আধুনিক মানুষের শ্বাসতন্ত্রের অন্যতম একটি জটিলতা “ ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারী ডিজিজ ” বা সিওপিডি। বাংলায় বলতে পারেন, যে রোগের কারণে দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসতন্ত্রের কার্যব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। সংজ্ঞানুযায়ী, সিওপিডি একটি প্রতিরোধযোগ্য এবং নিরমায়যোগ্য ব্যাধি। এর বৈশিষ্ট্য হল, শ্বাসযন্ত্রের বায়ুবহনে নিরন্তর সীমাবদ্ধতার সৃষ্টি করা। রোগটি প্রগ্রেসিভ। অর্থাৎ, শ্বাসতন্ত্রে সীমাবদ্ধতা সৃ্ষ্টির বিষয়টি সময়ের সাথে বাড়তে থাকে। যত দিন যায়, ফুসফুসও ততই বিভিন্ন বিষাক্ত বস্তুকণা এবং গ্যাসের প্রতি অধিক সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এগুলোর সংস্পর্শে আসলেই ক্রনিক প্রদাহের মাত্রা বেড়ে যায়। কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে সিওপিডি তীব্র রূপ ধারণ করে। বিশেষ পরিস্থিতে, রোগী মারাও যেতে পারেন।
সিওপিডির সাথে অন্য রোগও নির্ণয় হতে পারে এ ধরণের রোগীদের। এর মধ্যে রয়েছে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস। অর্থাৎ ফুসফুসের বায়ুবাহী সূক্ষ্ন নালীকাগুলোর দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ। সাধারণতঃ টানা দুই বছর ধরে, প্রতিবছর অন্তত টানা তিনমাস কাশি এবং শ্লেষ্মা থাকে রোগীর। সিওপিডির রোগীদের ক্ষেত্রে “এমফাইসিমা”-ও থাকতে পারে। ফুসফুসের “টার্মিনাল ব্রঙ্কিওল”গুলোর পরে অবস্থিত এয়ারস্পেস বা বায়ু-আদান-প্রদানের স্থানগুলোর আকার স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পাওয়াকে এমফাইসিমা বলে। এমফাইসিমার ক্ষেত্রে, বায়ুবাহী এই নালীকাগুলোর প্রাচীর ক্ষয় হয়। ফাইব্রোসিস তেমন স্পষ্টভাবে পাওয়া যায় না এমফাইসিমায়।
শ্বাসতন্ত্রের বাইরে, সিওপিডির রোগীদের অন্য জটিলতাগুলো হচ্ছে - শরীরের ওজন কমে যাওয়া, পেশীর দুর্বলতা ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। সিওপিডি’র রোগীকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দিতে পারে - হৃদরোগ, মস্তিষ্ক ও রক্তনালীর রোগ, দি মেটাবলিক সিনড্রম, অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয়, ডিপ্রেশান এবং ফুসফুসের ক্যান্সার।
সিওপিডির প্রাদুর্ভাবের কারণগুলো আধুনিক সমাজে সুপ্রচুর। যেমন , ধূমপান, জৈব উৎসজাতঃ জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহার। তাছাড়াও পেশাগত কারণে কয়লা নিয়ে বেশী সময় কাজ করেন এমন ব্যক্তিরাও ঝুঁকিতে রয়েছেন। আবার যে দলটিকে নিয়ে রোগের গবেষণা করা হচ্ছে তাদের বয়সও একটি বিবেচনার বিষয়। যাদের রোগ সবচেয়ে গুরুতর রূপ নেয়, ব্যক্তিগত পর্যায়ে তারাই সিওপিডির মারাত্নক ক্ষতিগুলোকে ভোগ করে থাকেন। এবং সিওপিডি’র আর্থসামাজিক যে পরিণাম সেটিও তাদের সাপেক্ষেই হিসেব করা হয় বিভিন্ন সমীক্ষায়। অনুমান করা হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ, সিওপিডি হবে বিশ্বে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সপ্তম প্রধান কারণ এবং বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর চতুর্থ সার্বজনীন কারণ।
সিগারেট সেবন সিওপিডির প্রধান কারণ। কিছু ব্যাতিক্রম বাদে, সিগারেট খাওয়া লোকগুলোর সিওপিডি হবে এটি প্রায় অবধারিত সত্য রূপে ধরে নেয়া যায়। কি পরিমাণ এবং কতদিন ধরে সিগারেট খাচ্ছেন ধূমপায়ী , এক্ষেত্রে সেটি বিবেচ্য। সাধারণ টানা দশ বছর প্রতিদিন বিশটি সিগারেট খেলে ( টেন-প্যাক-ইয়ার) সিওপিডি হয়ে থাকে। তবে ব্যাক্তিভেদে ভিন্নতা রয়েছে এর।
সিওপিডির বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা ( প্যাথোফিজিওলজি)
ফুসফুস ঘটিত ও সামগ্রিক দেহতন্ত্র সম্পর্কিত - দু’ধরণের উপাদানই রয়েছে সিওপিডির। ক্ষতিগ্রস্থ ফুসফুসে বায়ু বহনে সীমাবদ্ধতা চলে আসে। সাথে যুক্ত হয় অসময়ে বায়ুবাহী নালীকাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া। এই দুই ঘটনার ফলশ্রুতিতে, ফুসফুসে গ্যাস আটকা পড়ে যায়। ফুসফুসের অস্বাভাবিক প্রসারণ ঘটে। যাকে বলে হাইপারইনফ্লেশান। এটি শ্বাসতন্ত্রের সাথে বক্ষপিঞ্জরের সমন্বয়কে নষ্ট করে দেয়। পালমোনারী হাইপারইনফ্লেশান বা ফুসফুসের অস্বাভাবিক প্রসারণের ফলে ডায়াফ্রামের পেশীগুলো অবদমিত হয়। ইন্টার-কস্টাল মাসেল (শ্বাসপ্রশ্বাস কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ পেশী) স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী আনুভূমিক হয়ে ওঠে। এর ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের পেশীগুলো একটি মেকানিকাল ডিসএডভান্টেযে পড়ে যায়। অর্থাৎ তাদের স্বাভাবিক যন্ত্রকৌশলটি নষ্ট হয়।
এসব কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসের কাজটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কষ্টকর হয়ে ওঠে। প্রথমদিকে ,সামান্য শারীরিক পরিশ্রম করলেই রোগী হাঁপিয়ে যান। এই সময় শ্বাসত্যাগের সময়কালটি ছোট হয়ে যায়। তবে রোগ যত বৃদ্ধি পায়, তখন বিশ্রামরত অবস্থাতেও শ্বাসকষ্ট থাকে। এমফাইসিমাকে, অস্বাভাবিক বর্ধিত এয়ারস্পেসের বিন্যাসের ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় : সেন্ট্রিএসাইনার, প্যান-এসাইনার, প্যারাসেপ্টাল।
কিছু রোগীর ফুসফুসে “ বুলী” পাওয়া যায়। বুলী বলতে বাংলায় সাধারণভাবে “ফোস্কা” বুঝতে পারেন। ফুসফুসের গ্যাসের আদানপ্রদান এবং স্বাভাবিক শ্বাসকার্যক্রম ব্যহত হলে এহেন ফোস্কার সৃষ্টি হয়।
সিওপিডি’র কারণ সমূহ :
পরিবেশগত কারণ :
l তামাকের ধোঁয়া : প্রায় পঁচানব্বইভাগ ক্ষেত্রে এটিই মূল কারণ সিওপিডির
l বাড়ির ভেতরে বায়ু দূষণ : উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আবদ্ধ স্থানে জৈব-জ্বালানি পুড়িয়ে রান্না করা হয়। এই ধোঁয়া শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ ঘটায়
l পেশাগত কারণে : অনেক পেশায়, শ্রমিকদেরকে কয়লা, ধূলো, সিলিকা, ক্যাডমিয়াম নিয়ে কাজ করতে হয়।
l জন্মের সময় শিশুর অস্বাভাবিক কম ওজন : জন্মের সময় ওজন কম থাকলে সেই শিশু পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে অনেক সময় ফুসফুসের পূর্ণ কার্যক্ষমতা অর্জন নাও করতে পারে।
l ফুসফুসের প্রবৃদ্ধি : শৈশবকালীন ফুসফুসের সংক্রমণ, মায়ের ধূমপানের অভ্যাস- এসব কারণে শিশুদের ফুসফুসের প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব পড়তে পারে। পূর্ণবয়সে সেই শিশু ফুসফুসের পূর্ণ কার্যক্ষমতা অর্জন করতে পারে না।
l সংক্রমণ : ফুসফুসে বারবার সংক্রমণ ঘটলে FEV1 বা এক সেকেন্ডে ফুসফুস যে পরিমাণ বাতাস ত্যাগ করতে পারে, সেটি কমে যায়। ফুসফুসের টিস্যুতে , এডেনোভাইরাসের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি স্থানীয় প্রদাহমূলক প্রতিক্রিয়াকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। এর ফলে ফুসফুসের ক্ষতি হওয়ার মত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এইচআইভি রোগীদের ক্ষেত্রে এমফাইসিমা থাকতে পারে।
l নিম্ন আর্থসামাজিক অবস্থান
l গাঁজা সেবন
ব্যাক্তি-ভিত্তিক কারণে
l জেনেটিক ফ্যাক্টর বা বংশাণু ঘটিত কারণে : আলফা-ওয়ান এন্টিট্রিপসিন ডেফিশিয়েন্সি ; সিওপিডি ঘটাতে পারে এমন অন্য জিনগুলো এখন শনাক্ত হওয়ার অপেক্ষায়।
l এয়ারওয়ে হাইপার-রিএকটিভিটি বা অতিরিক্ত সংবেদনশীল শ্বাসতন্ত্র।
সিওপিডির রোগের লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :
l চল্লিশের বেশী বয়স এমন যেকোন রোগী যদি “ ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসে ”-র উপসর্গ সমেত যদি হাজির হয়, ( সাথে শ্বাসহীনতা থাকতে পারে বা নাও পারে) তবে তার সিওপিডি সন্দেহ করেন চিকিৎকগণ
l রোগীর উপসর্গ সাপেক্ষে সিওপিডিকে অন্য যেসব রোগ হিসেবে ভাবতে পারেন চিকিৎসক : ক্রনিক হাঁপানি, যক্ষা, ব্রঙ্কায়েকটেসিস এবং কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেইলিউর।
l সাধারণতঃ কাশি এবং শ্লেষ্মা সিওপিডির প্রথম উপসর্গ। এধরণের কাশিকে সাধারণতঃ “ স্মোকার্স কফ ” বা ধূমপায়ীদের কাশি বলা হয়।
l অনেক ক্ষেত্রে কাশির সাথে রক্ত আসতে পারে (হেমোপ্টাইসিস)। রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে এই বিষয়টি আরও বেশী জটিলতার সৃষ্টি করে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরীক্ষা নীরিক্ষা ছাড়া সিওপিডির সাথে রক্ত আসাকে সমন্ধযুক্ত না করাই ভাল।
l সাধারণতঃ শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্টের কারণেই চিকিৎসকের শরাপন্ন হয়ে থাকেন রোগী। এক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টটি কোন পর্যায়ের সেটি লিখিত আকারে নঁথিবদ্ধ করে রাখা দরকার। বর্তমান শ্বাসকষ্ট নিয়ে রোগী কি কি কাজ করতে পারেন বা পারেন না সেটি লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে। রোগীর ভবিষ্যত চিকিৎসায় এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এজন্য " মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল” প্রণীত ডিসপনিয়া-স্কেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
l যাদের রোগ অগ্রসর, সেসব রোগীর কাছে চিকিৎসা জানতে যাবেন “ইড়িমা” আছে কি না। অর্থাৎ হাত পায়ে পানি আসার ঘটনা ঘটে কি না। সাধারণতঃ সিওপিডি তীব্ররূপ ধারণ করার ঘটনা প্রথম ঘটার সময় এই বিষয়টি দেখা যায়। চিকিৎসক আরও জানতে চাইবেন রোগীর সকালবেলা মাথা ব্যাথা থাকে কি না। মাথাব্যাথার অর্থ হাইপারক্যাপনিয়া থাকতে পারে - অর্থাৎ রক্তে কার্বন-ডাই-অক্সাইডডের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী।
l শারীরিক বিভিন্ন লক্ষণ সিওপিডির ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। অধিকাংশ সময়ই, রোগ প্রকটরূপ ধারণ করার আগ পর্যন্ত, ফুসফুসের কার্যক্ষমতার সাথে এসব লক্ষণের তেমন যোগসূত্র পাওয়া যায় না ।
l সিওপিডির ব্রীদ-সাউন্ড বা স্টোথোস্কোপের মাধ্যমে ফুসফুসে উল্লেখযোগ্য কোন শব্দ শোনা যায় না। তবে সংক্রমণে থাকলে ‘ ক্র্যাকেলস’ থাকতে পারে। ফুসফুসের তরল বা মিউকাসপূর্ন অংশের মধ্য দিয়ে বায়ু প্রবাহের সময় যে মৃদু খরখর জাতীয় শব্দ শোনা যায় তাকে ক্র্যাকেলস বলে।
l সিওপিডি’তে ফিংগার-ক্লাবিঙ থাকে না। রোগীর ফিংগার-ক্লাবিং পাওয়া গেলে ফাইব্রোসিস বা ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য পরীক্ষা করা আবশ্যক।
l অগ্রসর সিওপিডি’র রোগীদের ক্ষেত্রে “ রাইট হার্ট ফেইলিউর ” হতে পারে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই স্লিপ এপনিয়া বা ঘুমের মাঝে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া অথবা থ্রম্বোএম্বোলিক (রক্তনালীকায় রক্তজমাট বেঁধে যাওয়া, এবং জমাটবদ্ধ সেই রক্তপিন্ড উৎপত্তিগত নালীকা থেকে বিযুক্ত হয়ে, রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে অন্য নালীকায় গিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে) ডিজিজ আছে।
l হার্ট ফেইলিওর ব্যাতীতও সিওপিডির রোগীদের শরীরে পানি আসতে পারে। এক্ষেত্রে রেনাল হাইপোক্সিয়া ( কিডনীর কলাতন্ত্রে অক্সিজেনের অভাব) এবং হাইপারক্যাপনিয়ার ফলে মানবদেহ পানি ও লবণ নিষ্কাশন করতে পারে ন। ফলে পিটিং ইড়িমা হয়।
l উপরোক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে কর-পারমোনালে (ফুসফুস বা ফুসফুসের রক্ত আদানপ্রদানে নিয়োজিত রক্তনালীকার রোগের ফলে হৃদপিন্ডের ডান দিকে আকার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়া) শব্দটি রোগের সঠিক বিবরণ নয়।
l অবসন্নতা, ক্ষুধামন্দা, ওজন হ্রাস পাওয়া সাধারণতঃ ফুসফুসের ক্যান্সার বা যক্ষা নির্দেশ করে। তবে গুরুতর সিওপিডি রোগীদের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা যায়। এক্ষেত্রে বি-এম-আই পরিমাপের গুরুত্ব অপরিসীম।
l মানসিক অবসন্নতা, দুশ্চিন্তাও প্রায় সময়ই থাকে এসব রোগীদের। এসব বিষয়গুলোও রোগীকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দেয়।
l প্রথম দর্শনে সিওপিডির রোগীদের যেমন দেখায় তার ভিত্তিতে তাদের দু’ভাগে ভাগ করা যায়, একদলকে বলা হয় “ পিংক পাফার ” এবং অন্যদের “ ব্লু -ব্লোটার ”।
l “পিংক পাফার” ( বাংলা করলে হয় এমন কোন ব্যাক্তি যিনি হাসফাঁস করছেন এবং চেহারা রক্তিম বর্ণ ধারণ করছ) - এধরণের রোগীরা সাধারণতঃ শীর্ণকায়। তার শ্বাসকষ্টে ভোগেন। তবে এদের রক্তে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। রোগ আরও অগ্রসর হওয়ার পর এই বিষয়টিতে পরিবর্তন হয়।
l “ ব্লু-ব্লোটার ” ( বাংলাকরণ : এমন ব্যাক্তি যিনি শ্বাসকষ্টে নীলবর্ণ ধারণ করছেন, শরীর ফুলে যাচ্ছে) দের ক্ষেত্রে হাইপারক্যাপনিয়া (রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি) আগেভাগেই তৈরী হয়ে যায়। তাদের ক্ষেত্রে “ ইড়িমা ” এবং “ সেকেন্ডারী পলিসাইথেমিয়া” থাকতে পারে। তবে রোগী দেখার ক্ষেত্রে এই দুই ধরণের বিষয় মিলে যেতে পারে।

সাধারণ ফুসফুস : অনুবীক্ষণে যেমন দেখায়
সিওপিডি সম্পর্কিত পরীক্ষা-নীরিক্ষাগুলো
l রেডিওগ্রাফি করে সিওপিডি’র জন্য সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ নির্ণয় করা যায় না। শ্বাসতন্ত্রের বায়ুবহনে কি পরিমাণ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে সেটি এক্স-রে করে বোঝা সম্ভব নয়। তবে অন্যান্য বিষয়গুলো যেমন- কার্ডিয়াক ফেইলিউর, অথবা ধূমপান জনিত ফুসফুসের অন্যান্য রোগ যেমন - ক্যান্সার বা ফোস্কার উপস্থিতি খারিয করার জন্য এক্স-রে করতে হয়।
l রক্তপরীক্ষাও রোগের প্রকোপ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে জরুরী। রক্তপরীক্ষায় দেখা হয়, এনিমিয়া বা পলিসাইথেমিয়া আছে কি না।
l কমবয়সী রোগী, যাদের ব্যযাল বা ফুসফুসের অধোঃভাগে এমফাইসিমা প্রধান , তাদের ক্ষেত্রে আলফা-ওয়ান এন্টিট্রিপসিন পরীক্ষা করা উচিত। এই পরিমাণটি সাধারণতঃ ১০০-৩০০ মিগ্রা পার ডেসিলিটার। ৮০ মিগ্রার কম হলে ফুসফুসের সমস্যা দেখা দেয়।

এমফাইসিমা'র ফুসফুস : অনুবীক্ষণে যেমন দেখায়
l সিওপিডি নিশ্চিত করার জন্য শ্বাসতন্ত্রের প্রতিবন্ধকতাকে “ স্পাইরোমেট্রি ” পরীক্ষার মাধ্যমে সরাসরি প্রতিপাদন করা হয়। ব্রঙ্কোডাইলেটার ( শ্বাসনালীকাকে প্রসারিত করে যে ঔষধ) ব্যবহার করার পরও যদি FEV1/FVC সত্তর শতাংশের বেশী বাড়তে না পরে, তখন সিওপিডি আছে বলতে হবে। ব্রঙ্কোডাইলেটার পরবর্তী এফ-ই-ভি ওয়ানের মাধ্যমে সিওপিডি কতটা গুরুতর তার হিসেব করা হয়।
l ফুসফুসের ভলিউম পরিমাপ করার মাধ্যমে হাইপারইনফ্লেশান মূল্যায়ন করা যায়। সাধারণতঃ হিলিয়াম ডাইলিউশান টেকনিকের মাধ্যমে এটি করা হয়।
l তবে, যেসব রোগীদের ক্ষেত্রে সিওপিডি গুরুতর রূপ নিয়েছে, এবং বিশেষ বড় আকৃতির ‘বুলী’ বা ফোস্কা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বডি-প্লেথিসমোগ্রাফি ( পালস-অক্সিমিটার যন্ত্রের প্রযুক্তি ) ব্যবহার করা হয়। কারণ হিলিয়াম ব্যাবহার করে অনেক সময় সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব না-ও হতে পারে। গ্যাস পরিবহনের মাত্রা থেকে এমফাইসিমা সমন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। মাত্রা কম হলে এমফাইসিমা আছে।
l এক্সারসাইজ টেস্ট করে সিওপিডি রোগীর শারীরিক পরিশ্রমের সক্ষমতা সমন্ধে একটি সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। এই পরীক্ষার ফলাফলের সাথে তুলনা করেই পরবর্তীতে বোঝা যায় ব্রঙ্কোডাইলেটার থেরাপী অথবা পুর্বাসনের অন্য পদ্ধতিগুলো কতটুকু কাজ করছে।
l পালস অক্সিমিটারে রোগীর অক্সিজেন স্যচুরেশান ৯৩ শতাংশের কম হলে, “ ডমিসিলিয়ারি অক্সিজেন এসেসমেন্ট” করা হয়।
l গবেষণা পর্যায়ে , “সেন্ট গ্রেগরিয রেসপিরেটোরি কোয়েশ্চেনিয়ার” নামক প্রশ্ন-ব্যবস্থা ব্যবহার করে রোগীকে প্রশ্ন করার মাধ্যমে সিওপিডি’র গুরুত্ব যাচাই করা যেতে পারে। এমনি সাধারণ ক্ষেত্রে, ‘সিওপিডি এসেসমেন্ট টেস্ট’ এবং ‘দি সিওপিডি কন্ট্রোল কোয়েশ্চেনিয়ার’ ব্যবহার সুবিধাজনক।

এইচ-আর-সিটিতে এমফাইসিমা দেখাচ্ছে
l সিওপিডি যাচাইকরণে “ হাই রিজোলুশান কম্পিউটেড টমোগ্রাফি”-র ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এটি এমফাইসিমা নির্ণয়, বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ এবং এমফাইসিমা কতটা গুরুতর তা বুঝতে সাহায্য করে। তাছাড়া চেস্ট এক্স-রে’র তুলনায় এইচ-আই-সি-টি ব্যবহার করে “ বুলী ” নির্ণয় করা সহজতর। “ লাং-ভলিউম-রিডাকশান-সার্জারী”র ক্ষেত্রেও এইচ-আর-সি-টি’র সাহায্য ( গাইড হিসেবে) নেয়া হয়।
ধূমপান ছেড়ে দিলে, সিওপিডি প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া সঠিক চিকিৎসা ও জীবনপদ্ধতির মাধ্যমে এই রোগকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেতে পারে।
------------------------------------------------------------------------------------------
সূত্র: ডেভিডসন্ড মেডিসিন, রবিন্স প্যাথলজি, গাইটন্স ফিজিওলজি
শ্বাসতন্ত্রের রোগ সমন্ধে আরও পড়ুন :
অ্যাজমা কি
অ্যাজমার চিকিৎসা


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন