চিকিৎসাবিজ্ঞানে জিনতত্ত্বের গুরুত্ব প্রতিদিনই বাড়ছে। আগামী দিনগুলোতে জিন ভিত্তিক প্রযুক্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলবে এমন সম্ভাবনা দেখা যায়। জিনতত্ত্বের প্রধান প্রসঙ্গগুলো এখানে একত্রিত করা হল।
জিন : ডিএনএ, ক্রোমাটিন এবং ক্রোমোজোম
➕ জিন হচ্ছে কিছু কার্যকরী একক (functional units) যারা একটি double stranded deoxyriboneucleic acid (DNA) -র মাঝে সংকেত হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকে , ক্রমোজোম হিসেবে একত্রে সন্নিবিষ্ট হয় এবং অবস্থান নেয় l কোষের নিউক্লিয়াসের ভেতর : nucleus কোষের ভেতর একটি ঝিল্লী-বদ্ধ অঞ্চল যেটি erythrocyte এবং platelet ব্যাতীত সবধরণের কোষেই পাওয়া যায়।
➕ ডিএনএর মাঝে একটি রৈখিক বিন্যাসে ( linear sequnence) মাত্র চারটি base সাজানো থাকে (consist of) : adenine (A) , cytosine ( C ), thymine (T), guanine (G)। ডিএনএ এবং বেয নিয়ে একটি “ double helix ” , একটি মোচড়ানো মইয়ের মত কাঠামো গঠিত হয়।
➕পরস্পর পরিপূরক ( two complementary strands of DNA) দুটি ডিএনএ স্ট্র্যাডকে মইয়ের দুই পাশের দুটি রেখা ভাবা যেতে পারে। প্রতিটি স্ট্র্যান্ডের পরস্পর বিপরীত অবস্থানে থাকা দুটি বেয হাইড্রোজেন বন্ড দ্বারা সংযুক্ত হয়ে মইয়ের একেকটি সিড়ি গঠন করছে। এই সংযোগ শুধুমাত্র একটি A এবং T বেয, ও G এবং C বেয -এর মাঝে গঠন হওয়া সম্ভব। এর অন্যথা ঘটে না। ডিএনএ’র এই বৈশিষ্ট্যটি ( feature) গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলেই Faithful DNA replication সম্ভব হয়। জিন পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ ( interrogate the genome) এর জন্য যেসব প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয় তার প্রায় বেশীরভাগই জিনের এই বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
➕ ধরা যাক, একটি DNA double helix কে “ unzip” করা হল। প্রতিটি স্ট্র্যান্ড এখন একটি template। একে ব্যাবহার করে হুবহু অনুরূপ একটি স্ট্র্যান্ড (identical strand) সৃষ্টি করা যাবে।
➕ Human genome -এর মাত্র একটি কপিতেই প্রায় ৩.১ বিলিয়ান ডিএনএ বেয পেয়ার থাকে। যেই প্রোটিন গুলিতে এরা জড়ানো থাকে তাদের বলে Histone। চারটি ভিন্ন ধরণের হিস্টোনের চতুর্পাশে জড়ানো ১৪৭ টি বেয পেয়ারকে একত্রে বলা হয় nucleosome। ধারাবাহিক বিন্যস্ত কতগুলি নিউক্লিওসোম (sequences of nucelosome, দেখতে পুঁতির মালার মত ) একত্রে মুড়িয়ে, প্যাকেজ করে গঠিত হয় একটি Chromatin । শক্তভাবে মোড়ানো, নিবিড় সন্নিবেশিত ক্রোমাটিনকে বলে heterochromatin। আরেকটু আলগাভাবে সন্নিবেশিত ক্রোমাটিনকে বলে euchromation। ক্রোমাটিনের’র চূড়ান্ত সন্নিবেশিত রূপটিই ক্রোমোসোম।
➕ মানুষ একটি ডিপ্লয়েড জীবসত্তা। অর্থাৎ নিউক্লিয়াসে জিনোমের দুটি কপি থাকে। মাইক্রোস্কোপের নীচে ২৩ জোড়া ক্রমোজোম হিসেবে দৃশ্যমান হয় ( একে karyotype বলে )। ১ থেকে ২২ নম্বর ক্রোমোসোমকে বলে Autosome। এখানে পরস্পর অনুরূপ একজোড়া ক্রোমোসোম থাকে । তেইশ তম পেয়ার বা জোড়াটি দুটি সেক্স ক্রমোজোম : মেয়েদের ক্ষেত্রে দুটি ‘ X’ chromose ছেলেদের ক্ষেত্রে একটি ‘ X’ এবং ‘ Y’ ক্রমোজোম। যেকারণে একটি স্বাভাবিক ফিমেল ক্যারিওটাইপকে লেখা হয় ‘ 46, XX’ এবং নর্মাল মেল ক্যারিওটাইপকে লেখা হয় ‘ 46, XY ’।
ডিনএনএ থেকে প্রোটিন কিভাবে হয়
➕জিন ক্রমোজোমের একটি কার্যকরী উপাদান । তারা ডিনএনএ টেমপ্লেটটি থেকে তথ্য প্রেরণে সক্ষম। Messenger ribonucleic acid (mRNA) তৈরীর মাধ্যমে তথ্য প্রেরণের কাজটি করে থাকে জিন। হিউমেন জিনোমে বিশ হাজারের বেশী জিন রয়েছে। যদিও তাদের অনেকগুলিই কোষ ভেদে নিষ্ক্রিয় বা নীরব (inactive or silenced)। বিভিন্ন কোষগুলি যে যার বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র (cell specific characteristics)। এবং সে জন্য দায়ী এই Variable gene expression।
➕ প্রচলিত পুরাতন মতবাদ অনুযায়ী প্রোটিন উৎপাদনের মৌলিক ধাপগুলি : transcription, splicing, translation, protein modification। যদিও এখন এটিকে বিবেচনা করা হয় অতি-সরলীকরণ হিসেবে। বাস্তবে প্রোটিন উৎপাদনের সাথে জিনের সম্পর্কটি এতটাও সরল নয়। একটি মাত্র জিন, প্রায় সময়ই ভিন্ন ভিন্ন প্রোটিনকে এনকোড করতে পারে। তথাপি প্রোটিন-প্রোডাকশানকে বুঝতে চাওয়ার সূচনা হিসেবে এই আলোচনা যথেষ্টই সহায়ক।
Transcription ( ট্রান্সক্রিপশান) :
➕ ডিএনএ টেমপ্লেট থেকে ribonucleic acid (RNA) উৎপাদনকে বলা হয় ট্রান্সক্রিপশান। ট্রান্সক্রিপশান শুরু হওয়ার জন্য একটি এনজাইম প্রয়োজন হয় - RNA polymerase।
➕ জিনের প্রারম্ভে একটি DNA segement এর সাথে আর-এন-এ পলিমারেজ যুক্ত হয় । এই ডিএনএ সেগমেন্টটি পরিচিত ‘ the promoter’ হিসেবে। যুক্ত হওয়ার পর ডিএনএ’র একটি স্ট্র্যান্ড বরাবর চলতে শুরু করে RNA polymerase। এর ফলে DNA template এর পরিপূরক ( complementary) একটি RNA molecule তৈরী হয়। Protein coding gene এর ক্ষেত্রে এই আর-এন-এ অণুটি messenger RNA (mRNA) হিসেবে পরিচিত। জিনের শেষপ্রান্তে একটি DNA sequence থাকে। একে বলা হয় The polyadenylation signal। এটি আর-এন-এ ট্রান্সক্রিপশান প্রক্রিয়ার সমাপ্তি রচনা করে।
➕ ডিএনএ’র সাথে আর-এন-এ তিনটি প্রধান ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়
- আর-এন-এ’র স্ট্র্যান্ড মাত্র একটি ( single - stranded)
- neucleotide এর আভ্যন্তরীণ sugar residue টি ribose
- এখানে thymine (T)-এর পরিবর্তে uracil (U) থাকে
➕RNA polymerase এর কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন transcription factor। ট্রান্সক্রিপশান ফ্যাক্টরগুলি মূলতঃ প্রোটিন। এরা promoter এর বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট ডিএনএ বিন্যাস- এর সাথে যুক্ত হয়। অথবা যুক্ত হয় বিভিন্ন enhancer elements এর সাথে। এনহান্সার এলিমেন্টগুলি প্রমোটার থেকে কয়েক হাজার বেয-পেয়ার দূরত্বে অবস্থান করতে পারে। Chromosomal DNA এর কিছু স্থানে loop থাকে। এই loop , enhancer এবং promoter এর মধ্যকার দূরত্ব হ্রাস করে। ফলাফলে bound protein গুলি interact করতে পারে একে অন্যের সাথে।
➕বিভিন্ন প্রকারের ১২০০ এর অধিক ট্রানসক্রিপশান ফ্যাক্টর এনকোডেড থাকে মানুষের জিনোমে। Transcription factors, promoters এবং enhancers এর মিউটেশান হতে পারে রোগ-ব্যাধির কারণ। যেমন , ব্লাড-ডিজঅর্ডার বা রক্তের রোগ alpha-thalassemia’র কথা ধরা যাক। সাধারণতঃ gene deletion এই রোগের কারণ। তবে একটি enhancer এর মিউটেশান ঘটার কারণেও এই রোগ হতে পারে। alpha-globin gene promoter থেকে দশ হাজার বেয-পেয়ার দূরত্বে এই এনহ্যান্সারটি অবস্থিত। তাতে মিউটেশান হলে, ট্রান্সক্রিপশান উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। ফলাফল আলফা-থ্যালাসেমিয়া।
➕ Gene activity বা expression বেশ কিছু জটিল- মিথস্ক্রিয়াশীল (complex interacting factors) উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। জিন প্রমোটারটি ট্রান্সক্রিপশান ফ্যাক্টরের নিকট কতটুকু accessibile সেটি অন্যতম বিবেচ্য। Cytosine molecule এর সাথে methyl group যুক্ত হয়ে (মিথাইলেশান) DNAএর পরিবর্তন (modify) ঘটাতে পারে। Promoter region এর ডিএনএ মিথাইলেশান ঘটলে ট্রান্সক্রিপশান বন্ধ হয়ে যায় (silenced)। কারণ methyl cytosine সাধারণতঃ transcription factor গুলির সাথে যুক্ত হয় না ( not available for binding)। Promoter accesibility ‘র নির্ধারক দ্বীতিয় একটি mechanism হল ক্রোমাটিনের কাঠামোগত বিন্যাস (structural configuration of chromatin)। open chromatin, যেটি euchromatin নামে পরিচিত, gene promoter গুলি RNA polymerase এবং transcription factor এর প্রতি accessible। যেকারণে ইউক্রোমাটিন transcriptionally active। এটি Heterochromatin এর তুলনায় যথেষ্টই ভিন্ন। হেটেরোক্রোমাটিন নিবিড় সন্নিবেশিত (densely packed) এবং ট্রান্সক্রিপশান প্রক্রিয়ায় নিষ্ক্রিয় (transcriptionally silent)। Histone protein tails -এ নির্দিষ্ট এমিনো এসিডের residue থাকে। এদের পরিবর্তন বা মডিফিকেশান ( যেমন মিথাইলেশান অথবা এসেটাইলেশান) এর ফলে ক্রোমাটিন কনফিগারেশান নির্ধারিত হয়।
➕ ডিএনএ এবং হিস্টোনের মডিফিকেশানকে বলা হয় ‘ epigenetic’ (‘ epi -’ অর্থ জিনোমের উর্ধ্বে )। কারণ, তারা ডিএনএ কোডের প্রাথমিক বিন্যাস (primary sequence) কে পাল্টায় (alter) না। তবে ক্রোমজোমের কার্যক্রমের ( chromosomal function) ওপর তাদের জৈবিক গুরুত্ব (biological significance) রয়েছে।
➕Abnormal epigenetic changes এর গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। কারণ দেখা গেছে, ক্যান্সারের আগ্রাসনে (events in progression of Cancer) এর ভূমিকা যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। Abnormal epigenetic change এর ফলে সাধারণ ভাবে নিষ্ক্রিয় কোন একটি জিনের (normally silenced genes) expression ঘটতে পারে। যার ফল হতে পারে ক্যান্সার কোষের অস্বাভাবিক পরিবর্তন এবং সংখ্যাবৃদ্ধি ( de-differentiation and proliferation)। একই সাথে অনেক therapeutic target তৈরী হয় এই পরিবর্তনগুলির ফলে। যেমন ধরা যাক, Vorinostat। এটি একটি histone de-acetylase inhibitor। cutaneous T-cell lymphoma’র চিকিৎসায় ভরিনোস্ট্যাট সফলতা প্রদর্শন করেছে। ভরিনোস্ট্যাট ব্যাবহারের ফলে টিউমারে পূর্বে নিষ্ক্রিয় (previously silenced) হয়ে পড়া কিছু জিন পুনরায় নিজেদের প্রকাশ (re-expression) করতে পারে। এই জিনগুলি কিছু ট্রানস্ক্রিপশান ফ্যাক্টরকে এনকোড করে। ফ্যাক্টর proliferation এর বদলে T-cell differentiation ঘটায়। ফলাফল tumor regression।
Normal genomic variation( জিন বিন্যাসের সাধারণ বিভিন্নতা) :
➕আমাদের সবার জিনোমেই ৫-৫০ মিলিয়ান variant থাকে। সাধারণতঃ প্রতি ৩০০ টি বেয পরপর এই বিভিন্নতার ঘটানটি দেখা যায়। এই ভ্যারিয়েন্টগুলি মূলতঃ polymorphism ( একই বস্তুর বিভিন্ন প্রকরণে বিদ্যমান হওয়া)। মোট জনসংখ্যা এক শতাংশেরও বেশী অংশে এই বিষয়টি পর্যবেক্ষন করা যায়। জিন বা কোষের ওপর তাদের প্রভাব নেই বা থাকলেও গ্রাহ্য করার মত নয় । কোন বড় ধরণের রোগের ঝুঁকির সাথে এর যোগ নেই।➕ হিউম্যান জিনোমের ৯৮-৯৯ শতাংশ গঠন করে exon ( rna splicing এর ফলে intron সরিয়ে দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে। চূড়ান্ত আর-এন-এ’র কোন অংশকে এনকোড করে exon) , intron (নন-কোডিং সিকোয়েন্স অফ জিন) অথবা intergenic regions গুলি। পলিমর্ফিযমের ঘটনাগুলি এই তিন অংশের যেকোনটিতে ঘটতে পারে। পূর্বে আলোচিত বিভিন্ন শ্রেনীর জেনেটিক ভ্যারিয়েন্ট (classes of genetic variant) সাধারণ পলিমর্ফিযম হিসেবে জিনোমে বিদ্যমান থাকে। তবে এর মাঝে সবচেয়ে বেশী পাওয়া যায় single neucleotide polymorphism বা SNP (উচ্চারণ স্নিপ)। SNP দিয়ে বোঝায় একটি মাত্র বেযের প্রতিস্থাপন (substitution of a single base)।
পলিমর্ফিযম এবং সাধারণ রোগ ব্যাধি
বিভিন্ন প্রচলিত রোগ-ব্যাধির সাথে কিছু প্রতিরক্ষামূলক এবং ক্ষতিকারক পলিমর্ফিযম জড়িত ( protective and detrimental polymorphisms)। Genome-wide association studies (GWAS) এর মাধ্যমে এদের শনাক্ত করা হয়েছে। বহু ডিরেক্ট-টু-কনজুমার টেস্ট ( স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য ব্যাতীতই ভোক্তা নিজের জেনেটিক তথ্য যে পরীক্ষার মাধ্যমে পেয়ে থাকেন) এর ভিত্তি জি-ডব্লিউ-এ-এস। বিভিন্ন সাধারণ রোগ ব্যাধি বা বৈশিষ্ট্যের (common diseases or traits) ক্ষেত্রে ব্যাক্তির ঝুঁকি নির্ণয়ের জন্য এই পরীক্ষাগুলি করা হয়। যেমন : কার্ডিওভাস্কুলার ডিযিয, ডায়াবেটিস এমনকি পুরুষদের মাথায় টাক পড়ার বিন্যাসটি পর্যন্ত নির্ণয় সম্ভব। একটি উদাহরণ হতে পারে SLC2A9 জিনে পলিমর্ফিযম। এই পলিমর্ফিযমটি সাধারণ জনতার একটি উল্লেখযোগ্য অংশে serum urate concentration এর variation কে ব্যাখ্যা করে। তাই নয় শুধু, “ high- risk” allele carrier দের gout-এর ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক করে দেয় (predispose)। তবে, বিদ্যমান বাস্তবতাটি এমন যে, মানুষের জিনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র ( full genomic landscape) এবং প্রতিরক্ষামূলক ও ক্ষতিকর পলিমর্ফিযমের এর পূর্ণ জ্ঞান অর্জন না করা পর্যন্ত, আমরা ঝুঁকিগুলি সঠিকভাবে অবধারণ করতে পারছি না।
এন-জি-এস প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ সমূহ
জেনোমিক প্রযুক্তিগুলি বিপুল সম্ভাবনাময়। আমাদের মেডিসিন চর্চার পথকে তারা পাল্টে দিতে পারে। দিন দিন DNA sequencing আরও দ্রুততা অর্জন করছে। খরচও কমছে। তাতে রোগ প্রতিরোধ , রোগ নির্ণয় এবং নিরমায়ের সুযোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমাগত। এতদসত্ত্বেও, জেনোমিক প্রযুক্তিগুলি চ্যালেঞ্জ মুক্ত নয়। যেমন ধরা যাক, এন-জি-এস বিপুল পরিমাণ ডেটা বা তথ্য উৎসারিত করে। এই তথ্যকে জমা করে রাখা একটি চ্যালেঞ্জ। আমাদের জেনোমিক কোডের A,C,T,G কে স্মার্টফোনের মেমোরিতে সংরক্ষণ সম্ভব। কিন্তু একজন ব্যাক্তির গোটা জিনোমকে সৃষ্টি ( জেনারেট) করার জন্য যে পরিমাণ ডেটার প্রয়োজন তাকে ধারণ করার জন্য দানবীয় কম্পিউটার দরকার পড়বে। যে কম্পিউটার বেশ কয়েক পেন্টাবাইট জমা করে রাখতে সক্ষম। যেখানে, এক পেন্টাবাইট অর্থ এক মিলিয়ান গিগাবাইট ডেটা। ধরা যাক, এই বিশালায়তন ডেটা-সেট গুলিকে সংরক্ষণ ও ব্যাবস্থাপনায় আমরা সফল হলাম। তখনও কয়েক মিলিয়ান সাধারণ ভ্যারিয়েন্টকে পর্যবেক্ষণ ও যাচাই বাচাই করার পরই ( sift through) একমাত্র আমরা হয়তো একটি ( বা বিরল ক্ষেত্রে একাধিক) রোগ সৃষ্টিকারী মিউটেশান (pathogenic, disease causing mutation) নির্ণয় করতে পারব। বিভিন্ন জটিল এলগোরিদাম প্রয়োগ করে এই কাজটি করা সম্ভব হয়তো। তারও একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকবে ( টু সাম এক্সটেন্ট)। তবে এরকম ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সময় এবং যথেষ্ট পরিমাণ দক্ষতা বা এক্সপার্টিয। তারপরও এগুলিকে অব্যার্থ বা ইনফেলিয়েবেল বলা যায় না। আরও ব্যাপার হল বায়োইনফরমেটিশিয়ানরা হয়তো এই তথ্যকে যাচাই-বাচাই করে পাঠিয়ে দিলেন। ক্লিনিশিয়ানরা সেই তথ্যগুলি নিয়ে একটি ঝামেলায় পড়তে পারেন। হয়তো দেখা যাবে কয়েকটি ভ্যারিয়েন্ট বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য নেই। যেকারণে তাকে প্যাথোজেনিক বা নন-প্যাথোজেনিক হিসেবে শ্রেণীকরণ করা ক্যাটেগোরাইয করা কঠিন হবে। এর অনেকগুলি কারণ রয়েছে। যেমন একটি হতে পারে ঐ নির্দিষ্ট জিন বিষয়ে আমরা যথেষ্ট জানি না। অথবা এই নির্দিষ্ট ভ্যারিয়েন্ট বিষয়ে পূর্বে কখনও রিপোর্ট করা হয় নি। অথবা কোন একজন unaffected parent এর মাঝে জিনটিকে হয়তো শনাক্ত করা গেছে। এই ভ্যারিয়েন্টগুলির বিশদীকরণ ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরী। এবং সাধারণতঃ এদের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে, ক্লিনিকাল প্রেজেন্টেশানের পরিপ্রেক্ষিতে, একজন জেনেটিক্স বিশেষজ্ঞের মতামতের প্রয়োজন হবে হয়তো। এখানে “ ইননোসেন্ট আন্টিল প্রোভেন গিল্টি” পন্থার অনুসরণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত বলা যায়, আমরা যদি সমস্ত জিনোমকে বা এমনকি এক্সোমকে পর্যবেক্ষণ করতে যাই কিছু ঘটনা প্রায় অনিবার্য। দেখা যাবে, প্রতিনিয়তই কিছু “ ইনসিডেন্টাল” বা সেকেন্ডারী ( গৌণ) ফাইন্ডিংস শনাক্তকৃত হবে। অন্য কথায় যেসব ফাইন্ডিংস প্রাথমিক ডায়গনোস্টিক কোয়েশ্চেনের সাথে সমন্ধীয় নয়। যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত এই ইন্সিডেন্টাল ফাইন্ডিংসের প্রতি রক্ষণশীল মনোভাব ( কনসার্ভেটিভ এপ্রোচ) কে উৎসাহিত করা হয়েছে।
--------------------------------------------------------------------------------
ডেভিডসন্স মেডিসিন অনুসারে





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন