আমাদের স্নায়ুতন্ত্র কয়েক বিলিয়ান কোষ নিয়ে গঠিত। এগুলো স্পেশালাইজড সেল। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট একটি কাজ সম্পাদনে পারদর্শী এই কোষগুলো। স্নায়ুতন্ত্রের কোষগুলো মিলে একটি সংযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। আ স্পেকটাকুলার নেটওয়ার্ক অফ কানেকশান্স। প্রতিটি মানব মস্তিষ্কের যে পরিমাণ কানেকশান আছে, পৃথিবীতে তার সমপরিমাণ বালুকণাও হয়তো নেই।
স্নায়ুতন্ত্রের কোষ বলতেই আমরা নিউরনকে বুঝে থাকি। নিউরন ছাড়াও নার্ভাস সিস্টেমে তিন ধরণের গ্লিয়াল কোষ থাকে,
অ্যাস্ট্রোসাইট : এরা নিউরনের গাঠণিক কাঠামো বা স্ট্রাকচারাল ফ্রেমওয়ার্ক তৈরী করে। নিউরনের জৈব রাসায়নিক পরিবেশ (বায়োকেমিকাল এনভায়রোমেন্ট)কে নিয়ন্ত্রণ করে অ্যাস্ট্রেসাইট। অ্যাস্ট্রোসাইটের “ফুট প্রসেস” ছোট ছোট রক্তানলীর সাথে যুক্ত হয়। এভাবে তৈরী হয় ব্লাড ব্রেইন ব্যারিয়ার।
অলিগোডেনড্রোসাইট: এই কোষগুলো মায়েলিন শিথ তৈরী ও তাকে অক্ষুন্ন রাখার কাজটি করে। মায়েলিন শিথ এক ধরণের আবরণ। এটি ‘অ্যাক্সন’কে ঘিরে রাখে। অ্যাক্সন জুড়ে যে এ্যাকশান পটেনশিয়াল (বৈদ্যুতিক সংকেত) ছুটে যায়, তার গতি ও শক্তি (স্পিড ও কনসিস্টেন্সি) ঠিক রাখার জন্য মায়েলিন শিথের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
পেরিফেরাল নার্ভের এক্সন যে মায়েলিনে প্রোত্থিত, সেটি অলিগোডেনড্রেসাইট (শওন সেল) দিয়ে তৈরী।
মাইক্রোগ্লিয়াল সেল: মাইক্রোগ্লিয়াল কোষদের উদ্ভব হয় মনোসাইট বা ম্যাক্রোফেজ থেকে। এদের কাজও তাই রোগ প্রতিরোধী এই কোষগুলোর মত। মাইক্রোগ্লিয়াল সেল বিভিন্ন সংক্রমণকে মোকাবেলা করে। এবং ক্ষয়ে যাওয়া কোষ সরিয়ে ফেলে।
সেরেব্রাল ভেন্ট্রিকেল বা মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠগুলোর গায়ে থাকে এপেনডাইমাল কোষ।
স্নায়ুতন্ত্রে সংকেত কিভাবে আদান প্রদান হয় : জেনারেশান এন্ড ট্রান্সমিশান অফ নার্ভাস ইম্পালস
সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা সিএনএস বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মূল কাজ হচ্ছে আউটপুট বা প্রতিক্রিয়া তৈরী করা। শরীরের বাইরের স্টিমুলাই বা উদ্দীপন এবং শরীরের আভ্যন্তরীণ পরিবেশের পরিবর্তন, এই দুইয়ের সাপেক্ষে এই প্রতিক্রিয়া বা আউটপুটটি দিয়ে থাকে সিএনএস।
সিএনএস-কে দু’টা জিনিসের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। তাকে, বাহ্যিক পরিবেশের উদ্দীপনা বা এক্সটারনাল স্টিমুলাই-এর প্রতি প্রতিক্রিয়া যেমন দিতে হচ্ছে, তেমনি আবার সার্বক্ষণিক পরিবর্তনশীল পরিবেশে স্থির থাকার জন্য যথেষ্ট অপ্রতিক্রিয়াশীল বা “স্টোয়িক’ও থাকতে হচ্ছে।
প্রতিটি নিউরন ‘ইনপুট’ পায়। অর্থাৎ, একটি সংকেত আসে নিউরনটির কাছে। ডেনড্রাইট বা অন্য নিউরন থেকে আসা কিছু শাখা প্রশাখা (ব্রাঞ্চড প্রজেকশান) থেকে সিনাপটিক ট্রান্সমিশানের মাধ্যমে ইনপুটটি পেয়ে থাকে নিউরন। বেশ কতগুলি ইনপুটের সমন্বয়ের একটি আউটপুট তৈরী হয়। আউটপুটটি একটি একশান পটেনশিয়াল রূপে অ্যাক্সন দিয়ে পরিবাহিত হয়। তার ফলে, অন্য নিউরনগুলোতে একটি সিনাপটিক ট্রান্সমিশান যায়। অথবা মোটর সিস্টেমের বেলায় পেশীর কোষে একশান পটেনশিয়ালটি চলে যায়। এই সমস্ত ইনপুটের সমন্বয়ে, টার্গেট নিউরনটির ইলোকট্রোকেমিকাল গ্রেডিয়েন্টে একটি সামগ্রিক পরিবর্তন (নেট চেঞ্জ) আসে। এই পরিবর্তনটি যদি যথেষ্ট বড় হয় তাহলে একটি একশান পটেনশিয়ালের সৃষ্টি করবে।
সিনাপটিক ট্রান্সমিশানের মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রের কোষগুলোর মধ্যে যোগাযোগের ঘটনাটিতে নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণের একটি ভূমিকা আছে। নিউরোট্রান্সমিটারগুলো টার্গেট সেলটির ওপরস্থ কিছু কাঠামোর সাথে আন্তঃক্রিয়া করে। এই কাঠামোর মধ্যে রয়েছে- আয়ন চ্যানেল, এবং অন্যান্য সেল সারফেস রিসেপ্টর। এরকম অন্তত বিশটি নিউরোট্রান্সমিটারের কথা আমরা জানি। স্নায়ুতন্ত্রে বিভিন্ন জায়গায় তারা ক্রিয়া করে। এই নিউরোট্রান্সমিটারের বেশীরভাগকেই ফার্মাকোলজিকালি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
প্রতিটি নিউরোনাল সেল বডি বা কোষদেহ, অন্য আরও আরও হাজার হাজার নিউরন থেকে সিনাপ্টিক ইনপুট পেয়ে থাকে। যে নিউরনে এসে সিনাপ্টিক সংযোগ তৈরী হচ্ছে (সিনাপ্সিং নিউরন টার্মিনাল) সেগুলিতে “ফিডব্যাক রেগুলেশান” হয়। এর জন্য প্রিসিন্যাপ্টিক মেমব্রেনে একটি রিসেপ্টর সাইট রয়েছে। ফিডব্যাকের মাধ্যমে, সিন্যাপ্টিক ক্লেফট জুড়ে ট্রান্সমিটারের নিঃসরণ প্রভাবিত হয়।
এই সমস্ত তীব্র তাৎক্ষণিক বা একিউট ইফেক্টের পাশাপাশি, কিছু নিউরোট্রান্সমিটার একটি দীর্ঘ মেয়াদে কোন একটি নির্দিষ্ট জিনের এক্সপ্রেশান বা মেটাবলিক ফাংশান (বিপাকীয় কর্মকান্ড)-কে পরিবর্তন বা প্রভাবিত করতে পারে। এই দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাবটিই সম্ভবতঃ লং টার্ম মেমরি বা অতীতের স্মৃতি আমাদের মস্তিষ্কের রক্ষিত থাকার প্রক্রিয়ার জন্য দায়ী।
মস্তিষ্কের গঠন : স্নায়ুতন্ত্রের এনাটমি (ফাংশানাল এনাটমি অফ দি নার্ভার সিস্টেম)
সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার
স্নায়ুতন্ত্রের সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের কাজগুলোর ভেতরে সমন্বয় করে সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার্স। এর এন্টেরিয়ার হাফ বা সমানের অর্ধাংশ, বিভিন্ন এক্সিকিউটিভ ফাংশান নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ, আমরা যে বিভিন্ন ‘কিছু’ করি, এটি নিয়ন্ত্রিত হয় এই এন্টেরিয়ার হাফের মাধ্যমে। অন্যদিকে পোস্টেরিয়ার হাফ, বা পেছনের অর্ধাংশ, আশেপাশের পরিবেশ সমন্ধে আমাদের পারসেপশান বা ‘উপলব্ধি’ তৈরী করে।
প্রতিটি সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারের চারটি লোব থাকে। চারটি লোব তাদের স্ব স্ব কাজের ভিত্তিতে বিশেষায়িত। কিছু কাজ এসিমেট্রিকাল বা ল্যাটেরালাইজড ভাবে বন্টন হয়। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট কাজের ওপর মস্তিষ্কের যেকোন একটি দিকের দখল থাকে। এভাবে সেরেব্রাল ডমিনেন্স গড়ে ওঠে। মটর কন্ট্রোল বা শরীরের নড়াচড়া, কথা বলা, স্মৃতি এসবের জন্য যেকোন একটি হেমিস্ফিয়ার প্রধান হয়ে ওঠে।
সেরেব্রাল ডমিনেন্স,- লিম্ব ডমিনেন্স এবং ল্যাঙ্গুয়েজ ফাংশানকে একদিকে নিয়ে আসে। ডান হাতে যারা কাজ করে অভ্যাস্ত তাদের ক্ষেত্রে বামদিকের বা লেফট হেমিস্ফিয়ার প্রায় সবসময়ই ডমিনেন্ট। অন্যদিকে প্রায় অর্ধেক বাঁ-হাতির ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাদের রাইট হেমিস্ফিয়ারটি ডমিনেন্ট।
ফ্রন্টাল লোব বিভিন্ন এক্সিকিউটিভ ফাংশানের (স্মৃতি, চিন্তা-ভাবনা, আত্ননিয়ন্ত্রণ) সাথে যুক্ত। শরীরের নড়াচড়া, মানুষটির আচরণ, গুছিয়ে চিন্তা করা বা পরিকল্পনা করা এসব ফ্রন্টাল লোবের কাজ। ফ্রন্টাল লোবে - প্রাইমারি এবং সাপ্লিমেন্টারি মটর কর্টেক্স থাকে। তাছাড়া চোখের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ফ্রন্টাল লোবে একটি বিশেষ অঞ্চল থাকে। বাকশক্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি অংশ থাকে - ব্রোকা’জ এরিয়া। তাছাড়া মূ্ত্রত্যাগ বা মিকচুরেশানের নিয়ন্ত্রণও ফ্রন্টাল লোবে।
আমাদের সেন্সরি পারসেপশান ( আশেপাশের পরিবেশে থেকে যে স্টিমুলি বা উদ্দীপনা আমরা পাই)-গুলোকে সম্পূর্ণতা দিয়ে থাকে প্যারাইটাল লোব। প্রাইমারি সেন্সরি কর্টেক্সের অবস্থান প্যারাইটাল লোবের পোস্ট সেন্ট্রাল জাইরাসে। প্যারাইটাল লোবের বাদবাকী পুরোটাই “এ্যাসোসিয়েশান” বা সমন্বয় কর্টেক্স। এসোসিয়েশানের কাজ হল, বিভিন্ন সেন্সরি মোডালিটি (উদ্দীপনের পরে আমরা যা টের পাই- আলো, শব্দ, তাপমাত্রা) থেকে আসা ইনপুটগুলোকে প্রক্রিয়াকরণ এবং সেগুলির অর্থোদ্ধার করা।
ডমিনেন্ট প্যারাইটাল লোবের সুপ্রামার্জিনাল এবং এঙ্গুলার জাইরি, ল্যাঙ্গুয়েজ এরিয়া বা মস্তিষ্কের ভাষা সংক্রান্ত অঞ্চলটি গঠন করে। এদের একদম নিকটবর্তী অঞ্চলটি নিউমেরিকাল ফাংশান বা সংখ্যা বিষয়ক দক্ষতার সাথে সম্পৃক্ত। নন-ডমিনেন্ট প্যারাইটাল লোবটি ‘স্পেটিয়াল এওয়্যারনেস এন্ড অরিয়েন্টেশানে”র কাজ করে। অর্থাৎ, একজন মানুষের তার চারপাশের বিভিন্ন বস্তু ও বিষয় সমন্ধে সচেতনতা ও সেগুলোর সাপেক্ষে ঐ পরিবেশে সে কি করে, সেটা নন-ডমিনেন্ট প্যারাইটাল লোবের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।
টেম্পোরাল লোবে থাকে প্রাইমারি অডিটরি কর্টেক্স (শ্রবণ) এবং প্রাইমারি ভেস্টিবিউলার কর্টেক্স (শারীরিক ভারসাম্য)। ইনার মিডিয়াল সাইড বা টেম্পোরাল লোবের ভেতর দিকে থাকে অলফ্যাক্টরি (ঘ্রাণ) এবং প্যারাহিপ্পোক্যাম্পাল কর্টিসেস (প্যারাহিপ্পোক্যাম্পাল কর্টেক্স স্মৃতি শক্তির সাথে জড়িত)। লিম্বিক সিস্টেমের (মস্তিষ্কের যে কাঠামোগুলো আবেগ এবং স্মৃতি নিয়ে কাজ করে) সাথেও টেম্পোরাল লোবের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। এর মধ্যে রয়েছে হিপ্পোক্যাম্পাস এবং অ্যামিগডালা। এই দুটি স্মৃতি এবং আবেগকে প্রক্রিয়াকরণ করে। ডমিনেন্ট টেম্পোরাল লোব ভাষা সংক্রান্ত কাজেও অংশ নেয়। বিশেষ করে ওয়ার্নিকস এরিয়া, ভার্বাল কম্প্রিহেনশানের সাথে যুক্ত। অর্থাৎ, অন্যদের মুখের ভাষা বুঝতে সাহায্য করে ওয়ার্নিকস এরিয়া। দুটো টেম্পোরাল লোবেই, সংগীতকে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। ডমিনেন্ট দিকটি রিদম বা ছন্দ নিয়ে কাজ করে। মেলডি বা পিচ বা সুরের তারতম্যকে বুঝতে পারে নন-ডমিনেন্ট সাইড।
ভিজুয়াল ইন্টারপ্রিটেশান বা সামনের দৃশ্যকে উপলব্ধি করার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে অক্সিপিটাল লোব। প্রতিটি প্রাইমারি ভিজুয়াল কর্টেক্স, কন্ট্রাল্যাটেরাল ভিজুয়াল হেমিফিল্ডকে প্রকাশ করে। প্রাইমারি কর্টেক্সের আশেপাশের এলাকা নির্দিষ্ট ভিজুয়াল সাবমোডালিটি যেমন - রঙ, নড়াচড়া, ঘনতা, বিভিন্ন জটিল ভিজুয়াল প্যাটার্ন যেমন মানুষের চেহারাকে বিশ্লেষণ করতে পারে।
কর্টেক্সগুলোর গ্রে ম্যাটার, এবং হোয়াইট ম্যাটারের (অনেকগুলো নিউরোনাল এক্সন মিলে তৈরী হয়) গভীরে একগুচ্ছ কোষ থাকে - এগুলোকে বলা হয় ব্যাসাল গ্যাঙলিয়া। ব্যাসাল গ্যাঙলিয়া মটর কন্ট্রোলের সাথে যুক্ত।
সেন্সরি পার্সেপশানগুলোকে কতটুকু গ্রাহ্য করা হবে সেটি ঠিক করে দেয় থ্যালামাস
দি লিম্বিক সিস্টেমের কাজ আবেগ এবং স্মৃতি নিয়ে।
হাইপোথ্যালামাসের কাজ দেহের আভ্যন্তরীণ পরিবেশ বা হোমিওস্টেসিস ঠিক রাখা ; যেমন- শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ।
সেরেব্রাল ভেন্ট্রিকেল বা মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠগুলোতে সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড থাকে। ক্রেনিয়াল মুভমেন্ট বা খুলি হাড়গুলোর নড়াচড়ার সময় মস্তিষ্ককে রক্ষা করে সিএসএফ। ল্যাটেরাল ভেন্ট্রিকেলে সিএসএফ তৈরী হয়। সিএনএসকে পুষ্টির যোগান দেয় এবং রক্ষা করে সিএসএফ। সিএসএফ প্রবাহিত হয় তৃতীয় থেকে চতুর্থ ভেন্ট্রিকেলের দিকে এবং ব্রেইনস্টেমের ফোরামিনার মধ্য দিয়ে। সিএনএসের পৃষ্ঠে এসে মিলিয়ে যায়। শেষে আবারও সেরেব্রাল ভেনাস সিস্টেম এই তরলকে শুষে নেয়।
নিউরোলজি : দি ব্রেইনস্টেম
যেসমস্ত সেন্সরি এবং মটর পাথওয়ে মস্তিষ্কের হেমিস্ফিয়ারগুলোতে প্রবেশ করে এবং বেরিয়ে যায়, তার সবক’টিকেই ধারণ করে ব্রেইনস্টেম। পাশাপাশি, অধিকাংশ ক্রেনিয়াল নার্ভের নিউক্লিয়াই এবং প্রজেকশান (স্নায়ুর প্রক্ষেপণ) ব্রেইনস্টেমে থাকে। তাছাড়া, রেটিকুলার ফর্মেশানে থাকে গুরুত্বপূর্ণ নিউরনের সংগ্রহ।
ক্রেনিয়াল নার্ভ নিউক্লিয়াই, মাথার বিভিন্ন পেশীকে মটর কন্ট্রোল দিয়ে থাকে। এর মধ্যে মুখমন্ডল এবং চোখও রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্পেশাল সেন্স অর্গান এবং মুখমন্ডল, নাক, মুখ, ল্যারিঙ্কস, ফ্যারিঙ্স থেকে আসা সেন্সরি ইনপুটগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
কিছু অটোনমিক মেসেজ পৌঁছে দেয়াতেও ভূমিকা রাখে ক্রেনিয়াল নার্ভ নিউক্লিয়াই। যেমন, পিউপিলারি, স্যালাইভারি, ল্যাক্রিমাল ফাংশান ( চোখের মণির সংকোচন প্রসারণ, লালা নিঃসরণ, চোখের পানি)।
রেটিকুলার ফর্মেশান মূলতঃ চোখের জটিল নড়াচাড়া ( কনজুগেট আই মুভমেন্ট) কে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। শারীরিক ভারসাম্য এবং যৌন তাড়নাকে বজায় রাখে। রেটিকুলার ফর্মেশানের আরেকটি কাজ কার্ডিওরেস্পিরেটরী কন্ট্রোল। অর্থাৎ, ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের সমন্বিত কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ করা।
দি স্পাইনাল কর্ড
বিভিন্ন এক্সট্রাক্রেনিয়ান কাঠামো এবং সি-এন-এসের মাঝে প্রায় সবধরণের যোগাযোগের উপায় হচ্ছে “দি স্পাইনাল কর্ড’। এফারেন্ট এবং ইফারেন্ট ফাইবার (এফারেন্টে মস্তিষ্কে সংকেত নিয়ে যায়, ইফারেন্ট মস্তিষ্ক থেকে সংকেত নিয়ে যায় পেশীতে) বিযুক্ত গুচ্ছবদ্ধ (ডিসক্রিট বান্ডেল) রূপে শ্রেণীবিভক্ত থাকে। তবে গ্রে ম্যাটারে বিদ্যমান কোষের সংগ্রহই, লোয়ার-অর্ডার মটর রিফ্লেক্সগুলোর জন্য দায়ী। গ্রে-ম্যটারের কোষগুলো সেন্সরি তথ্যের প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরণ করে থাকে।
নিউরোলজি : সেন্সরি পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম
পেরিফেরাল নার্ভ ( মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের বাইরে যে নার্ভ থাকে)গুলোর সেন্সরি সেল বডিজ, স্পাইনাল কর্ডের ঠিক বাইরে অবস্থিত। এই সেল বডিজ বা কোষদেহগুলো স্পাইনাল এক্সিট ফোরামিনার ডর্সাল রুট গ্যাংলিয়ায় থাকে। এই নিউরনগুলোর দূরবর্তী প্রান্তগুলো বিভিন্ন বিশেষায়িত ‘এন্ডিং’ বা শেষপ্রান্তদের ব্যবহার করে। এই শেষপ্রান্ত বা এন্ডিংগুলো, এক্সটার্নাল স্টিমুলাই বা বাহ্যিক উদ্দীপনকে, একশান পটেনশিয়ালে পরিণত করে।
সেন্সরি নার্ভের দুই ধরণের এক্সনের সমন্বয় থাকে। বড়, দ্রুত পরিবাহী, মাইলিনেটেড এক্সনগুলো - জয়েন্ট পজিশান সেন্স (নিজের শরীরে অস্থিসন্ধিগুলোর অবস্থান বিষয়ে ব্যাক্তির সচেতনতা) বিষয়ক তথ্য এবং পেশীতে বিভিন্ন কমান্ড বা নির্দেশ পরিবহন করে। আরেক ধরণের - ছোট, ধীর গতি, আনমায়েলিনেটেড এক্সনগুলো - তাপমাত্রা এবং শারীরিক যন্ত্রণা বিষয়ক তথ্য পরিবহন করে। বিভিন্ন অটোনমিক ফাংশানের জন্যও এই ছোট এক্সনগুলোর দায়ী।
মটর পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম
লোয়ার মটর নিউরনের কোষদেহ (সেল বডিজ) নিয়ে স্পাইনাল কর্ডের এন্টেরিয়ার হর্ণ সেল গঠিত। সংকেত পরিবহনের গতি বাড়ানোর জন্য, পেরিফেরাল মটর নার্ভের এক্সনগুলো মায়েলিনে মোড়ানো থাকে। শওন সেল এই মায়েলিন তৈরী করে।
নিউরোমাস্কুলার জাংশানে ( যেখানে স্নায়ুতন্ত্র এবং পেশীর পরস্পরের সংস্পর্শে আসে) এসেটাইলকোলাইন নিঃসরণ করে মটর নিউরনগুলো। এর ফলে এন্ড প্লেট পটেনশিয়ান পাল্টে যায়। ফলে পেশীর সংকোচন-প্রসারণ হয়ে থাকে।
দি অটোনমিক সিস্টেম
দি অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম মূলতঃ তিনটি জিনিসকে নিয়ন্ত্রণ করে,
- কার্ডিওভাস্কুলার এবং রেসপিরেটোরী সিস্টেম ( হৃদযন্ত্র এবং ফুসফুস সমন্ধীয় ব্যাবস্থাগুলো)
- গ্যাস্ট্রোইন্টেসটিনাল ট্র্যাক বা পরিপাকতন্ত্রের স্মুদ মাসেল বা অনৈচ্ছিক পেশীকে
- শরীর জুড়ে বিভিন্ন এক্সোক্রাইন এবং এন্ডোক্রাইন গ্ল্যান্ডকে বা গ্রন্থিকে
কেন্দ্রীয়ভাবে অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মডিউলেটরি সিস্টেম (গাঠনিক একক)। ব্রেইনস্টেম, লিম্বিক সিস্টেম, হাইপোথ্যালামাস, ফ্রন্টাল লোবে এই মডিউলেটরী সিস্টেমগুলো থাকে। যৌন তাড়না এবং বাস্তব জগতের বিভিন্ন বিপদের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া প্রদানের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে এই সিস্টেমগুলো।
অটোনমিক আউটপুটকে কাজ ও ফার্মাকোলজির দিক থেকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়- প্যারাসিমপ্যাথেটিক এবং সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম।
নিউরোলজি : দি মটর সিস্টেম
প্রিমটর কর্টেক্সে শরীরের কোন মুভমেন্টের একটি পূর্ণ সাংকেতিক রূপ তৈরী করা হয়। ফর্মুলেশান অফ আ প্রোগ্রাম- অফ-মুভমেন্ট। এই প্রোগ্রামটি মটর কর্টেক্সে এসে কতগুলো এক্সাইটেটরি এবং ইনহিবিটরী সিগনালে পরিণত হয়। অর্থাৎ, কতগুলো উদ্দীপক ও দমনকারী সংকেত তৈরী হয় মটর কর্টেক্সে। এই সংকেতগুলো পিরামিডাল ট্র্যাক্টের মাধ্যমে স্পাইনাল কর্ডে চলে যায় (ট্রান্সমিটেড)। এরপর এই সংকেতটি ইন্টার্নাল ক্যাপসুল এবং ভেন্ট্রাল ব্রেইনস্টেমে পরিবাহিত হয়। এরপর মেডুলাকে অতিক্রম করে। সংকেতটি চলে আসে স্পাইনাল কর্ডের ল্যাটেরাল কলামে।
পিরামিডাল ট্র্যাক্টের ‘আপার মটর নিউরন’গুলো, স্পাইনাল কর্ডের গ্রে ম্যাটারের অ্যান্টেরিয়ার হর্ণ সেলগুলোর সাথে সিন্যাপ্স করে। স্পাইনাল কর্ডের গ্রে-ম্যাটার গঠন করে লোয়ার মটর নিউরন।
শরীরের যেকোন প্রকার নড়াচড়ার জন্যই দেহভঙ্গি এবং মাসেল টোনে পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। অনেক সময়ই এমন সব মাসেল গ্রুপ জড়িত থাকে, যাদের সাথে মূল মুভমেন্টটির দৃশ্যতঃ কোন সম্পর্ক নেই।
মটর সিস্টেমে, বিভিন্ন প্রকার নিয়ন্ত্রণের একটি ক্রমাধিকারতন্ত্র (হায়রার্কি) থাকে। এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাগুলো শরীরের ভঙ্গি এবং মাসেল টোন বজায় রাখে। যেকোন ধরণের নড়াচড়াকে এই ব্যবস্থাগুলোর ওপর সুপারইমপোজ করা হয়, বা চাপিয়ে দেয়া হয়।
স্পাইনাল কর্ডের গ্রে ম্যাটারে, ক্রমাধিকারে সবচেয়ে নীচের দিকে ব্যাবস্থাগুলো ‘স্ট্রেচ’ বা প্রসারণের প্রতি শারীরিক প্রতিক্রিয়া (রিফ্লেক্স রেসপন্স)কে নিয়ন্ত্রণ করে। কোন পেশী প্রসারিত হলে ‘মাসেল স্পিন্ডেল’ সেটি টের পায়। মাসেল স্পিন্ডেলগুলো স্ট্রেচ রিফ্লেক্সের, এফারেন্ট সাইড (যারা মস্তিষ্কে সংকেত পৌঁছায়) হিসেবে কাজ করে। তারা একটি মনোসিনাপ্টিক রিফ্লেক্সের সূত্রপাত করে। এর ফলে একটি প্রোটেকটিভ বা রিএকটিভ (রক্ষণমূলক বা প্রতিক্রিয়ামূলক) মাসেল কন্ট্রাকশান হয়।
ব্রেইনস্টেম থেকে যে ইনপুট আসে, সেগুলি মূলতঃ ইনহিবিটরি বা দমনমূলক। স্পাইনাল কর্ডের গ্রে-ম্যাটারে থাকা বিভিন্ন ‘পলিসিন্যাপ্টিক কানেকশান’গুলো, ফ্লেকশান-এক্সটেনশানের মত জটিল ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটাই সমন্বিত ক্রিয়া বা কোঅর্ডিনেটেড একশানের মৌলিক উপাদান (বিল্ডিং ব্লক)। কিন্তু সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এক্সট্রাপিরামিডাল সিস্টেম এবং সেরেবেলাম থেকে ইনপুট আসতে হবে।
নিউরোলজি : লোয়ার মটর নিউরনস
স্পাইনাল কর্ডের, এন্টেরিয়ার হর্ণে থাকা লোয়ার-মটর নিউরনগুলো একটি মাসেল ফাইবারের গ্রুপকে ইনার্ভেট করে (বা স্নায়ুর যোগান দেয়)। এই মাসেল ফাইবারের গ্রুপটিকে বলে একটি ‘মটর ইউনিট’। লোয়ার মোটর নিউরন ক্ষতিগ্রস্থ হলে, এই ইউনিটটি কন্ট্রাকশানের ক্ষমতা হারায়। ফলাফল, শরীরের ঐ জায়গায় দুর্বলতা দেখা দেয়। মাসেল টোন কমে যায়।
আবার, ডিনার্ভেটেড মাসেল ফাইবারের এট্রফি হয়। ফলাফল মাসেল ওয়েস্টিং। বা পেশী ক্ষয়। নার্ভ সাপ্লাই নষ্ট হয়ে যাওয়া মাসেলে আপনাআপনি ডিপোলারাইজ হয়। ফলে ‘ফিব্রিলেশান’ দেখা দেয়। অর্থাৎ, মাসেল ফাইবারগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁপতে থাকে। জিহ্বা বাদে, শরীরের অন্য পেশীর ফিব্রিলেশান ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি ছাড়া বোঝা যায় না।
সময়ের সাথে, আশেপাশে অক্ষুন্ন নিউরনগুলো বেড়ে ওঠে, এবং ক্ষতিগ্রস্থ জায়গাটাকে নতুন করে নার্ভের যোগান দেয় (রি ইনার্ভেট)। কিন্তু নতুন ইউনিটটি আগের চেয়ে বড়। এখানে নিউরোমাস্কুলার জাংশানগুলো অস্থির। এরা আপনাআপনি ডিপোলারাইজ হয়ে যায়। ফলাফল “ফ্যাসিকুলেশান” (পেশী কাঁপা)। ফ্যাসিকুলেশান যথেষ্ট স্পষ্ট ঘটনা। খালি চোখেই দেখা যায়। ফ্যাসিকুলেশান থেকে বোঝা যায়, শরীরের ঐ জায়গার পেশীতে ক্রনিক ডিনার্ভেশান হয়েছে এবং আংশিক রি-ইনারভেশান হয়েছে।
আপার মটর নিউরনস
অ্যান্টেরিয়ার হর্ণের লোয়ার মটর নিউরনগুলোর কাজকে প্রভাবিত করতে পারে আপার মটর নিউরন। এই প্রভাবটি উদ্দীপক বা দমনমূলক ( এক্সাইটেটরি বা ইনহিবিটরি) দু’রকমই হতে পারে।
আপার মটর নিউরনে কোন লেশান বা ক্ষত থাকলে, মাসেল টোন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এটি সবচেয়ে ভালোভাবে লক্ষ্য করা যায় শরীরের প্রধান শক্তিশালী মাসেলগ্রুপ গুলিতে। অর্থাৎ, লোয়ার লিম্ব বা শরীরের নীচের অংশের এক্সটেনসার মাসেলগুলো এবং আপার লিম্বের, ফ্লেক্সার মাসেল গুলো। আপার মটর লেশান সম্পর্কিত যে দুর্বলতা, সেটি অপোজিং মাসেল গ্রুপগুলোতে বেশী প্রকাশ পায়।
ইনহিবেশান কমে গেলে, রিফ্লেক্সগুলো অস্বাভাবিক দ্রুত হয়ে যাবে। এবং বিভিন্ন মুভমেন্টের রিফ্লেক্স প্যাটার্নও অস্বাভাবিক বিবর্ধিত হবে। যেমন কোন একটি নক্সাস স্টিমুলি বা ক্ষতিকর কিছু সংস্পর্শে আসলে ‘ফ্লেকশান ইউথড্রওয়াল’ (ক্ষতিকর কিছুর সংস্পর্শে যে হাত বা পা এসেছে, সেটির এক্সটেনসার মাসেলগুলো রিলাক্স হয়ে যাবে, এবং ফ্লেক্সার মাসেল কন্ট্রাক্ট করবে। যেদিকটি সংস্পর্শে আসেনি, সেখানে বিপরীত ঘটনা ঘটবে, অর্থাৎ, ফ্লেক্সার শিথিল থাকবে, এক্সটেনসার কন্ট্রাক্ট করবে)। এবং স্প্যাজমস অফ এক্সটেনশান। অর্থাৎ, অস্বাভাবিক শক্তি ও দ্রুততার সাথে মাসেলটি প্রসারণ।
সাধারণতঃ দ্রুত প্রসারিত করতে গেলেই, মাসেলটির অতিরিক্ত বর্ধিত টোন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটাকে বলে ‘স্প্যাসটিক ক্যাচ’। সাধারণতঃ এরপরই মাসেলটি কিছু শিথিল হবে। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না। টেনশান ধরে রাখবে। একে বলা হয়, ‘ক্লাস্প নাইফ’ ফেনোমেনোন।
আপার মটর নিউরন ক্ষতিগ্রস্থ হলে, প্রিমিটিভ বা জীবনের প্রারম্ভকালীন রিফ্লেক্স ফিরে আসে। এটি এক্সটেনসার প্লানটার রেসপন্স হিসেবে প্রকাশ পায়। পায়ের হিল (কনিষ্ঠ আঙুলের রেখা বরাবর) থেকে বিপরীত দিকে বুড়ো আঙুলের দিকে, পায়ের পাতায় আড়াআড়ি ভাবে কলম বা এই জাতীয় কিছু বুলিয়ে গেলে বুড়ো আঙুলটি ওপরের দিকে সরে যায়, এবং অন্য আঙুলগুলি বাইরের দিকে চলে যেতে চায় - এটাই এক্সটেনসার প্লান্টার রিফ্লেক্স। এটি দিয়ে ডাক্তাররা বুঝে থাকেন, আপার মটর নিউরন লেশান রয়েছে কি না।
স্পাসটিসিটি বা অতিরিক্ত মাসেল টোন সাধারণ আপার মটর নিউরন লেশান বা ক্ষতটি তৈরী হওয়া সপ্তাহখানিক পর থেকে বোঝা যায়।
দি এক্সট্রাপিরামিডাল সিস্টেম
ব্যাসাল গ্যাংলিয়া এবং মটর কর্টেক্সে মধ্যকার সার্কিটস বা সংযোগগুলো মিলে একস্ট্রাপিরামিডাল সিস্টেম তৈরী করে। এক্সট্রাপিরামিডাল সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে - মাসেল টোন, দেহভঙ্গি। শরীরে কোন একটি মুভমেন্টের সূত্রপাত হয়, এক্সট্রাপিরামিডাল সিস্টেমের মাধ্যমে।
একস্ট্রাপিরামিডাল সিস্টেমে ক্ষত থাকলে পেশীর টোন বেড়ে যায়। অতিরিক্ত এই মাসেল টোন স্পাসটিসিটির মত নয়। স্পিড অফ স্ট্রেচের সাথে এটি পরিবর্তিত হয় না। সম্পূর্ণ রেঞ্চ অফ মুভমেন্ট জুড়ে একইরকম থাকে। এটাকে বলে ‘লিড পাইপ রিজিডিটি’।
একস্ট্রাপিরামিডাল লেশানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল ইনভলান্টারি মুভমেন্ট। সাথে ট্রেমর এবং রিজিডিটি যুক্ত হয়ে বৈশিষ্ট্যসূচক (টিপিকাল) “কগহুইল রিজিডিটি” তৈরী করে।
এক্সট্রাপিরামিডাল লেশানে আরেকটি বিষয় দেখা যেতে পারে। শ্লথ ও ভারসাম্যহীন (স্লো এন্ড ক্লামজি) মুভমেন্ট। যাকে বলা হয় ব্র্যাডিকিনেশিয়া। এধরণের রোগীরা রিপিটেটিভ বা পুনরাবৃত্তিমূলক কাজের ক্ষেত্রে প্রতি রিপিটেশানেই আগের চেয়ে স্লো হয়ে যান। পাশাপাশি পশ্চুরাল ইনস্ট্যাবিলি বা শারীরিক ভারসাম্যহীনতা থাকে। যেকারণে পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
মস্তিষ্কের গঠন: দি সেরেবেলাম
মটর কর্টেক্সে মুভমেন্টের সূত্রপাত হয়। মটর কর্টেক্সের এই সংকেতকে আরও সূক্ষ্ণ ও সমন্বিত ( ফাইন-টিউন এন্ড কো-অর্ডিনেট) করে সেরেবেলাম। এর মধ্যে আর্টিকুলেশান অফ স্পিচ বা জিহ্বা, দাঁত, ঠোঁট, চোয়ালের সমন্বয়ে কথা তৈরী করতে পারা- অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও বিভিন্ন স্কিলড মুভমেন্ট বা শারীরিক দক্ষতা শেখা এবং পরিকল্পনা করাতেও অংশ নেয় সেরেবেলাম। থ্যালামাস এবং কর্টেক্সের মধ্যকার কিছু রেসিপ্রোকাল কানেকশান( বা অনুরূপ কিন্তু পরস্পর বিপরীতমুখি কিছু সংযোগ) এর মাধ্যমে সেরেবেলাম এই কাজটি করে।
কোন ‘সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারে’ লেশান থাকলে, শরীরের ঐ দিকে ‘ল্যাক অফ কোর্ডিনেশান’ বা সমন্বয়ের অভাব দেখা যায়।
সেরেবেলার ডিসফাংশান বা সেরেবেলাম, ঠিক মত কাজ না করলে চোখের নড়াচড়ার স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়। ফলে নিস্ট্যাগমাস দেখা দেয়। নিস্ট্যাগমাস বলতে বোঝায় চোখ অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাভাবিক দ্রুত নড়তে থাকা। সাথে আরও থাকতে পারে ‘স্পিচ ডিসারথ্রিয়া’। অর্থাৎ, কথা বলার সাথে সম্পর্কিত পেশীগুলোর অকার্যকারিতার দরুণ কথা অস্পষ্ট হওয়া, জড়িয়ে যাওয়া।
লিম্বসের ক্ষেত্রে, একটি মুভমেন্ট শুরুতে ঠিকই থাকে। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে সেটির অক্ষুন্নতা বজায় থাকে না। ফলে একটি ‘ইন্টেনশান ট্রেমার’ দেখা দেয়। ব্যাক্তি টার্গেটের দূরত্ব ঠিকমত বিচার করতে পারে না। যাকে বলা হয় ডিসমেট্রিয়া। এর ফলাফল হচ্ছে পাস্ট পয়েন্টিং।
পাশাপাশি ডিসডায়াডোকোকিনেসিস দেখা দেয়। অর্থাৎ, বারবার হাতের মুঠো খোলা বন্ধ করা, তুড়ি বাজানো এই ধরণের কাজগুলো করার সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
দুটো হেমিস্ফিয়ারকে সংযোগকারী সেন্ট্রাল ভার্মিস অফ দি সেরেবেলাম। ভার্মিসের কাজ গেইট এবং পশ্চার ঠিক রাখা। অর্থাৎ, হাঁটার ও দাড়ানোর ভঙ্গি ঠিক রাখে ভার্মিস। যেকারণে ভার্মিসে কোন সমস্যা হলে, বৈশিষ্ট্যসূচক অ্যাটাক্সিক গেইট দেখা যায়।
ভিশান - দৃষ্টি :
চোখের রেটিনায় গ্যাংলিয়ান সেল থাকে। এই কোষগুলোর ফাইবার থাকে। তন্তুগুলো অপটিক ডিস্কে যায়। অপটিক ডিস্ক থেকে এরপর, পেছন দিকে ল্যামিনা ক্রিবোসার মধ্য দিয়ে গিয়ে অপটিক নার্ভে পৌঁছায়, রেটিনা গ্যাংলিয়ান সেলের ফাইবারগুলো।
ন্যাসাল অপটিক ফাইবার (যেগুলো ‘টেম্পোরাল ভিশান ফিল্ডে’ বা পার্শ্বদৃষ্টিতে সাহায্য করে)-গুলো কায়াজামে (দুটো এনাটমিকাল কাঠামোর ছেদবিন্দু) ছেদ করে, কিন্তু টেম্পোরাল ফাইবার করে না।
যেকারণে, প্রতিটি অপটিক ট্র্যাক্ট এবং আরও পরবর্তী ফাইবারগুলো পেছনদিকে যে দৃশ্যের সংকেত বা রিপ্রেজেন্টাশান পরিবহন করে নিয়ে যাচ্ছে সেটি কন্ট্রাল্যাটারাল ভিজুয়াল স্পেস বা অন্যদিকের দৃশ্য।
ল্যাটেরাল জেনিকুলেট নিউক্লিয়াস থেকে লোয়ার-ফাইবার এবং আপার-ফাইবারগুলো যাত্রা করে। লোয়ার-ফাইবারগুলো টেম্পোরাল লোবের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। আপার-ফাইবারগুলো যায় প্যারাইটাল লোবের ভেতর দিয়ে। ফাইবারগুলোর চূড়ান্ত গন্তব্য- অক্সিপিটাল কর্টেক্সের প্রাইমারি ভিজুয়াল এরিয়া।
আমাদের চোখ সাধারণতঃ কনজুগেটলি মুভ করে। অর্থাৎ, একই দিকে, একই গতিতে নড়ে তারা। তবে ভিন্ন দূরত্বে থাকা দৃশ্যকে সমন্বয়ের কাজটি করে “হরিজন্টাল কনভার্জেন্স”।
চোখের নড়াচড়ার নিয়ন্ত্রণ শুরু হয় সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারগুলোতে। বিশেষ করে ফ্রন্টাল আই ফিল্ডে। এরপর ভিশনের এই পাথওয়ে ( সংকেত প্রবাহের পথটি) ব্রেইনস্টেমের দিকে নেমে যায়। এই সময় তিনটি জায়গার থেকে পাওয়া ইনপুট থাকে - ভিজুয়াল কর্টেক্স, সুপেরিয়ার কলিকুলাস, এবং সেরেবেলাম।
পন্স এবং মিড-ব্রেইনে থাকে, হরিজন্টাল এবং ভার্টিকাল ( আনুভূমিক এবং উল্লম্ব) গেজ সেন্টার। এরা অকুলার মটর লার্ভ নিউক্লিয়াই (৩,৪ এবং ৬)-এর প্রতি আউটপুটকে সমন্বিত করে। অকুলার মটর নার্ভ নিউক্লিয়াই গুলো, মিডিয়াল লংগিচুডিনাল ফ্যাসিকুলাস বা এমএলএফ দিয়ে পরস্পর যুক্ত থাকে। হরিজন্টাল আই মুভমেন্ট বা আনুভূমিক বরাবর চোখের নড়াচড়ার জন্য মিডিয়াল লংগিচুডিনাল ফ্যাসিকুলাসগুলো অত্যান্ত জরুরী।
রেজাল্টিং সিগনালস বা যে সিগনালগুলো শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেল, সেগুলো একস্ট্রা অকুলার মাসেলকে পৌঁছে দিচ্ছে (সাপ্লাইড) তিনটি ক্রেনিয়াল নার্ভ - অকুলোমটর(৩য়), ট্রকলিয়ার(৪র্থ) এবং এ(ব)ডুসেন্স(৬)
প্যারাসিমপ্যাথেটিক এবং সিমপ্যাথেটিক একটিভিটির একটি সমন্বয়ের মাধ্যমে পিউপিলারি সাইজ নির্ধারিত হয়। ৩য় নার্ভে থাকে এডিঙ্গার-ওয়েস্টফ্যাল সাবনিউক্লিয়াস। এই সাবনিউক্লিয়াস থেকে প্যারাসিমপ্যাথেটিক ফাইবারগুলোর শুরু হয়(অরিজিনেট)। এই ফাইবারগুলো থার্ড নার্ভের সাথে চলতে থাকে। তারপর সিলিয়ারি গ্যাংলিয়ানের সিনাপ্স করে। এবং এরপরে সংকেতটি পৌঁছে যায় আইরিসের (চোখের তারার রঙিন অংশ) কনস্ট্রিকটার পিইপিলি মাসেলে।
সিমপ্যাথেটিক ফাইবারের শুরু হয় হাইপোথ্যালামাস থেকে। সেখান থেকে নেমে আসে ব্রেইনস্টমে এবং সার্ভিকাল স্পাইনাল কর্ডে। টি-ওয়ান বা থোরাসিন ওয়ানের লেভেলে এসে ফাইবারগুলো একবার প্রকাশিত হয় (ইমার্জ)। তারপর আবারও , ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারির সংলগ্ন হয়ে চোখে ফিরে যায়, এবং ডাইলেটর পিউপিলি মাসেলকে সাপ্লাই দেয়।
স্পিচ বা বাকশক্তি
সেরেব্রাল কর্টেক্স বেশীরভাগ অংশটাই, যোগাযোগমূলক বিভিন্ন শব্দ তৈরী এবং সেগুলোর বিশ্লেষণের সাথে জড়িত থাকে। ডমিনেন্ট হেমিস্ফিয়ারের বেলায় এটি বেশী সত্য।
স্পিচ সাউন্ড বা ‘ফোনিমের’ অর্থোদ্ধার বা ডিকোডিং করে থাকে- পোস্টেরিয়ার টেম্পোরাল লোবের আপার পার্ট। বা টেম্পোরাল লোবের পশ্চাৎভাগের ওপরের অংশটি স্বতন্ত্র শব্দ সংকেতগুলোর মাঝে পার্থক্য করতে পারে।
শব্দে অর্থ আরোপ করা, এবং সেই সাথে বিভিন্ন আইডিয়া এবং ধারণাকে প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষা নির্মাণের (ফরমুলেশান অফ ল্যাঙ্গুয়েজ) কাজটি প্রধানতঃ অ্যান্টেরিয়ার প্যারাইটাল লোবের লোয়ার পার্টে হয়ে থাকে( দি এংগুলার এন্ড সুপ্রামার্জিনলা জাইরি)। অর্থাৎ, আমরা যে মনের ভাব প্রকাশ করি ভাষার মাধ্যমে, সেটির শুরু হয় প্যারাইটাল লোবের সামনের দিককার নীচের অংশগুলোতে - এংগুলার এবং সুপ্রামার্জিনাল জাইরিতে।
টেম্পোরাল লোবের, স্পিচ কম্প্রিহেনশানের অঞ্চলটি (শব্দময় কোন পটভূমি থেকে মানুষের কথাকে আলাদা করতে পারা ও বিশ্লেষণ করতে পারা)-কে বলে ওয়ার্নিক্স এরিয়া। টেম্পোরাল লোবের বাকী অংশটগুলো ভার্বাল মেমোরিতে’ অবদান রাখে। অর্থাৎ, এখানেই অর্থপূর্ণ শব্দগুলি “সংক্ষিত” থাকে। এক অর্থে এটি মস্তিষ্কের শব্দ ভান্ডার।
ভাষার নন-ভার্বাল অংশটি নিয়ে কাজ করে নন-ডমিনেন্ট প্যারাইটাল লোবের বিভিন্ন অংশ। বক্তার স্বরের অর্থপূর্ণ তারতম্যকে শনাক্ত করতে পারে এই অংশগুলো।
ফ্রন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজ এরিয়া বা ফ্রন্টাল লোবের ভাষা সংক্রান্ত অঞ্চলটির অবস্থান, ডমিনেন্ট ইনফেরিয়ার ফ্রন্টাল জাইরাসের পোস্টেরিয়ার এন্ডে। এর নাম ব্রোকাজ এরিয়া। ব্রোকাজ এরিয়া অন্য দুটি লোব (টেম্পোরাল এবং প্যারাইটাল) থেকে ইনপুট পায় আর্কুয়েট ফ্যাসিকুলাসের মাধ্যমে।
ব্রোকাজ এরিয়াতে মটর কমান্ড তৈরী হয়। তারপর এই কমান্ডটি চলে যায় পন্স এবং মেডুলায় থাকা ক্রেনিয়াল নার্ভ নিউক্লিয়াইতে। একই সাথে ব্রোকাজ এরিয়ার কমান্ডটি, স্পাইনাল কর্ডের এন্টেরিয়ার হর্ণ সেলেও চলে যায়।
ঠোঁট, জিহ্বা, প্যালেট, ফ্যারিংস, ল্যারিংস, এবং শ্বাসের সম্পর্কিত পেশীগুলো যখন একটি নার্ভ ইম্পাল্স হিসেবে ব্রোকাজ এরিয়ার নির্দেশটিকে গ্রাহ্য করে, তখন কতগুলি শৃঙ্খলিত ধ্বনির সৃষ্টি হয়। যাকে আমরা বলি কথা।
কথা বা স্পিচকে সুসমন্বিত করার ক্ষেত্রে সেরেবেলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেরেবেলামে লেশান থাকলে ডিসার্থ্রিয়া (কথা বলার ক্ষমতা নষ্ট হওয়া) দেখা দিতে পারে। ডিসার্থ্রিয়ায় মূল সমস্যাটি হয়, কথা বলার মত যথেষ্ট ‘মটর আর্টিকুলেশান’ বা বাকযন্ত্রগুলোর সুসমন্বয়, রোগীর মস্তিষ্ক করতে পারে না।
দি সোমাটোসেন্সরি সিস্টেম
আমাদের বডি সার্ফেস বা দেহপৃষ্ঠকে বর্ণণা করা যায় ডার্মাটোমের মাধ্যমে। প্রতিটি ডার্মাটোম দিয়ে ত্বকের একটি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলকে বোঝায়। এই অঞ্চলটুকু সেন্সরি নার্ভগুলো একটি মাত্র স্পাইনাল নার্ভ রুট থেকে উদ্ভুত হয়।
অ্যানাটমিকালি অসম্পর্কিত দুটি ব্যাবস্থার মাধ্যমে সেন্সরি ইনফর্মেশান অ্যাসেন্ড করে বা ব্রেইনের দিকে যাত্রা করে। প্রোপায়োসেপটিভ অর্গানস (নড়াচড়ার সাথে সম্পর্কিত দেহের অংশ) এবং দেহের যেসব অংশ বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট সেনসেশান বা অনুভূতির সাথে মস্তিষ্কের মধ্যস্থা করে, যার মধ্যে ‘ভাইব্রেশান’ বা কম্পনও রয়েছে, পোস্টেরিয়ার হর্ণের এসে স্পাইনাল কর্ডে প্রবেশ করে। তারপর ইপসিল্যাটেরাল কলামের সাথে কোন সিনাপ্স না করেই তারা স্পাইনাল কর্ড অতিক্রম করে যায়। অন্যদিকে যেসব ফাইবার ব্যাথা, তাপমাত্রা এসব সেন্সরি তথ্য বহন করছে, অর্থাৎ নকিসেপটিভ নিউরনগুলো, সেগু;ই স্পাইনাল কর্ডের মধ্যরেখা অতিক্রমকারী সেকেন্ড অর্ডার নিউরনের সাথে সিনাপ্স করে। এরপর সেন্সরি তথ্যটি কন্ট্রাল্যাটেরাল অ্যান্টেরোল্যাটেরাল স্পিনোথ্যালমিক পাথওয়ে ধরে ব্রেইনস্টেমে চলে যায়।
ডর্সাল সেন্সরি কলামের, সেকেন্ড অর্ডার নিউরনগুলো, আপার মেডুলার মধ্যরেখাকে অতিক্রম করে যায়। তারপর ব্রেইনস্টেম ধরে মস্তিষ্কের দিকে উঠতে থাকে। এখানে, তারা (ইতিমধ্যেই অতিক্রম করা) স্পিনোথ্যালামিক পাথওয়ের মধ্যরেখা বরাবর (মিডিয়াল টু) থাকে। যেকারণে, ব্রেইনস্টেমে কোন একদিকে লেশান থাকলে, বিপরীত দিকের শরীরের ‘সেন্সরি লস’ (অসাড়তা) হয়। প্রতিটি মোডালিটি বা উপায়ই ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
ব্রেইনস্টেমে লেশান থাকলে মুখের পেশীতে অসাড়তা দেখা যায়। এই সেন্সরি লসের বিন্যাস বা ডিসট্রিবিউশানটির সাথে ব্রেইনস্টেমের মধ্যকার ট্রাইজেমিনাল ফাইবারের অ্যানাটমি জড়িত। মুখের পেছনের অংশ, বা কানের কাছের অংশ, থেকে যে ফাইবার বা স্নায়ুতন্তুগুলো আসে, সেগুলো ব্রেইনস্টেম ধরে নেমে যায়, স্পাইনাল কর্ডের ওপরের অংশ পর্যন্ত। সেখানে স্পাইনাল কর্ডের মধ্যরেখা অতিক্রমকারী সেকেন্ড অর্ডার নিউরনের সাথে এই ফাইবারগুলো সিন্যাপ্স করে। অতঃপর, আবারও মুখের পেছন দিকে আসা এই তন্তুগুলো, স্পিনোথ্যালামিক ফাইবার ধরে মস্তিষ্কের দিকে উঠতে থাকে। মুখের সামনের অংশ থেকে সেনসেশান বা অনুভূতি নিয়ে যাচ্ছে যে তন্তুগুলো, সেগুলো ব্রেইনস্টেমে আরও কম দূরত্ব নেমে থাকে। যেকারণে, লো ব্রেইনস্টেম লেশানের কারণে, মুখমন্ডলে সেন্সরি লস বা অসাড়তা একটি ‘বালাক্লাভা হেলমেট’ ডিসট্রিবিউশান মেনে চলে। কারণে, বেশী দূরত্ব নেমে যাওয়া ট্রাইজেমিনাল নার্ভ ফাইবারগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
ডর্সাল কলাম এবং স্পাইনোথ্যালামিক ট্র্যাক্ট দু’টোই শেষ হয় থ্যালামাসে গিয়ে। সেখান থেকে সংকেত চলে যায় প্যারাইটাল কর্টেক্সে।
পেইন বা যন্ত্রণা অনুভূতি
যন্ত্রণা একটি জটিল উপলব্ধি বা পার্সেপশান। যন্ত্রণা অনুভব করার বিষয়টি নোকিসেপ্টার নিউরনের ওপর আংশিক নির্ভর করে। পুরোপুরি নয়। আরও উচ্চ পর্যায়ে, ক্রনিক এবং সিভিয়ার বা প্রবল যন্ত্রণার সাথে মুড বা মেজাজের অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। যন্ত্রণা যেমন মুড ডিসঅর্ডারকে আরও খারাপ করতে পারে, তেমনি মুড ডিজঅর্ডারের ফলে কোন একটি শারীরিক যন্ত্রণা অনুভূতি আরও প্রবল হয়ে উঠতে পারে। এরকম মুড ডিজঅর্ডারে মধ্যে রয়েছে ডিপ্রেশান, অ্যাংসাইটি। বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক এবং মানসিক সিকোয়েলি (পূর্বোক্ত রোগের পরিণামে বর্তমান অবস্থা) গুলোকে ঠিক করা (মডিফাই) পেইন ম্যানেজমেন্টে বা ব্যাথার চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
স্ফিংটার কন্ট্রোল (মূত্রত্যাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ):
ব্লাডারে সিমপ্যাথেটিক নার্ভ সাপ্লাই আসে থোরাসিক ইলাভেন- লাম্বার টু এর রুটস থেকে। এই নার্ভগুলো ইনফেরিয়ার হাইপোগ্যাস্ট্রিক প্লেক্সাসের সাথে সিনাপ্স করে। অন্যদিকে প্যারাসিমপ্যাথেটিক সাপ্লাই স্যাক্রাল ২-৪ থেকে আসে। পাশাপাশি, এক্সটার্নাল (ভলান্টারি) স্ফিংটার একটি সোমাটিক সাপ্লাই পায়। এই সোমাটিক সাপ্লাইটি আসে স্যাক্রাল ২-৪ থেকে। সোমাটিক এই সাপ্লাইটি পিউডেন্ডাল নার্ভসের মধ্য দিয়ে যায়।
ব্লাডারে মূত্র জমা থেকে, প্যারাসিমপ্যাথেটিক একটিভিটিকে ইনহিবিট বা দমন করার মাধ্যমে। ফলে ব্লাডার ওয়ালের ডেট্রুসর মাসেল থাকে শিথিল। তাছাড়া, ইউরেথ্রাল স্ফিংটারদের ওপর, সিমপ্যাথেটিক এবং সোমাটিক ঘটিত (মিডিয়েটেড) টনিক কন্ট্রাকশানও কন্টিনেন্স বা পেশাব ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ভয়ডিং বা মূত্রত্যাগ, প্রাপ্তবয়সী মানুষের ক্ষেত্রে, সচেতন নিয়ন্ত্রণের বিষয়। মূত্রত্যাগের ক্ষেত্রে টনিক-ইনবিহিশানকে শিথিল বা রিলাক্স করা হয়। ব্রেইনের হায়ার সেন্টারের, পনটাইন মিকচুরেশান সেন্টার এই সংকেতটি পাঠায়। পনটাইন মিকচুরেশান সেন্টারের নির্দেশটি পাওয়ার পর, পেলভিক ফ্লোরের মাসেলগুলো শিথিল হয়ে যায়। একই সাথে এক্সটার্নাল এবং ইন্টার্নাল ইউরেথ্রাল স্ফিংটারও শিথিল হয়ে যায়। একই সাথে প্যারাসিমপ্যাথেটিক ঘটিত ডেস্ট্রুসর মাসেল কন্ট্রাকশানও হয়।
ব্যাক্তিত্ব এবং মেজাজ
ব্রেইন ফাংশানকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এমন যেকোন প্রক্রিয়াই মানুষের মন-মেজাজ ( মুড এন্ড এফেক্ট)কে প্রভাবিত করতে পারে। বিপরীতক্রমে, আশেপাশে জগত সমন্ধে অনুভূতি ( পারসেপশান) এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্মের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে সক্ষম মুড ডিজঅর্ডার। একটি নিউরোলিজকাল সিম্পটমটি মনস্তাত্ত্বিক এবং মানসিক পরিবর্তনের পরিণাম নাকি নিজেই সেটির কারণ, তার নির্ণয় বেশীরভাগ সময়ই দুরূহ।
ঘুম
ঘুম ঠিক কেন প্রয়োজন হয় সেটি জানা যায় না। কিন্তু বলা বাহুল্যই যে, স্বাস্থ্যের জন্য ঘুম জরুরী। আপার ব্রেইনস্টেমের এবং ডায়ানসেফালনের, রেটিকুলার এক্টিভেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে ঘুম নিয়ন্ত্রিত হয়।
ঘুমের বেশ অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। ইলেকট্রো-এনকেফালোগ্রাফির মাধ্যমে এই ধাপগুলোকে দৃশ্যায়ন করা সম্ভব।
যখন ঝিমুনী আসে, ই-ই-জির পটভূমিতে আলফা রিদম অদৃশ্য হয়ে যায়। ই-ই-জি পটভূমির দখল স্লো-ওয়েভ একটিভি। সময়ের সাথে এই স্লো-ওয়েভের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
ঘুম গভীর হওয়ার পরপরই স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। এই পর্যায়ে শরীরে সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শিথিল হয়ে যায়। সমস্ত শারীরিক সঞ্চালন ‘ব্লকড’। স্লো-ওয়েভের ওপরে নতুন একটি ই-ই-জি সাইন চেপে বসে - আর,ই,এম বা র্যাপিড আই মুভমেন্ট।
আর,ই, এম ঘুমের পর্বটি কিছুক্ষণ স্থায়ী হয়। তারপর আবারও শুরু হয় স্লো-ওয়েভের একটি পর্ব। এভাবে ঘুমের সমস্ত সময়টায়, এরকম কয়েকবার পুনরাবৃত্তি ঘটে চক্রটির। ঘুম যত গভীর হয়, আর-ই-এম পর্বটির ততই দীর্ঘায়ন ঘটে। বিভিন্ন কগনিটিভ প্রসেসগুলোকে, সতেজ করে তোলার জন্য, আর-ই-এম কেই আপাতদৃষ্টে ঘুমের চক্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে হয়। আর-ই-এম ঘুমের অভাব হলে ক্লান্তি, খিটখিটে ভাব বা ইরিটেবিলিটি এবং ইমপেয়ার্ড জাজমেন্ট বা বিচারশক্তি কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সূত্র : ডেভিডসন্স মেডিসিন

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন