নিউরোলজির সহজ পাঠ : কিভাবে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশগুলোর মাধ্যমে আমাদের সমস্ত সত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়
স্কিনের ফাংগাল ইনফেকশান খুব একটা বিরল কিছু নয়। সংক্রমণটি দেখে অনেক সময় ভয় লাগলেও, এগুলোর পেছনে যে জীবসত্তাটি দায়ী থাকে সেটি চিনে ফেললে, এবং তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলেই ত্বকের এসব ফাঙ্গাল রোগ কোন বিষয়ই না।
ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আরও পড়ুন
কয়েকটি সাধারণ ফাংগাল ইনফেকশান
১। অ্যাথলেটস ফুট :
অ্যাথলেটস ফুট, ত্বকের একটি সাধারণ ফাংগাল ইনফেকশান। বেশ ছোঁয়াচেও বটে। ডার্মাটোফাইট দলভুক্ত ফাংগাসরা এই চর্মরোগটির কারণ।
অ্যাথলেটস ফুটের ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানের চামড়া আঁশের মত হয়ে যায়। এই চামড়া শুষ্ক হয়ে খুশকির মত উঠেও আসে। সেই সাথে আক্রান্ত স্থানে চুলকানিও থাকে।
এই ফাংগাল সংক্রমণটিও সাধারণতঃ খালি পায়ে হাঁটেন এমন মানুষদের ক্ষেত্রে বেশী দেখা যায়। যেসব জায়গায় বেশী মানুষ পায়ে চলাফেরা করেন, সেখানেই এই ফাংগাসটি থাকতে পারে। ফাংগাসটির বিকাশের জন্য প্রয়োজন উষ্ণ পরিবেশ (কোন জুতার ভেতরটা যেমন হয়ে থাকে)।
নাম শুনেই বোঝা যায় অ্যাথলেটস ফুট সাধারণতঃ পা’কেই আক্রমন করে। তবে প্রাথমিক সংক্রমণের পরে এই ফাংগাস, শরীরের অন্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমন : কুঁচকি। সাধারণতঃ ত্বকের যে অংশগুলো একটু ভেজা এবং উষ্ণ, সেখানেই সংক্রমিত হতে পারে এই ফাংগাস।
ফাংগাল ইনফেকশানের চিকিৎসা : অ্যাথলেটস ফুট
সাধারণতঃ মলম বা মুখে খাওয়ার পিল ব্যবহার করে এই ফাংগাল ইনফেকশানটির চিকিৎসা করা যায়। এসব মলম বা পিল সাধারণ ফার্মেসীতেই পাবেন। ক্রিম বা পিলগুলোতে : ইট্রাকোনাজোল, ফ্লুকোনাজোল অথবা টার্বিনাফিন- কোন একটি উপাদানগুলো থাকবে। চিকিৎসকের পরামর্শ সাপেক্ষে ঔষধ ব্যবহার করবেন।
২। জক-ইচ ( টিনিয়া ক্রুরিস):
এই ফাংগাল ইনফেকশানটিও ডার্মাটোফাইট ঘটিত। কুঁচকিকে আক্রান্ত করে এই চর্মরোগে। নারী-পুরুষ যে কেউই আক্রান্ত হতে পারেন। যদিও ছেলেদের ক্ষেত্রেই বেশী দেখা যায় এই ফাংগাল সংক্রমনটি।
এধরণের স্কিন ফাংগাসের ক্ষেত্রে, কুঁচকি ও এর আশেপাশে একটি র্যাশ বা ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা দেয়। কুঁচকি ছাড়াও, পায়ের ওপরের অংশের ভেতরে দিকে এবং পায়ু অঞ্চলেও র্যাশ থাকতে পারে। তবে পেনিস এবং অন্ডকোষের থলি বা স্ক্রোটামে সংক্রমণটি ছড়ায় না সাধারণতঃ। ফুসকুড়িগুলোর মাঝখানটা লালচে-বাদামী বর্ণ ধারণ করতে পারে। ধারগুলোতে আঁশ উঠতে পারে, অথবা ফুলে যেতে পারে। চামড়ায় আঁশ-আঁশ হয়ে যাবে। চুলকাবে। এবং জ্বালা করবে। এমনকি এক পর্যায়ে তরলে পূর্ণ ফোস্কায় পরিণত হতে পারে।
অ্যাথলেটস ফুটের আক্রান্ত রোগীদের পরবর্তীতে জক-ইচে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা খুব বেশী দেখা যায়। এখানে অন্তর্বাসের ব্যবহারের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে। যেকারণে অন্তর্বাস পড়ার আগে মোজা পড়া একটা ভাল অভ্যাস।
ফাংগাসের চিকিৎসা : টিনিয়া ক্রুরিস
আক্রান্ত স্থানে ক্রিম ব্যবহার করা হয়। এসবে ফাংগাল বিধ্বংসী একটি বা দুটি উপাদান থাকতে পারে। যেমন : অ্যালিল্যামাইন বা অ্যাযোল ড্রাগসমূহ। অ্যালিল্যামাইনগুলো কাজ করে দ্রুত। তবে অ্যাযোলগুলোর চেয়ে এসব ড্রাগের দাম আবার কম।
৩। রিংওয়ার্ম (টিনিয়া করপোরিস) :
রিংওয়ার্ম একটি সুপারফিশিয়াল ফাংগাল ইনফেকশান। অর্থাৎ ত্বকের ওপরিভাগকে আক্রমণ করে শুধু। সাধারণতঃ হাত-পা ও বিশেষ করে চুল বা পশমহীন স্থানগুলোতে এই চর্মরোগটি প্রকাশ পায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে শরীরের যেকোন স্থানেই রিংওয়ার্ম সংক্রমণ হতে পারে।
অ্যাথলেট ফুট ও জক-ইচের সাথে উল্লেখযোগ্য একটি পার্থক্য হচ্ছে, রিংওয়ার্ম সাধারণতঃ মেয়েদেরকেই বেশী আক্রমণ করে। আগের দুটি চর্মরোগ ছিল ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রধান। অন্য মানুষ, পশু যেমন কুকুর বিড়াল থেকে এই ফাংগাল ইনফেকশানটি পেতে পারেন আপনি। আবার বিভিন্ন জড়বস্তু , যেমন কাপড়, বা তোয়ালের ব্যবহার থেকেও রিংওয়ার্মের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
একিউট টিনিয়া কর্পোরিস, দ্রুত শুরু হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। চামড়ায় লাল লাল ফুসকুড়ির মত ক্ষত এবং দাগ দেখা দেয়। ক্রনিক টিনিয়া কর্পোরিস দেখতে অন্যরকম। এটি ছড়াবে ধীরে। ক্ষতগুলো দেখতে তেমন গুরুতর নয়।
ফাংগাল ইনফেকশানের ঔষধ : রিংওয়ার্মের চিকিৎসা
সাধারণতঃ আক্রান্ত স্থানে এন্টি-ফাংগাল ক্রিম ব্যবহার করে রিংওয়ার্মের চিকিৎসা করা হয়। রিংওয়ার্মের বিরুদ্ধে ফার্মেসী দোকানে যে ড্রাগগুলো পাবেন- ক্লট্রিমাজোল, মাইকোনাজোল, টারবিনাফিন। এই উপাদানগুলোর ক্রিম আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন।
আরও গুরুতর ক্ষেত্রে, ডাক্তারের প্রেসক্রিশপান অনুযায়ী ঔষধ নিন।
মাইকোনাজোল কি ধরণের ঔষধ? জানতে পড়ুন
৪। টিনিয়া ভেসিকালার :
টিনিয়া ভার্সিকালার, এই ফাংগাল ইনফেকশানটি শরীরের ওপরের অংশকে আক্রান্ত করে। অর্থাৎ, বুক ও পিঠ। তবে অনেক সময় গলা ও হাতের ওপরের অংশেও দেখা যায়। লক্ষ্য করবেন যে, এখানে যে ফাংগাল সংক্রমণগুলোর কথা বলা হচ্ছে, তার বেশীরভাগের আগেই ‘টিনিয়া’ শব্দটি যুক্ত। টিনিয়া দিয়ে ডার্মাটোফাইটদের নির্দেশ করে। ডার্মাটোফাইটদের ভেতরে অনেক ধরণের ফাংগাসই রয়েছে। তন্মধ্যে একটি মাত্র প্রজাতি শরীরের বিভিন্ন অংশকে আক্রান্ত করতে পারে, এবং ভিন্ন ভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে চামড়ায়।
টেনিয়া ভার্সিকালারের ক্ষেত্রে ত্বকের জায়গায়-জায়গায় রঙ পাল্টে যায়। এর কারণে ছোট ছোট ফুটকি মিলে এই জায়গাগুলিতে দাগের সৃষ্টি করে। দাগগুলোর কারণে আক্রান্ত জায়গাকে ত্বকের স্বাভাবিক রঙের চেয়ে গাঢ় বা ফ্য়াকাশে দেখাতে পারে। এই দাগগুলো সাদা, বাদামী, তামাটে বা গোলাপী বর্ণের হয়।
অনেকে ট্যানিং করে এই দাগ থেকে মুক্তির কথা ভাবতে পারেন। লাভ নেই। কারণ ফাংগাসের কারণে কখনই দাগগুলোর ত্বকের বাকী রঙের সাথে মিশতে পারবে না।
এধরণের ফাংগাস সাধারণতঃ শরীরের ওপরের অংশের তৈলাক্ত অংশগুলোতে যুক্ত হয়ে থাকে। এর ফলে ত্বক শুকনো আঁশ হয়ে উঠে আসতে পারে। সাথে চুলকানিও থাকতে পারে।
ত্বকের ফাংগাসের চিকিৎসা : টিনিয়া ভের্সিকালার
এই রোগে সাধারণতঃ যেসব চিকিৎসায় ফল পাওয়া যায়, তার মধ্যে অন্যতম এন্টিফাংগাল লোশান ও ক্রিম। অনেকক্ষেত্রে চিকিৎসক আপনাকে পিলও খেতে দিতে পারেন। ক্রিম বা পিলের যে ফাংগাস বিরোধী ড্রাগগুলি থাকে : কিটোকোনাজোল, ইট্রাকোনাজোল, ফ্লুকোনাজোল।
তবে, রাতারাতি কোন উপকার আশা করবেন না চিকিৎসা থেকে। টিনিয়া ভের্সিকালার পুরোপুরি সেরে যেতে কয়েক সপ্তাহ কি কয়েক মাসও লাগতে পারে।
৫। ক্যান্ডিডিয়াসিস :
ক্যান্ডিডা একপ্রকার ইস্ট। এটি সাধারণতঃ মানুষের মুখের ভেতরে, পরিপাকতন্ত্রে বা যোনিতে থাকে। এটি শরীরের ওপরিভাগে বা অভ্যান্তরে, দুই জায়গাতেই সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।
অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে ক্যান্ডিডিয়াসিস হতে পারে। কারণ যে ব্যাক্টেরিয়া ক্যান্ডিডাকে শরীরে দমন করে রেখেছিল, সেটি হয়তো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রকোপে মরে গিয়েছে।
এই ফাংগাল ইনফেকশানে শরীরের বিভিন্ন ভেজা অংশ আক্রান্ত হয়। যেমন বগল, পায়ের আঙুলের মাঝখান, মেয়েদের ক্ষেত্রে স্তনের নীচের অংশ, পায়ু অঞ্চল এই সবখানেই ক্যান্ডিডিয়াসিস হতে পারে। জক ইচের সাথে এর একটি ব্যাতিক্রম আছে। জক-ইচ সাধারণতঃ পেনিসে ছড়ায় না। কিন্তু ক্যান্ডিডিয়াসিস পেনিসে, বিশেস করে যেসব পুরুষের সারকামসিশান করা নেই, তাদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
শারীরিক স্থূলতাও এই ফাংগাল ইনফেকশানের একটি কারণ। কারণ চর্বিবহুল শরীরে ভাজ পড়ে বেশী। এই ভাজগুলি উষ্ণ ও ভেজা স্থান হওয়ায়, ফাংগাস জন্মানোর আদর্শ পরিবেশ প্রদান করে । বাইরের ত্বক বাদেও, মুখের ভেতর বা যোনিতে , ক্যান্ডিডার সংক্রমণ হতে পারে। তখন এটিকে বলা হয় ইস্ট ইনফেকশান।
ক্যান্ডিডা ইস্টের অনেকগুলো প্রজাতি দিয়েই এই সংক্রমণটি হতে পারে। শরীরের কোন অংশ আক্রান্ত সেই ভিত্তিতে সংক্রমণের চেহারা ভিন্ন ভিন্ন হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লালচে ফুসকুরির মত থাকে। সাথে স্ফীত পানি ভরা ফোস্কা এবং ক্ষত থাকবে। সাদা বর্ণের একটি ঘন রসের নিঃসরণ থেকে সহজেই ক্যান্ডিডাকে চিনে নেয়া যায়। পায়ের ক্ষেত্রে ক্যান্ডিডাকে অনেকটা অ্যাথলেটস ফুটের মত দেখায়। আক্রান্ত স্থানের চামড়া আঁশ উঠে আসবে, এবং ফেটে যাবে (ফিশার তৈরী হবে)।
ত্বকের ফাংগাল ইনফেকশানের চিকিৎসা :ক্যান্ডিডিয়াসিস
অন্যান্য ডার্মাটোফাইট সংক্রমণের মতই, ক্যান্ডিডিয়াসিসকেও এন্টি-ফাংগাল ক্রিমের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। যেমন : টপিকাল ক্লট্রিমাজোল, টপিকাল নিস্ট্যাটিন, ফ্লুকোনাজোল, টপিকাল কিটোকোনাজোল। ফার্মেসী থেকে এসব ক্রিম কিনে ব্যবহার করতে পারেন। তবে চিকিৎসকের কাছ থেকে নিশ্চিত না হয়ে কোন ড্রাগ ব্যবহার করা সমীচিন নয়।



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন