ফার্মাকোডিনামিক্স
ড্রাগের টার্গেট এবং কাজের কৌশল
ড্রাগ এবং রিসেপ্টারের আন্তঃক্রিয়ার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি নীচে বর্ণণা করা হল ।এসব বৈশিষ্ট্য ড্রাগের ইফেক্ট নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
➕ Affinity( অ্যাফিনিটি অর্থ তীব্র অনুরাগ বা আসক্তি) :
এ্যাফিনিটি ড্রাগের একটি বৈশিষ্ট্য।কোন নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে একটি ড্রাগের। প্রবণতাটি সেই ড্রাগের এ্যাফিনিটি। দুটি বিষয়ের ওপর এই বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে।একটি ‘মলিকুলার ফিট’। অর্থাৎ পারমাণবিক পর্যায়ে পরস্পরের সাথে মাননসই হওয়া। দ্বীতিয়, রাসায়নিক বন্ধনটির শক্তি। কিছু কিছু ড্রাগ-রিসেপ্টার ইন্টারেকশান বা মিথস্ক্রিয়া irreversible।অর্থাৎ মিথস্ক্রিয়ার পূর্বের অবস্থায় ফেরা সম্ভব হয় না। তার একটি কারণ হতে পারে এ্যাফিনিটি খুব বেশী শক্তিশালী। অথবা মলিকুলার টার্গেটে যুক্ত হয়ে ড্রাগ সেটির গঠন পাল্টে দিয়েছে।
➕ Selectivity (বাছাই-প্রবণতা) : ড্রাগের জন্য (ধরা যাক) দুটি টার্গেট রয়েছে। ড্রাগ যেকোন একটির সাথে যুক্ত হয়। দুটো টার্গেটের মাঝে বেছে নেয়ার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় ড্রাগটির। এটি ঐ ড্রাগের সিলেকটিভিটি। সিলেকটিভিটি একটি আপেক্ষিক পরিভাষা। “ এ্যবসোলিউট স্পেসিফিটি”-র সাথে মিলিয়ে ফেলা যাবে না। প্রায়ই একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন। রিসেপ্টরের কোন নির্দিষ্ট সাবটাইপের উদ্দেশ্যে একটি ড্রাগ ব্যাবহার করা হল। উক্ত রিসেপ্টর বাদে অন্য সাবটাইপগুলিতেও ড্রাগটির প্রভাব লক্ষ্য করা গেল। যেমন β-adrenoceptors। noradrenaline (norepinephrine) একটি এন্ডোজেনাস এগোনিস্ট ( দেহাভ্যন্তরে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তৈরী হয় )। তার বিপরীতে বিটা-এড্রেনোসেপ্টার প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। এই প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে তাদের সাব-টাইপ করা হয় : বিটা-টু এড্রেনোসেপ্টারের সাথে যুক্ত হয় নরএড্রেনালিন। ফলাফল ব্রঙ্কোডাইলেশান ( ফুসফুসের ব্রঙ্কাই ও ব্রঙ্কিওলকে শিথিল করে। শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট কমে যায়)। ওদিকে বিটা-ওয়ান এড্রেনোসেপ্টারের সাথেও যুক্ত হয় এড্রেনালিন। ফলাফল অস্বাভাবিক দ্রুত হৃৎস্পন্দন। ট্যাকিকার্ডিয়া। ট্যাকিকার্ডিয়া ঘটাতে যে পরিমাণ নর-এড্রেনালিন প্রয়োজন পড়ে, তার দশগুণ বেশী প্রয়োজন হয় ব্রঙ্কোডাইলেশানের জন্য ( বিটা-টু’র তুলনায় বিটা-ওয়ান অধিক প্রতিক্রিয়াশীল)। এখন ‘কার্ডিওসিলেকটিভ’ বিটা-ব্লকারের কথায় আসি। তাদের এন্টি-এনজাইনাল ইফেক্ট আছে। (হার্টের করোনারি আর্টারিকে শিথিল করে , প্রসারিত করে, ও রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে)। কিন্তু এনজাইনা প্রশমনের পাশাপাশি ফুসফুসে ব্রঙ্কোস্পাজমও ( ফুসফুসের অনৈচ্ছিক পেশীতে আচমকা সংকোচন ঘটে। ব্রঙ্কাই সংকুচিত হয়। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের জটিলতা দেখা দেয়) ঘটায় কার্ডিওসিলেকটিভ বিটা ব্লকার। যেকারণে এ্যাজমা রুগীর ক্ষেত্রে এই ড্রাগ ব্যাবহার করা হয় না।
➕Agonists : এ্যাগনিস্ট রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হয়। ফলে একটি conformational change ঘটে। অর্থাৎ প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক বিন্যাসে একটি পরিবর্তন ঘটে। একই সময়ে একটি জৈবিক প্রতিক্রিয়া বা বায়োলজিকাল রেসপন্স (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হ্রাস বা বৃদ্ধি) পাওয়া যায়। ধরা যাক, এ্যাগনিস্টের মাত্রা (কন্সেনট্রেশান) বাড়ছে। এ্যাগনিস্ট দখলকৃত রিসেপ্টরের অনুপাতও বাড়বে। ফলাফল - বায়োলজিকাল ইফেক্ট। পার্শিয়াল এ্যাগনিস্টও রিসেপ্টরকে কার্যকর করতে পারে। তবে ‘সিগন্যালিং-ইফেক্টটি’ প্রকট নয়। পূর্নাঙ্গ এ্যাগনিস্টের তুলনায় কম। পার্শিয়াল এ্যাগনিস্ট সমস্ত রিসেপ্টর দখল করে নিলেও এই ঘটনা ঘটাতে পারবে না।
➕ Antagonists : এ্যান্টাগনিস্ট রিসেপটরের সাথে যুক্ত হয় বটে। কিন্তু কনফরমেশানাল পরিবর্তন ঘটায় না। যেকারণে কোন ইন্ট্রাসেলুলার সিগন্যালও পাঠায় না কেউ। কিছু এ্যান্টাগনিস্ট প্রতিযোগিতাপ্রবণ। কম্পিটেটিভ এ্যান্টাগনিস্ট। এরা দেহাভ্যন্তরে সৃষ্ট প্রোটিনের (এন্ডোজেনাস লিগ্যান্ড) সাথে পাল্লা দেয়। উদ্দেশ্য থাকে রিসেপ্টার সাইট দখল করা। কি ধরণের এ্যান্টাগনিযম হবে তা কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন তূলামূলক এ্যাফিনিটি। কার রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা কেমন। এবং - শরীরে ড্রাগ ও লিগ্যান্ডের তুলনামূলক ঘনত্ব (relative affinities and concentrations)। কিছু এ্যান্টাগনিস্ট নন-কম্পিটিটিভ। তারা প্রতিযোগিতা এড়িয়ে চলে। রিসেপ্টর দখলের লড়াই-এ সরাসরি জড়িত হয় না। এদের পদ্ধতি ভিন্ন ( যেমন - post-receptor signalling কে প্রভাবিত করে।)
Dose-response relationship ( ড্রাগের মাত্রা ও প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক)
একটি চিত্রলেখ আঁকা যাক। আনুভূমিক তলে ড্রাগ-ডোজের লগারিদম ( বা সংবর্গমান)। উল্লম্ব বরাবর ড্রাগ-রেসপন্স। একটি বক্ররেখা পাওয়া যাবে। এটি ডোজ-রেসপন্স কার্ভ। রেখাটি সিগময়েড আকৃতির বা ইংরেজী ‘এস’ অক্ষরের মত।
ধরুন, ড্রাগের ডোজ ক্রমাগত বৃদ্ধি করা হচ্ছে ( বেশীর ভাগ ড্রাগের জন্য যেটি প্লাজমা ড্রাগ কনসেন্ট্রেশান বা রক্তরসে ড্রাগের ঘনত্বএর সমানুপাতিক)। তাতে রেসপন্সও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তবে এই ডোজের একটি range বা পরিসর রয়েছে। রেঞ্জটি তুলামূলক বিচারে যথেষ্ট সংকীর্ণ। একে অতিক্রম করা পর ডোজ বৃদ্ধি করেও তেমন কোন রেসপন্স পাওয়া যায় না। ড্রাগ-রেসপন্সের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিভিন্ন ড্রাগের মাঝে তুলনা করতে এরা সাহায্য করে :
➕Efficacy ( ফল প্রদানের ক্ষমতা ): কোন বাইন্ডিং-সাইটে ( ড্রাগ যেখানে যুক্ত হবে) সবগুলি রিসেপ্টর দখলকৃত। একটিও বাদ নেই। এই অবস্থায় ড্রাগটি কোন ‘টার্গেট-স্পেসিফিক রেসপন্স’ ( অভীষ্ট ফলাফল) যতটুক প্রদান করতে পারল - সেটিই তার এফিকেসি। অর্থাৎ ডোজ-রেসপন্স কার্ভে Emax। একটি পূর্নাঙ্গ এ্যাগনিস্ট (full agonist) সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়া (maximum response) প্রদান করে। রিসেপ্টরের সক্ষমতার পুরোটাই ব্যাবহৃত হয়। একই রিসেপ্টরে, আংশিক বা পার্শিয়াল এ্যাগনিস্ট কম কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করে। Therapeutic efficacy অর্থ রোগ নিরাময়ে ড্রাগটি কতটা ফলপ্রসূ। মানবশরীরে কোন আকাঙ্ক্ষিত ফলাফলের ( desired biological endpoint) ওপর ড্রাগের প্রভাবকে বর্ণণা করে থেরাপিউটিক ইফিকেসি। ভিন্ন ভিন্ন ফার্মাকোলজিকাল কৌশল ব্যাবহার করে কাজ করে এমন একাধিক ড্রাগের মাঝে তুলনার স্বার্থে ‘থেরাপিউটিক এফিকেসি’ ব্যাবহার করা যায়। যেমন , loop diuretics শক্তিশালী diuresis (মূত্রবর্ধন) তৈরী করে। thiazide diuretics তার তুলনায় কম সক্ষম। সুতরাং লুপ ডাই-ইউরেটিক্সের ‘থেরাপিউটিক এফিকেসি’ বেশী।
➕ Potency (সক্ষমতা) : পোটেন্সি বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট রেসপন্স তৈরীর জন্য ড্রাগটির প্রয়োজনীয় পরিমাণ। যেসব ড্রাগ বেশী পোটেন্ট, কম ডোজেই তাদের ফলাফল (বায়োলজিকাল ইফেক্ট) তৈরী হয়। সুতরাং তাদের ED50 কম। একটি ড্রাগ হয়ত কম পোটেন্ট। অর্থাৎ সক্ষমতা কম। তথাপি ডোজ বাড়িয়ে দিলেই সে সমতুল্য ফল প্রদান করতে পারে। অর্থাৎ এফিকেসি বা কার্যক্ষমতা একই সমান।
সব রোগীর জন্য ডোজ-রেসপন্সের সম্পর্কটি একরকম নয়। কারণ ফার্মাকোকিনেটিক্স এবং ফার্মাকোডিনামিক্সের নির্ধারকগুলিতে বহু বিভিন্নতা বিরাজমান। ক্লিনিকাল প্র্যাকটিসের সময়ও ঔষধ প্রদানকারী প্রত্যেক রোগীর জন্য একটি করে ডোজ-রেসপন্স কার্ভ আঁকতে পারছেন না। যেকারণে একটি সর্বজনবিদিত “ রেঞ্জ অফ ডোজ” ব্যাবহার করা হয়। এই রেঞ্জেই লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয় বেশীরভাগ ড্রাগ। প্রত্যাশা করা হয়, অধিকাংশ রোগীর জন্যে ডোজের পরিসরটি ডোজ-রেসপন্স কার্ভের শীর্ষভাগের আশেপাশেই থাকবে। তবে তার চেয়ে কমেও আকাঙ্ক্ষিত থেরাপিউটিক এফিকেসি পাওয়া সম্ভব অনেকসময়। পরিমাণটি হতে পারে রিকমেন্ডেড রেঞ্জের একদম সর্বনিম্ন মানের কাছাকাছি বা তার চেয়েও কম।
থেরাপিউটিক ইনডেক্স -থেরাপিউটিক সূচক - নিরাময় সূচক
ড্রাগের উপকার ( বেনিফিসিয়াল ইফেক্ট) গুলির সম্পর্ক ডোজের সাথে। একই ভাবে ড্রাগের অধিকাংশ বিরূপ ফলাফল ( এডভার্স ইফেক্ট) গুলিও ডোজ নির্ভর। তবে এডভার্স-ইফেক্টের ক্ষেত্রে ডোজ-রেসপন্স কার্ভটি একটু ভিন্ন আচরণ করে। রেখাটি সাধারণতঃ ডানদিকে সরে যায়। থেরাপিউটিক ইনডেক্স একটি অনুপাত। দুটি বিষয়ের ED50 হিসেব করা হয়। ড্রাগটির থেরাপিউটিক ইফিকেসি।( অর্থাৎ যে মাত্রায় ড্রাগটির সম্ভবপর সর্বোচ্চ লাভজনক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়)। এবং যে মাত্রায় ব্যাবহারে কোন একটি মারাত্নক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় (major adverse effect)। পরীক্ষাধীন জনগণের পঞ্চাশ ভাগে ( ED50) দুটি বিষয় যে দুই ডোজে প্রকাশ পায় তাদের অনুপাতটিই নিরাময় সূচক। বাস্তবে ড্রাগের বিরূপ প্রতিক্রিয়া একটি নয়। একটি ড্রাগের অসংখ্য এডভার্স ইফেক্ট থাকতে পারে। তবে থেরাপিউটিক ইনডেক্সের বিবেচ্য এমন ধরণের এডভার্স ইফেক্ট - যেগুলির জন্য ড্রাগের ডোজ কমিয়ে দেয়ার বা ব্যাবহার বন্ধ করার প্রয়োজন হয়। অধিকাংশ ড্রাগের থেরাপিউটিউক ইনডেক্স একশ’র বেশী। ( অর্থাৎ যে ডোজে কার্যকারিতা পাওয়া যায়, এবং যেই ডোজে ক্ষতি হয়, তাদের মাঝে যথেষ্ট দূরত্ব আছে)। তবে কিছু ড্রাগ রয়েছে যাদের ক্ষেত্রে মান দশের কম। যেমন - ডিগোক্সিন, ওয়ারফারিন, ইনসুলিন, ফেনিটয়িন, ওপি-অয়েডস। এদের ব্যাবহার প্রতিটি রোগীর জন্য ভিন্ন।
ড্রাাগগুলির ডোজ বারবার মাপতে হয়, এবং অ্যাডজাস্ট করতে হয় (টাইট্রেশান)। এভাবে ড্রাগ ব্যাবহারের সবচেয়ে চমৎকার ফলাফল পাওয়া যাবে। একই সাথে বিরূপ প্রতিক্রিয়াগুলির সম্মুখীনও হতে হবে না।
Drug metabolism (ড্রাগ মেটাবলিযম)
ড্রাগ মেটাবলিযম একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার ড্রাগের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। ড্রাগকে লিপিড-সলিউবল ফর্ম থেকে ওয়াটার-সলিউবলে পরিণত করা হয়। লিপিড সলিউবল গুণটি ড্রাগের এ্যাবসর্পশান বা কোষে ও কলায় প্রবেশের জন্য উপযুক্ত। ওয়াটার-সলিউবল রূপটি এক্সক্রিশানের জন্য জরুরী। কিছু ড্রাগকে ‘প্রো-ড্রাগ’ বলা হয়। এরা নিষ্ক্রিয় ফর্মে শরীরে প্রবেশ করে। কিন্তু দেহাভ্যান্তরে (in vivo) একটি সক্রিয় মেটাবোলাইটে রূপান্তরিত হয়। মেটাবলিযমের দুটি ফেয বা দশা।
ফেয ওয়ান এ ঘটে অক্সিডেশান, রিডাকশান, এবং হাইড্রোলাইসিস। ফলাফলে, ড্রাগের অণুটি দ্বীতিয় দশার বা ফেয-টু’র জন্য প্রস্তুত হয়। ফেয-ওয়ান এর সবচেয়ে সাধারণ বিক্রিয়া অক্সিডেশান। বিক্রিয়ার সাথে একটি প্রধান এনজাইম জড়িত। সাইটোক্রোম পি ফোর ফিফটি ফ্যামিলি অফ মেমব্রেন বাউন্ড এনজাইম। হেপাটোসাইটের এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে আসে এই এনজাইম। এরপর ফেয-২। এখানে ফেয-১ এর বিক্রিয়ালব্ধ মেটাবোলাইট শরীরের মধ্যকার কোন বিক্রিয়ক বা এন্ডোজেনাস সাবসট্রেট এর সাথে যুক্ত হয়। গঠিত হয় একটি ইনএকটিভ (নিষ্ক্রিয়) কনজুগেট। নতুন তৈরী হওয়া এই যৌগিক উপাদানটি অনেক বেশী পানিতে-দ্রবণীয় বা ওয়াটার-সলিউবল। ফেয-২ তে যে বিক্রিয়াগুলি ঘটে - glucoronidation, Sulphation, acetylation, methylation এবং glutathione এর সাথে কনজুগেশান। রেনাল এক্সক্রিশান বা কিডনীর মাধ্যমে শরীর থেকে ড্রাগের উচ্ছিষ্টাংশ বা মেটাবোলাইট বের করে দেয়ার ক্ষেত্রে এটি অত্যান্ত জরুরী। অর্থাৎ, ওয়াটার-সলিউবল মেটাবোলাইট তৈরী হতেই হবে। কারণ মেটাবলাইট লিপিড-সলিউবল হলে গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশানের সময় আবারও ডিফিউশানের মারফত শরীরে ঢুকে পড়বে।
Drug excretion ( শরীর থেকে ড্রাগের নিষ্ক্রান্তি)
এক্সক্রিশান-ও একটি প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে ড্রাগ এবং তাদের মেটাবলাইটগুলি শরীর থেকে বের করে দেয়া হয়।
রেনাল-এক্সক্রিশানই শরীর থেকে ড্রাগ বের করে দেওয়া বা এলিমিনেশানের প্রধান রাস্তা। এপথে সাধারণতঃ যেসব ড্রাগ এবং মেটাবলাইট বের হয় তাদের আণবিক ভর কম ( low molecular weight)। এবং যথেষ্ট পরিমাণে ওয়াটার-সলিউবল (পানিতে দ্রবণীয়)। যাতে, রেনাল টিবিউল থেকে সে পুনরায় শরীরে প্রবেশ ( reabsorption) না করে। প্লাজমা-প্রোটিনের সাথে যুক্ত ড্রাগগুলি গ্লোমেরুলাই-এর মাধ্যমে ফিল্টার হয় না। ইউরিনের পি-এইচ রক্তরসের তুলনায় বেশী এসিডিক। যেকারণে ইউরিনে কিছু ড্রাগ ( যেমন স্যালিসাইলেট ) আন-আয়নাইজড হয়ে যায়। এবং রি-এ্যাবসর্বড হওয়ার প্রবণতা ( টেন্ডেন্সি) থাকে। ইউরিনের এ্যালকালাইনেশান, এক্সক্রিশানের গতি বাড়িয়ে দিতে পারে ( যেমন : স্যালিসাইলেট ওভারডোজের পরে)। কিছু ড্রাগসের ক্ষেত্রে glomerular-filtration, elimination এর প্রধান উপায় নয়। যেমন : মেথোট্রেক্সেট, পেনিসিলিন।
এই ড্রাগগুলির জন্য এক্সক্রিশানের প্রধান উপায় (predominant mechanism) proximal tubule lumen এ একটিভ সিক্রেশান। কিছু ড্রাগের মলিকুলার ওয়েট অনেক বেশী। এদের এক্সক্রিশানের প্রিডমিনেন্ট মেকানিযম faecal exceretion। কিছু ড্রাগ লিভারে গ্লুকোরোনাইডের সাথে যুক্ত হওয়ার পর বাইলে এক্সক্রিট হয়। এদের এলিমিনেশানের প্রধান উপায়ও ফিকাল এক্সক্রিশান। তাছাড়া enteral adminstration এর পর এবসর্ব হতে পারে নি এমন যেকোন ড্রাগের ফিকাল এক্সক্রিশান হয়। দেখা যাচ্ছে, কিছু ড্রাগ অণু বাইলে নিঃসরিত হয়। এই অণুগুলি স্মল-ইন্টেসটাইনে প্রবেশ করে। যথেষ্ট লিপিড-সলিউবল হলে তারা gut-wall থেকে রি-এবসর্ভ হয়ে আবারও লিভারে ফিরে যাবে পোর্টাল-ভেইনের মাধ্যমে। লিভার, বাইল, গাট এবং পোর্টাল ভেইনের মধ্যকার এই রি-সাইক্লিং বা পুনঃপৌনিক চক্রটিকে বলে “ এন্টারোহোপাটিক সার্কুলেশান”। এন্টারো-হেপাটিক সার্কুলেশানের দরুণ শরীরে একটি ড্রাগের স্থায়িত্বকাল দীর্ঘায়িত হতে পারে।
এলিমিনেশান কিনেটিক্স ( নিষ্কাশন সম্পর্কিত গতিবিদ্যা)
রক্তপ্রবাহ বা সার্কুলেশান থেকে ড্রাগের মোট রিমুভাল বা অপসারণ দুটি বিষয়ের একত্রকরণ ( কমন্বিনেশান) এর ফলাফল। - ড্রাগের মেটাবলিযম এবং এক্সক্রিশান। একে সাধারণতঃ “ক্লিয়ারেন্স” শব্দটি দিয়ে বর্ণণা করা হয়। অর্থাৎ, যে পরিমাণ রক্তরস (volume of plasma) প্রতি ইউনিট সময়ে (per unit time) ড্রাগটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হচ্ছে (cleared)।
অধিকাংশ ড্রাগের জন্য এলিমিনেশান একটি High-capacity process। অর্থাৎ প্রক্রিয়াটি পরিচালনার জন্য উচ্চ সক্ষমতার প্রয়োজন। যেকারণে কখনই এটি অতিশায়িত রূপ নেয় না। এমনকি হাই-ডোজেও না। এখানে ‘ল অফ ম্যাস একশান’ কার্যকর হয়। অর্থাৎ রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বিক্রিয়কদের ঘনত্ব বা কনসেন্ট্রেশানের সমানুপাতিক। তাই, এলিমিনেশানের গতি ড্রাগের মাত্রার সরাসরি সমানুপাতিক। ড্রাগের কনসেন্ট্রেশান বেশী (higher drug concentration) হলে মেটাবলিক রিএকশানগুলির গতিবৃদ্ধি (higher metabolic rates) পাবে। এবং রেনালফিলট্রেশানের বর্ধিত গতিকেও সমর্থন করবে। ফলাফল একটি “ ফার্স্ট অর্ডার কিনেটিক্স”। অর্থাৎ, যেকোন নির্দিষ্ট সময়ে (given time) সার্কুলেশানে ঐ মুহুর্তে রয়ে যাওয়া বা বিদ্যমান ড্রাগের (drug remaining) কতটুকু এলিমিনেটেড হবে তা ধ্রুব। অর্থাৎ একটি ‘কনসট্যান্ট ফ্র্যাকশান’ ( নির্দিষ্ট অপরিবর্তনশীল ভগ্নাংশ ) এলিমিনেটেড হয়। এবং সময়ের সাথে রক্তে ড্রাগের ঘনত্বের কমে যাওয়ার গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে (exponential)। এই এলিমিনেশান বা অপসারণকে বর্ণণা করা হয় ড্রাগটির “হাফ-লাইফ” হিসেবে। t1/2। অর্থাৎ প্লাজমা ড্রাগ কন্সেন্ট্রেশান বা রক্তরসে ড্রাগটির ঘনত্ব অর্ধেক হতে যে ‘সময়’ লাগে। ড্রাগ এলিমিনেশানের পুরো প্রক্রিয়াকালে হাফ-লাইফ ধ্রুব থাকে। এই ঘটনাটির একটি গুরুত্ব আছে প্রেসক্রাইবারদের কাছে। প্লাজমা কনসেন্ট্রেশানের ওপর ইনক্রিজিং-ডোজের প্রভাবটি প্রেডিকটেবেল বা পূর্বানুমানযোগ্য। ধরুন ডোজ দ্বিগুণ করে দেয়া হল। এর ফলে কনসেন্ট্রেশানও সকল টাইম-পয়েন্টে দ্বিগুণই থাকবে।
নিত্যই ব্যবহার হচ্ছে এমন কিছু ড্রাগ যেমন phenytoin, alcohol, এদের এলিমিনেশান ক্যাপাসিটি বা অপসারণের সক্ষমতাটি মাত্রাতিরিক্ত ( saturated)। সাধারণ ডোজ রেঞ্জের ভেতরেই এমনটি ঘটে থাকে। একে বলে “ জিরো অর্ডার” কিনেটিক্স। প্রেসক্রাইবারদের জন্য এর গুরুত্বটি (significance) হল, যে হারে ড্রাগ শরীরে প্রবেশ করবে (rate of adminstration) সেটি যদি অপসারণের হারের ( maximum rate of elimination) তুলনায় বেশী হয় তাহলে শরীরে ধীরে ধীরে ড্রাগটি জমা হতে থাকে (accumulate progressively)। যার ফলাফল হবে ভয়াবহ বিষময়তা (serious toxicity)।






কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন