং নিরাপদ করে তোলে।
বেশ অনেকগুলি ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক ইইজি পাওয়া যেতে পারে। যেমন, বেনজোডায়াজেপাইন দিয়ে রোগীকে তন্দ্রাহত করলে, ফাস্ট ফ্রিকোয়েন্সি ( বেটা )-গুলো বেড়ে যায়। একটি কাঠামোগত ক্ষত, যেমন একটি টিউমার বা একটি ইনফার্কটের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ফোকাল স্লোয়িং দেখা যায়।
এখন ইমেজিং করা সহজ। ছবির মানও ভালো পাওয়া যায়। যেকারণে ইইজির আবশ্যকতা তেমন নেই আর। শুধুমাত্র এপিলেপ্সির বিশেষ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে।
যেসব রোগ সময়ের সাথে বাড়তে থাকে, (প্রগ্রেসিভ এন্ড কন্টিনিউয়াস) যেমন, রিডিউসড কনশাসনেস (সবসময় অর্ধচেতন অবস্থায় থাকা) তাদের ক্ষেত্রে এখনও ইইজি কাজে আসে। এছাড়া এনকেফালাইটিস নির্ণয়ের জন্যও ইইজির ব্যাবহার হয়। কিছু নির্দিষ্ট ডিমেনশিয়া যেমন, ক্রুজফেল্ট জ্যাকব ডিজিজে ইইজি’র ব্যবহার রয়েছে।
ঘুমের সময় সেরেব্রাল একটিভিটিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা দেয়। যেকারণে ঘুমের সমস্যা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইইজি বেশ কাজে আসতে পারে।
পারঅক্সিসমাল ডিজঅর্ডার বা আকস্মিক তীব্র উপসর্গ সহকারে প্রকাশ পায় যে সমস্যা, যেমন এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগের ক্ষেত্রে, ইইজি সবচেয়ে ভালো আসে যদি ঘটনার সময়ই , অর্থাৎ উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছে যখন, তখনই ইইজি করা যায়। সাধারণ বা রুটিন ইইজি’র সময় ৫০শতাংশের বেশী রোগীর ক্ষেত্রে ইইজি স্বাভাবিক পাওয়া যায়। আবার বিপরীতক্রমে, এপিলেপ্টিফর্ম ফিচার্স থাকলেই রোগ সমন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায় না। সাধারণ জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ, ইইজি’তে, এপিলেপটিফর্ম ফিচার্স দেখাতে পারে। ফলে, এপিলেপ্সির নির্ণয়ের একটি অবধারিত উপায় হিসেবে ইইজি’কে ভাবা যাচ্ছে না। বিশেষ করে পরিবারে মৃগী রোগের ইতিহাস আছে, এমন কমবয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে। এই আলোচনা থেকে আরও বলা যায় যে যেসব ক্ষেত্রে এপিলেপ্সির সম্ভাবনা খুবই কম, সেখানে ইলেকট্রোএনকেফালোগ্রাম ব্যাবহারের তেমন অর্থ নেই।
এই কারণে, এপিলেপসির ক্ষেত্রে, শ্রেণীকরণ এবং রোগের ভবিষ্যত সমন্ধে ধারণার জন্যই (ক্লাসিফিকেশান এন্ড প্রগনস্টিকেশান) ইইজি ব্যবহার করা হয়। তবে সার্জারির ক্ষেত্রে এপিলেপ্টিফর্ম ডিসচার্জের উৎসটি কোথায় (লোকালাইজ দি সিট অফ এপিলেপ্টিফর্ম ডিসচার্জ) তা চিহ্নিত করার জন্য ই-ই-জি ব্যবহার করা হয়।
একটি সিজার বা খিচুনীর সময়, ব্যাকগ্রাউন্ড একটিভিতে উচ্চ-ভোল্টেজের ডিসটার্বেন্স বা ডিসচার্জ পাওয়া যায়। এগুলো সমস্ত পটভূমি জুড়েই পাওয়া যেতে পারে। যেমন ৩ হার্জের ‘স্পাইক এন্ড ওয়েভ’ পাওয়া যায় চাইল্ডহুড এবসেন্স এপিলেপ্সিতে। অথবা কোন একটি নির্দিষ্টি স্থান থেকে ডিসচার্জের ঘটনাটি ঘটতে পারে (ফোকাল) যেমনটা, লোকালাইজেশান রিলেটেড এপিলেপ্সির ক্ষেত্রে দেখা যায়।
বিভিন্ন কৌশল যেমন, হাইপারভেন্টিলেশান বা ফোটিক স্টিমুলেশান ব্যবহার করে, এপিলেপ্টিফর্ম পরিবর্তনগুলো আরও স্পষ্ট করে তোলা যেতে পারে ইইজি তে। বিশেষ করে জেনারালাইজড এপিলেপ্সি সিনড্রোমে, এমনটা ব্যবহার করা হয়। অনেকেই মনে করেন, ক্লিনিকাল ডায়গনসিস বা রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের ‘স্পাইক” এবং “শার্প ওয়েভ” নির্ণয় করা সম্ভব। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে, এধরণের বিচ্যুতিগুলোর পেছনে কোন সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে না। যেকারণে, এগুলো থেকে ডায়াগনসিসের কোন সুযোগ নেই। বরঞ্চ, ক্লিনিশিয়ান যদি অসতর্ক থাকেন তো, অন্য কিছুর উপসর্গকে এপিলেপ্সিতে আরোপ করতে পারেন।
নার্ভ কন্ডাকশান স্টাডিজ
একটি নার্ভকে বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা (ইলেকট্রিকাল স্টিমুলেশান) দিলে, একটি ইমপাল্সের সৃষ্টি হয়। এফারেন্ট ও ইফারেন্ট ( অর্থাৎ মস্তিষ্ক ও পেশী দু’দিকেই) দুই প্রকারেই এক্সনের মধ্যে দিয়ে পরিবাহিত হয় এই ইমপাল্স। এই বিষয়টিরই ব্যাবহার করে নার্ভ কন্ডাকশান স্টাডিজ।
ইমপাল্স যখন পেরিফেরাল নার্ভ এবং (মটর নার্ভদের ক্ষেত্রে) মাসেল বেলীতে (পেশীতে) পরিবাহিত হয়, তখন একশান পটেনশিয়ালগুলোকে রেকর্ড করা হয়। এখন ডিজিটাল রেকর্ডিং সম্ভব। যেকারণে এই সূক্ষ পটেনশিয়াল বা বৈদ্যুতিক সংকেত আরও সুচারুভাবে নির্ণয় করা যায় এবং অনুলিপি তৈরী করা যায় (সেনসিটিভিটি এন্ড রিপ্রোডিউসিবিলিটি)।
একটি আগে থেকে জানা দূরত্ব অতিক্রম করে যেতে পটেনশিয়ালটির কিরকম সময় লাগল, সেটি হিসেব করে, নার্ভ কনডাকশান ভেলোসিটি ( নার্ভের সংকেত কি গতিতে পরিবাহিত হচ্ছে) নির্ণয় করা সম্ভব। সুস্থ নার্ভ, সাধারণ রুম টেম্পারেচারে, ৪০-৫০ মিটার পার সেকেন্ড গতিতে সংকেত পরিবহন করতে পারে।
রেকর্ডকৃত পটেনশিয়ালের পরিমাণ যদি প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়, তাহলে প্রমাণিত হবে যে কার্যক্ষম অ্যাক্সনের সার্বিক সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, কনডাকশান ভেলোসিটি যদি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে যায়, তাহলে, ধরে নিতে হবে পেরিফেরাল নার্ভের ডিমায়েলিনেশান হয়েছে।
এন-সি-এস’ এর এধরণের পরিবর্তন ছড়ানো ছিটানো হতে পারে। যেমন, হেরেডিটারি ডিমায়েলিনেটিং পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি। ফোকাল বা নির্দিষ্ট স্থানভিত্তিক হতে পারে; যেমন - প্রেশার পালসিয। মাল্টিফোকাল বা নির্দিষ্ট কয়েক জায়গায়; যেমন - গুলেন বারি সিনড্রোম, মনোনিউরাইটিস মাল্টিপ্লেক্স। এই সব প্রাপ্ত তথ্য থেকে পেরিফেরাল মার্ভ ডিসফাংশানের জন্য দায়ী রোগটিকে আরও নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যেতে পারে।
মটর নার্ভকে উদ্দীপ্ত করে পেশী থেকে কম্পাউন্ড মাসেল একশান পটেনশিয়ান (সি-এম-এ-পি’এস) রেকর্ড করা যায়। সি-এম-এ-পি’স, সেন্সরি নার্ভ পটেনশিয়াল থেকে ৫০০গুণ বড়। কম্পাউন্স মাসেল একশান পটেনশিয়াল, ১-২০ মিলিভোল্ট হতে পারে।
মটর নার্ভে স্টিমুলেটকৃত ইমপাল্সের একটি অংশ ‘রিফ্লেক্ট’ করবে বা ফিরে আসবে। এন্টেরিয়ার হর্ণ সেলের বডি থেকে এই ফিরে আসার ঘটনাটি ঘটে। এন্টেরিয়ার হর্ণ সেল থেকে সংকেত ফিরে আসার ফলে একটি ‘এফ’ ওয়েভ গঠিত হয়। এই ওয়েভকে পাঠ করে নার্ভ রুটের অবস্থা সমন্ধে কিছু ধারণা পাওয়া সম্ভব।
৩-১৫ পার সেকেন্ড, রিপিটেটিভ নার্ভ স্টিমুলেশান (আর-এন-এস) করলে, সুস্থ পেশীতে নিরবচ্ছিন্ন সি-এম-এ-পি পাওয়া যায়। তবে, যেমন ধরুন, মায়েসথেনিয়া গ্রেভিসের ক্ষেত্রে, যেখানে এসেটাইলকোলাইন রিসেপ্টরের আংশিক প্রতিবন্ধকতা থাকে, সেখানে সি-এম-এ-পি’র এমপ্লিচুডে একটি পতন (ডায়াগনস্টিক ফল বা ডিক্রিমেন্ট) লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে,’ ল্যামবার্ট ইটন মায়েস্থেনিক সিনড্রোম’, হাই ফ্রিকোয়েন্সির আর-এন-এসের সাথে সি-এম-এ-পি’কেও বাড়তে দেখা যায়।
ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি
সাধারণতঃ নার্ভ কন্ডাকশান স্টাডিজের পাশাপাশি ইলেকট্রোমায়েগ্রাফি করা হয়ে থাকে। রেস্ট এবং কন্ট্রাকশানের সময় মাসেলের বৈদ্যুতিক একশান পটেনশিয়ালের, নিডেল রেকর্ডিং করা হয় ইলেকট্রোমায়োগ্রাফিতে।
রেস্টের সময়, বৈদ্যুতিক ভাবে মাসেল নিঃসাড় থাকে (ইলেকট্রিকালি সাইলেন্ট)। কিন্তু নার্ভ সাপ্লাই নষ্ট হলে, মাসেল মেমব্রেন অস্থিতিশীল হয়ে যায়। এই অস্থিতিশীলতা প্রকাশ পায় ফিব্রিলেশান, পজিটিভ শার্প ওয়েভ (“স্পনটেনিয়াস একটিভি”), অথবা ফ্যাসিকুলেশান রূপে।
মাসেল কন্ট্রাকশানের সময়, মটর ইউনিটের একশান পটেনশিয়াল রেকর্ড করা হয়। অ্যাক্সনাল লস বা অ্যাক্সন ধ্বংস হয়ে গেলে মটর ইউনিট কমে যাবে। অবশিষ্ট ইউনিট থেকে যে নতুন স্নায়ুতন্তু আসবে, সেটির ফলে, ইএমজি’তে প্রতিটি ইউনিটের আকার বেড়ে যাবে।
অন্যদিকে মায়োপ্যাথির ক্ষেত্রে মাসেল ফাইবারগুলে একে অন্যের থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। ফলে, ইএমজিতে বিপুল সংখ্যায় ছোট ছোট মটর ইউনিট পাওয়া যায়। ইএমজিতে অন্যান্য অস্বাভাবিক ক্রিয়া যেমন, ‘মায়োটনিক ডিসচার্জ’,অস্বাভাবিক আয়ন চ্যানেল কনডাকশানকে নির্দেশ করে। মায়োটোনিক ডিসট্রফি অথবা মায়োটোনিয়া কনজেনিটার ক্ষেত্রে এরকম অস্বাভাবিক আয়ন চ্যানেল কন্ডাকশান থাকে।
নিউরোমাস্কুলার জাংশানের অবস্থা নির্ণয়ের জন্য, “স্পেশালাইজড সিংগেল ফাইবার ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি”(এস এফ ই এম জি) ব্যবহার করা যায়। রিসেপ্টরে, এসেটাইলকোলাইনের ক্রিয়াকে দমন করার ক্ষেত্রে এন্টিবডির প্রভাবকে শনাক্ত করা যায় “জিটার” এবং “ব্লকিং” পরিমাপ করার মাধ্যমে।
ইভোকড পটেনশিয়াল
বিভিন্ন ভিজুয়াল, অডিটরি এবং ইলেকট্রিকাল স্টিমুলেশানের প্রতি কর্টিকাল রেসপন্সকে ইইজিতে পরিমাপ করা যায় একটি “ইভোকড পটেনশিয়াল” বা ইপি হিসেবে। ধরুন, চোখে কোন একটি স্টিমুলাস দেয়া হল। ১০-১০০০ স্টিমুলাসের পুনরাবৃত্তি করলে ইইজি-তে অতি ক্ষুদ্র একটি রেসপন্স পাওয়া যেতে পারে।
ল্যাটেন্সি (কতক্ষণ সময় লাগল বা সময়ের পার্থক্য) এবং এমপ্লিচুড (ওয়েভের উচ্চতা) হিসেব করে, প্রাসঙ্গিক পাথওয়ের অক্ষুন্নতা সমন্ধে তথ্য পাওয়া যায়।
ইদানীং, এম-আর-আই, সিএনএসের বিভিন্ন পাথওয়েগুলো সমন্ধে আরও বেশী তথ্য দিতে পারে। ফলে ইভোকড পটেনশিয়ালের ওপর তেমন নির্ভর করতে হয় না। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে, ভিজুয়াল ইভোকড পটেনশিয়াল সাধারণতঃ ব্যবহার করা হয়- সিএনএস ডিমায়েলিনেশান এবং স্মল-ভেসেল হোয়াইট ম্যাটার চেঞ্জের মাঝে পার্থক্য করার জন্য।
চৌম্বকীয় স্টিমুলেশান
ইলেকট্রোম্যাগনেটিক উপায়েও অ্যাকশান পটেনিশাল উৎসারিত করা যায় কর্টেক্স বা স্পাইনাল কর্ডে। এই সংকেতকে পরিমাপ করে সেন্ট্রাল কনডাকশান টাইম হিসেব করা যায়। সাধারণতঃ লোকালি, বিশেষায়িত কয়েল ব্যবহার করে এই কাজটি করা হয়। তবে এখানে আগের মতই বলতে হচ্ছে, এম-আর-আই থাকায় এখন আর রোগ নির্ণয়ে এর তেমন ব্যাবহার নেই। গবেষনা ক্ষেত্রে কিছু রয়েছে।
রুটিন ব্লাড টেস্ট (সাধারণ বা নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা)
নার্ভাস সিস্টেমকে বিভিন্ন ধরণের সিস্টেমিক কন্ডিশান (যেসব রোগ গোটা শরীরব্যাবস্থার ওপর কুপ্রভাব ফেলে) আক্রান্ত করতে পারে। সাধারণ রক্ত পরীক্ষা (সিম্পল ব্লাড টেস্ট)র মাধ্যমে এই রোগগুলোকে চিহ্নিত করা যায়।
পুষ্টির অভাব, মেটাবলিক ডিসটার্বেনস, ইনফ্লামেটরি কন্ডিশান, বা ইনফেকশান, সবটাই নিউরোলজিকাল উপসর্গের পাশাপাশি উপস্থিত থাকতে পারে। আবার নিউরোলজিকাল উপসর্গ ও এই ঘটনাগুলোর ভেতরে একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্কও থাকতে পারে। সাধারণ রক্ত পরীক্ষাগুলো ( ফুল ব্লাড কাউন্ট, এরিথ্রোসাইট সেডিমেন্টেশান রেট, সি-রিয়েকটিভ প্রোটিন, বায়োকেমিকাল স্ক্রিনিং) কিছু ধারণা দিতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে, দেখা গেছে, এইচ-আই-ভি ভাইরাস জনিত নিউরোলজিকাল রোগ বাড়তির দিকে। সুতরাং, এইচ-আই-ভি পরীক্ষার ক্ষেত্রে ক্লিনিশিয়ানের দ্বিধা করা উচিত নয়।
ইমিউনোলজিক টেস্ট ( শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন পরীক্ষা)
সাম্প্রতিক সময়ে, ইমিউন মিডিয়েটেড বিভিন্ন রোগব্যাধির আবির্ভাব ঘটেছে ক্লিনিকাল নিউরোলজিতে। এখানে এন্টিবডিদের টার্গেট হতে পারে মাসেল থেকে শুরু করে নিউরোমাস্কুলার জাংশান ডিসটার্বেন্স (যার ফলাফল দুর্বলতা এবং মাসেলে ব্যাথা) এবং বিভিন্ন নির্দিষ্ট নিউরোনাল আয়ন চ্যানেল ( যার ফলাফল, কগনিটিভ ডিক্লাইন (স্মৃতি ও মানসিক বিভিন্ন দক্ষতা কমে যাওয়া), এপিলেপ্সি, মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন)।
এর জন্য দায়ী বহু অ্যান্টিবডি আবিষ্কৃত হয়েছে এই একবিংশ শতকে। অনেক ধরণের নিউরোলজিকাল উপসর্গের সাথেই সম্ভবতঃ ইমিউন সিস্টেমের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যাবে ভবিষ্য়তে।
জেনেটিক টেস্টিং - জিনের সংকেত পাঠ করে রোগ নির্ণয়
চিকিৎসা ক্ষেত্রে জেনেটিক টেস্টিঙের ব্যবহার একটি নতুন ক্ষেত্র। প্রতিনিয়তই এখানে নতুন আবিষ্কার হচ্ছে। নিউরোলজির এখানে বহু সম্ভাবনা রয়েছে যেগুলো নিয়ে কেউ এখনও কাজ করছে না। বিশেষ করে জিনোম ওয়াইড এসোসিয়েশান স্টাডি এবং হোল জিনোম সিকোয়েন্সিং আসার পরে এটি আরও বেশী সত্য।
যেমন, ট্রাইনিউক্লিয়োটাইডের পুনরাবৃত্তি বেশীবার হলে , হান্টিংটন্স ডিজিজ, মায়োটনিক ডিস্ট্রোফি, এবং কয়েক ধরণের স্পাইনোসেরেবেলার এটাক্সিয়া হয়।
এরকম আরও কিছু (রিলেভেন্ট) রোগ ব্যাধিকে নির্ণয়ের জন্য মাইটোকোন্ড্রিয়ার ডিএনএর-ও সিকোয়েন্সিং করা যেতে পারে।
লাম্বার পাংচার
লাম্বার পাংচার কৌশলের মাধ্যমে দুটি কাজ করা হয়-
১। সিএসএফের নমুনা সংগ্রহ করা হয়
২। পরোক্ষভাবে ইন্ট্রাক্রেনিয়াল প্রেশারও মাপা হয়
লাম্বার পাংচারের জন্য প্রথমে লোকালি একটি এনেস্থেটিক ইনজেকশান দেয়া হয়।
এরপর লাম্বার স্পাইনাস প্রসেসের, সাধারণতঃ লাম্বার থ্রি এবং ফোরের মাঝামাঝি, একটি সুঁই প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। সূঁচটি, ডুরা ভেদ করে স্পাইনাল ক্যানালে চলে যায়।
রোগী যদি একদিকে কাত হয়ে শুয়ে থাকে, তাহলে ইন্ট্রাক্রেনিয়াল প্রেশার অনুমান করা যেতে পারে। এবং পরীক্ষা করার জন্য সিএসএফ-ও সংগ্রহ করা যাবে।
ইডিওপ্যাথিক ক্রেনিয়াল হাইপারটেনশান নির্ণয় এবং পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে সিএসএফের প্রেশার নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে, লাম্বার পাংচার নিজেই একটা চিকিৎসা (থেরাপিউটিক)।
সিএসএফ সাধারণতঃ স্বচ্ছ এবং রঙহীন। সিএসএফ সংগ্রহের পর দুই ভাবে পরীক্ষা করা হয় -
১। খালি চোখে নমুনাটির রঙে পর্যবেক্ষণ
২। সেন্ট্রিফিউগেশানের পর যে সুপারনেটেন্ট পাওয়া যায় সেটির রঙ নির্ণয় (এই রঙ হলুদ বা জ্যানথোক্রোমিক হতে পারে। সাব এরাকনয়েড হেমোরেজের কয়েক ঘন্টা পরে এমন রঙ পাওয়া যায়।)
সিএসএফে সুনির্দিষ্ট কোন লাইট ওয়েভ (আলোকতরঙ্গ)-গুলো শোষিত হল, সেগুলি পরিমাপ করে হিম মেটাবোলাইটের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। রুটিন এনলাইসিসের ক্ষেত্রে তিনটি কাজ করা হয়
- সেল কাউন্ট
- গ্লুকোজ
- প্রোটিনের কনসানট্রেশান বা মাত্রা
বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ ( মেনিনজাইটিস বা এনকেফালাইটিস), সাব এরাকনেয়ড হেমোরেজ, এবং ইনফ্লামেটরী অবস্থাগুলো (যেমন, মাল্টিপাল স্ক্লেরোসিস, সারকয়ডোসিস, সেরেব্রাল লুপাস)-র পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্য সিএসএফকে বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়ে।
আরও পরিশীলিত বিশ্লেষণ করে এমন কিছু এন্টিবডি নির্ণয় করা সম্ভব যেগুলো শুধুমাত্র সিএনএসেই তৈরী হয়। যেমন, ওলিগোক্লোনাল ব্যান্ডস। জিনেটিক বিশ্লেষণ, যেমন সিএসএফের পলিমারেজ চেইন রিএকশান পরীক্ষা করে হার্পিস সিম্পলেক্স বা টিউবারকুলোসিস নির্ণয় করা যায়। বিভিন্ন ইমিউনোলজিকাল পরীক্ষা (প্যারানিওপ্লাস্টিক এন্টিবডি) এবং সাইটোলজি (ম্যালিগনেন্ট কোষ নির্ণয়ের জন্য)-ও করা যায়।
ক্রেনিয়াল স্পেস দখল করে রাখা কোন ক্ষতের কারণে যদি ইন্ট্রাক্রেনিয়াল প্রেশার বেড়ে গিয়ে থাকে, সেখানে লাম্বার পাংচার করার ক্ষেত্রে একটি তাত্ত্বিক ঝুঁকি রয়ে যায় যায় ইন্ট্রাসেরেব্রাল বিভিন্ন কন্টেন্টগুলো তাদের জায়গা ঢেকে নীচের দিকে নেমে আসবে। এটি যথেষ্ট বিপদজনক প্রক্রিয়া। এর নাম কোনিং। এর ফলে ব্যাক্তি মৃত্য়ুও হতে পারে।
এই কারণে, নীচের বিষয়গুলো উপস্থিত থাকলে লাম্বার পাংচার করতে মানা করা হয় -
ক্লিনিকালি কোন লক্ষণ যদি থাকে ইন্ট্রাক্রেনিয়াল প্রেশার বৃদ্ধির (প্যাপিলোইড়িমা)
কোন ফোকাল নিউরোলজিকাল সাইন যদি থাকে, যেটা দেখে সেরেব্রাল লেশানের কথা মনে হয়
এবং যতক্ষণ না ইমেজিং (সিটি বা এমআরআই) করে একটি স্থান দখলকারী ক্ষত (স্পেস অকুপাইয়িং লেশান) বা হাইড্রোসিফেলাসের সম্ভাবনা নাকচ করা যাচ্ছে না।
যদি লোকাল হেমোরেজ বা রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে (থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া, ডিস-এমিনেটেড ইনট্রাভাস্কুলার কো-এগুলেশান বা এন্টিকোএগুলেন্ট ট্রিটমেন্ট), সেক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধান থাকা উচিত এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
এন্টিপ্লেটলেট ড্রাগস বা লো-ডোজ এস্পিরিন পাচ্ছেন এমন রোগীদের ক্ষেত্রে নিরাপদেই লাম্বার পাংচার করা যেতে পারে। তবে যেসব রোগী সম্পূর্ণ রূপে এন্টিকোএগুলেটেড তাদের ক্ষেত্রে নিরাপদ নয়। কারণ, এপিডিউরাল হেমাটোমার একটি ঝুঁকি থেকে যায়।
প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে লাম্বার পাংচারের পরে একটি পশ্চুরাল হেডেক দেখা দেয়। অর্থাৎ, বসা বা শোয়া থেকে উঠে দাড়ালে মাথা ব্যাথা করতে থাকে। সিএসএফ প্রেশার কমে যাওয়ার কারণে এমনটি হয়ে থাকে। আরও ছোট অথবা অ্যাট্রমাটিক নিডেল ব্যবহার করলে এই মাথাব্যাথার ব্যাপারটা কমানো যেতে পারে।
লাম্বারের পাংচারের অতি বিরল জটিলতাগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষণকালীন রেডিকুলার পেইন (পিঠ থেকে ব্যাথা পায়ে নেমে যাওয়া), এবং পরীক্ষাটির প্রক্রিয়াকালে লাম্বার রিজানের ব্যাথা। যেহেতু পর্যাপ্ত এসেপটিক প্রিকশান নেয়া হয়, তাই মেনিনজাইটিসের মত সেকেন্ডারী ইনফেকশান সাধারণতঃ হয় না।
বায়োপসি
বিভিন্ন নার্ভাস টিস্য়ু (পেরিফেরাল নার্ভ, মাসেল, মেনিনজেস বা ব্রেইনের) বায়োপসি মাঝেমাঝে প্রয়োজন হয় রোগ নির্ণয়ের জন্য।
নার্ভ বায়োপসি, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির পরীক্ষায় সাহায্য করতে পারে।
সাধারণতঃ একটি ডিসটাল সেন্সরি নার্ভ (সুরাল বা রেডিয়াল)কে টার্গেট করা হয়। রোগের নিহিত কারণটি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে হিস্টোলজিকাল পরীক্ষা কাজে আসতে পারে; যেমন ভাস্কুলিটাইডস বা অ্যামাইলয়েডের মত কোন ইনফিলট্রেটিভ ডিজঅর্ডার।
নার্ভ বায়োপসি কোন হালকা ভাবে নেয়ার বিষয়। কারণ, এর সাথে উল্লেখযোগ্য় পরিমাণে মৃত্যুযোগ রয়েছে। যেকারণে, যেসব রুটিন ইনভেস্টিগেশান পরেও রোগের নির্ণয়ে নিঃসন্দেহ হওয়া যায় না, অথবা যেসব ক্ষেত্রে নার্ভ বায়োপসি রোগের ম্যানেজমেন্টে কাজে আসতে পারে, সেখানেই একমাত্র এই পরীক্ষাটি করা হয়।
মাসেল বায়োপসিই সাধারণতঃ বেশী করা হয়ে থাকে। মায়োসাইটিস নাকি মায়োপ্যাথি, সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য করা হয় মাসেল বায়োপসি। হিস্টোলজিকাল পরীক্ষার মাধ্যমে এই কন্ডিশানগুলোর মাঝে পার্থক্য করা যেতে পারে। এবং মাইটোকোন্ড্রিয়াল ডিজিজ এবং স্টোরেজ ডিজিজ সন্দেহ করলে, এনজাইম হিস্টোকেমিস্ট্রি কাজে আসতে পারে। বায়োপসি সাধারণতঃ কোয়াড্রিসেপস মাসেল থেকেই নেয়া হয়। তবে ক্লিনিকালি প্রাসঙ্গিক হলে অন্য মাসেল থেকেও বায়োপসি নেয়া হতে পারে।
ইন্ট্রাসেরেব্রাল লেশান বিষয়ে, ইমেজিঙের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া না গেলে, তখন ব্রেইন বায়োপসি করা হয়। যেমন, ব্যাখ্যতীত ডিজেনারেটিভ বা ক্ষয়ধর্মী রোগ, যথা ডিমেননশিয়ার কোন অস্বাভাবিক কেস বাস যেসব রোগীদের ব্রেইন টিউমার রয়েছে।
অধিকাংশ, বায়োপসি স্টিরিওস্ট্যাটিকালি করা হয়। মাথায় একটি বার-হোল বা ফুটো করার মাধ্যমে। এটি জটিলতার হারকে কমিয়ে দেয়। এতদসত্ত্বেও, রক্তক্ষরণ, ইনফেকশান এবং মৃত্যু হতে পারে। যেকারণে, অন্য সাধারণ রোগ নির্ণয় পদ্ধতিগুলো কাজ না করলে, তখনই শুধু ব্রেইন বায়োপসি করা হয়।
যেসব সিস্টেমিক ডিজঅর্ডার, নিউরোলজিকাল সমস্যা হিসেবে প্রকাশিত হয়, সেগুলোর ডায়গনোসিসে, অন্য অর্গান থেকে বায়োপসি নেয়া যায়। যেমন টনসিলার বায়োপসি (প্রিয়ন ঘটিত রোগ ব্য়াধিঈর ডায়াগনোসিস), বা রেকটাল বা ফ্যাট বায়োপসি (অ্যামিলয়েডের অবস্থা যাচাইয়ের জন্য)।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন