বুধবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২১

হৃদযন্ত্র বিষয়ে ৬ টি জরুরী আলোচনা ( নার্ভ-সাপ্লাই, ফিজিওলজি, কার্ডিয়াক পেপটাইডস)

হৃৎযন্ত্রটি বেশ ভালোভাবেই চলছে বলেই এই পোস্ট পড়তে পাচ্ছেন। সেজন্য অভিনন্দন। অনেক মানুষের বেলায়ই এটি সত্য নয়। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে দেখা গেছে পৃথিবীতে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃৎযন্ত্রের রোগব্যাধি। সুস্থ থাকতে থাকতেই আপনার হৃদয় যন্ত্র বিষয়ে এই কথাগুলো জেনে রাখুন 




হার্টের নার্ভ সাপ্লাই 

📌 সিমপ্যাথেটিক এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক দু’ধরণের ফাইবারই হার্টকে ইনার্ভেট করে। বলে রাখা যায়, সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সাধারণতঃ স্ট্রেসফুল পরিস্থিতিতে মানব দেহের প্রতিক্রিয়াগুলির জন্য দায়ী ( যেমন হার্ট রেট বাড়িয়ে দেয়া, রক্তনালীর সংকোচন, পেরিস্টালসিসকে কমিয়ে দেয়া, এড্রেনাল মেডুলা থেকে হরমোন নিঃসরণ)। অন্যদিকে প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম হার্ট রেট কমিয়ে দেয়, খাদ্য পরিপাকে সহায়ক রস নিঃসরণ করে ইত্যাদি)।


 

📌 সার্ভিকাল সিম্প্যাথেটিক চেইন থেকে এড্রেনার্জিক নার্ভগুলি ( যেসব নার্ভের টার্মিনাল বা শেষপ্রান্ত থেকে নর-এপিনেফ্রিন নিঃসরণ হয়) এট্রিয়া এবং ভেন্ট্রিকেলগুলির মাসেল ফাইবার, এবং ইলেকট্রিকাল কন্ডাংক্টিং চেইনটিকে সাপ্লাই দেয়। হার্টের বিটাওয়ান এড্রেনোসেপ্টারগুলিকে এক্টিভেট করলে  একটি পজিটিভ ইনোট্রোপিক (হার্টের পেশীর সংকোচন-প্রসারণের গুণকে প্রভাবিত করা) এবং খ্রোনোট্রোপিক ইফেক্ট (হার্টবীটের রেটকে প্রভাবিত করা) পাওয়া যায়। অন্যদিকে ভাস্কুলার-স্মুদ-মাসেলের ( রক্তনালী গাত্রের পেশী) এক্টিভেশানের ফলে ঘটে ভেসোডাইলেশান। 

📌 ভেগাস নার্ভের মাধ্যমে হার্টের নাগাল পায় প্যারাসিম্প্যাথেটিক প্রি-গ্যাংলিওনিক ফাইবার এবং সেন্সরী ফাইবারগুলি। মাসকারিনিক বা এম-টু রিসেপ্টরের মাধ্যমে এভি এবং এস-এ নোডগুলিকে নার্ভ সাপ্লাই দেয় কোলিনার্জিক নার্ভস। সাধারণ বা অনুত্তেজিত অবস্থায় , ভেগাল- ইনহিবিটরী-এ্যাক্টিভিটি প্রধান হয়ে ওঠে। এবং হার্ট রেট থাকে কম। 

📌 শারীরিক পরিশ্রম, আবেগপ্রবণতা, মানসিক চাপ, জ্বর ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত এড্রেনার্জিক স্টিমুলেশানের ফলে হার্ট রেট বেড়ে যায়। বিভিন্ন রোগের ফলেও , হার্টের নার্ভ সাপ্লাইয়ের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। যেমন, হার্ট ফেইলিওরের ফলে সিমপ্যাথেটিক সিস্টেম আপ-রেগুলেটেড হয়- বা স্টিমুলাসের প্রতি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। ডায়বেটিস মেলাইটাসের ক্ষেত্রে অটোনমিক নিউরোপ্যাথির দরুণ নার্ভগুলি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে হার্ট-রেট সবসময় একইরকম থাকে,প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেও কোন তারতম্য ঘটে না।  

 হার্টের ফিজিওলজি



মায়োকার্ডিয়াল কন্ট্রাকশান ( হৃৎপেশীর সংকোচন প্রসারণ) 


 📌 মায়োকার্ডিয়াল সেল্স বা মায়োসাইটস প্রায় ৫০ থেকে ১০০ মাইক্রোমিটার লম্বা। 
 📌 প্রতিটি কোষ শাখান্বিত হয়, এবং সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী বা এজাসেন্ট সেলগুলির সাথে ইন্টারডিজিটেট করে।
 📌 একটি ইন্টার ক্যালেটেড ডিস্ক, গ্যাপ জাংশানের মারফত  ইলেকট্রিকাল সিগনালের কন্ডাকশান ঘটায়; এবং ফাশা এডহেরেন্সের মাধ্যমে, এজাসেন্ট সেলগুলিতে মেকানিকাল কন্ডাকশান ঘটায়। 



 📌 কন্ট্রাকশান বা সংকোচন-প্রসারণের মৌলিক একক - স্যাক্রোমিয়ার। স্যাক্রোমিয়ারের দৈর্ঘ্য দুই মাইক্রোমিটার। এজাসেন্ট মায়োফাইব্রিলদের সাথে একই সরলরেখায় বিন্যস্ত হয় স্যাক্রোমিয়ার। এখানে জেড-লাইন্সগুলির কারণে স্ট্রায়াটেড বা লম্বা লম্বা দাগযুক্ত দেখায়। জেড লাইন্সগুলির সাথে নব্বই ডিগ্রী অবস্থানে থাকে এক্টিন ফিলামেন্ট ( এক প্রকার কন্ট্রাক্টাইল প্রোটিন)। সমান্তরাল অবস্থানে থাকা অপেক্ষাকৃত মোটা মায়োসিন ফিলামেন্টগুলির সাথে ইন্টারডিজিটেট করে এক্টিন ফিলামেন্ট। এক্টিন এবং মায়োসিনের সংযোগ বা ক্রস-লিংকিং-এ থাকে মায়োফিব্রিলার এডেনোসিন ট্রাইফসফাটেয। এই এটিপেয এনজাইমটি এটিপি কে ভেঙে ফেলে, এবং হার্টের কন্ট্রাকশানের জন্য শক্তি যোগায়। দুটি এক্টিন মলিকুলের চেইন মিলে একটি হেলিকাল স্ট্রাকচার তৈরী করে। এই হেলিকাল স্ট্রাকচারে দ্বীতিয় একটি অণু যুক্ত হয় - ট্রপোমায়োসিন। এক্টিন হেলিক্সের খাঁজগুলিতে এই অণুটি অবস্থান করে। হেলিক্সে দ্বীতিয় আরেকটি মলিকুল কম্পলেক্স যুক্ত হয় - ট্রপোনিন। প্রতি সাত নম্বর এক্টিন মলিকুলের সাথে যুক্ত থাকে ট্রপোনিন।

   📌 একশান পটেনশিয়ালের , প্লাটু দশায়, ক্যালসিয়াম আয়ন কার্ডিয়াক মায়োসাইটে প্রবেশ করে। এসময় সার্কোপ্লাযমিক রেটিকুলাম থেকেও ক্যালসিয়াম আয়ন নিঃসরণ বা মোবিলাইযড হয়। এই আয়ন যুক্ত হয় ট্রপোনিনের সাথে। তারই ফলশ্রুতিতে হার্টের কন্ট্রাকশান ঘটে। ক্যালসিয়াম আয়ন ট্রপোনিনের সাথে যুক্ত হলে, এক্টিন-মায়োসিন মলিকুলের ইন্টারডিজিটেশানের মাধ্যমে স্যাক্রোমিয়ারের দৈর্ঘ্য হ্রাস পায়। 

  📌 কার্ডিয়াক মাসেল কন্ট্রাকশানের শক্তি, বা ইনোট্রপিক অবস্থাটি, “ স্লো ক্যালসিয়াম চ্যানেলের” ভেতর দিয়ে ক্যালসিয়ামের আয়নের ইনফ্লাক্সের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। একটি স্যাক্রোমিয়ার কতটুক সংকুচিত হতে পারে সেটিই ভেন্ট্রিকেলের স্ট্রোক ভলিউমকে নির্ধারণ করে দেয়। শক্তিশালী ইনট্রোপিক ড্রাগ এবং এক্সারসাইজের প্রতিক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সংকোচন ঘটে স্যাক্রোমিয়ারের। তবে, হার্ট ফেইলিওরের সময় হার্টের আকার বৃদ্ধির কারণ কিন্তু স্যাক্রোমিয়ারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাওয়া নয়। বরঞ্চ মায়োফিব্রিল এবং এজাসেন্ট কোষগুলির স্থানচ্যুতি বা স্লিপেজের ফলে এমনটি ঘটে।

কার্ডিয়াক পেপটাইডস ( হার্ট থেকে নিসৃত পেপটাইড) 

 📌 কার্ডিয়োমায়োসাইটস বিভিন্ন ধরণের পেপটাইড সিক্রেট করে। মানবদেহের রক্তসংবহনতন্ত্র বা ভাস্কুলেচার এবং কিডনীর ওপর এসব পেপটাইড হিউমোরাল ইফেক্ট সৃষ্টি করে।‌

 📌 এট্রিয়াল ন্যাট্রি ইউরেটিক পেপটাইড বা এ-এন-পি একটি আঠাশ এমিনো এসিড বিশিষ্ট পেপটাইড। এই পেপটাইডের একটি এমিনো এসিড রিং ভেসোডাইলেটার হিসেবে কাজ করে। যেকারণে এএনপি ব্লাড প্রেশার কমায়। এছাড়াও এএনপি একটি ডাই-ইউরেটিক বা মূত্র বর্ধক হিসেবে কাজ করে। পানি এবং সোডিয়ামের রেনাল এক্সক্রিশান বাড়ায়।  স্ট্রেচ বা প্রসারণের প্রতিক্রিয়ায় কার্ডিয়াক মায়োসাইটস থেকে রিলিয হয় এএনপি।  

📌 ব্রেন ন্যাট্রি ইউরেটিক পেপটাইড বা বিএনপি একটি বত্রিশ এমিনো এসিড বিশিষ্ট পলিপেপটাইড। একে প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল শূকরের মস্তিষ্কে। এই পলিপেপটাইডটি রিলিজ করে ভেন্ট্রিকুলার কার্ডিওমায়োসাইটস, স্ট্রেচের প্রতিক্রিয়ায়। সাধারণতঃ হার্ট ফেইলিওরের ক্ষেত্রে বিএনপি পাওয়া যায়। এএনপি’র মত বিএনপিরও ডাই-ইউরেটিক গুণাবলী রয়েছে।

📌 রক্তপ্রবাহ বা সার্কুলেশানে নেপ্রিলাইসিন neprilysin নামক একটি এনজাইমের অস্তিত্ব রয়েছে। কিডনী এবং অন্যান্য টিস্যু এই এনজাইম তৈরী করে। নেপ্রিলাইসিন, এএনপি এবং বিএনপি ও অন্যান্য প্রোটিন কে ভেঙে ফেলে। এবং ভেঙে ফেলে বলেই সে কাজ করে একটি ভেসোকনস্ট্রিক্টার হিসেবে। হার্ট ফেইলিওরের রোগীদের ক্ষেত্রে নেপ্রিলাইসিন একটি থেরাপিউটিক টার্গেট।

সার্কুলেশান ( হার্টের রক্ত প্রবাহের দিক-বিদিক)

📌 রাইট এট্রিয়ামে ডি-অক্সিজেনেটেড ব্লাড এসে পৌঁছায় সুপেরিয়ার এবং ইনফেরিয়ার ভেনাকাভার মাধ্যমে। 

📌 রাইট এট্রিয়াম থেকে এই ব্লাড ডিসচার্জড হয় রাইট ভেন্ট্রিকালে। রাইট ভেন্ট্রিকাল এই রক্তকে পালমোনারী আর্টারীতে পাম্প করে। 

📌 এরপর ব্লাড , পালমোনারী আর্টেরিয়াল বেড এবং অ্যালভিওলার ক্যাপিলারী বেডের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এসময় ব্লাডের অক্সিজেনেশান ঘটে। 

📌 এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, পালমোনারী ভেইনের মাধ্যমে ড্রেইনড হয় লেফট এট্রিয়ামে। সেখানে থেকে রক্ত আসে লেফট ভেন্ট্রিকালে। 

📌 লেফট ভেন্ট্রিকাল এই রক্তকে অ্যাওর্টায় পাম্প করে। 

📌ভেন্ট্রিকুলার কন্ট্রাকশান বা সিস্টোলের সময়ে, রাইট হার্টের ট্রাইকাসপিড ভালভ এবং লেফট হার্টের মাইট্রাল ভালভ বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে পালমোনারী এবং এওর্টিক ভালভ খুলে যায়। ডায়াস্টোলের সময়ে, পালমোনারী এবং এওর্টিক ভালভ বন্ধ হয়ে যায়। এবং এট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার ভালভ দু’টি খুলে যায়। 

এক হার্টবীট থেকে পরের হার্টবীট পর্যন্ত “ফিলিং” বা রক্তে পূর্ণ হওয়া এবং ইজেকশান বা রক্ত বের করে দেওয়ার কার্ডিয়াক চক্রটি, এই সমস্ত এট্রিয়াল এবং ভেন্ট্রিকুলার ইভেন্টের সমন্বয়ে গঠিত।

📌 হার্ট থেকে ব্লাড , বিভিন্ন বড় বড় সেন্ট্রাল ইলাস্টিক আর্টারিযের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মাস্কুলার আর্টারিযে পৌঁছায়। এরপর বিভিন্ন রেজিস্ট্যান্স ভেসেলের মুখোমুখি হয় রক্তের ধারা। চূড়ান্ত ভাবে রক্ত পৌঁছায় ক্যাপিলারি বেডে। এখানেই বিভিন্ন পুষ্টি, অক্সিজেন এবং মেটাবোলিক ওয়েস্ট প্রডাক্টগুলি এক্সচেঞ্জ ঘটে। 

📌 সেন্ট্রাল আর্টারী যেমন, এওর্টা, মূলতঃ ইলাস্টিক টিস্যু দিয়ে তৈরী। সেখানে প্রায় কোনই ‘ভাস্কুলার স্মুদ মাসেল সেল’ থাকে না। হার্ট থেকে ব্লাড ইজেক্ট হওয়ার পর, এই কম্পলায়েন্ট বা সহযোগিতামূলক-মনোভাবাপন্ন নালীকাটি রক্তের ভলিউমের স্থান সংকুলানের জন্য প্রসারিত হয়। তবে প্রসারণের পরপরই, কার্ডিয়াক কন্ট্রাকশানের সমাপ্তি ঘটা মাত্রই, ‘ইলাস্টিক রিকয়েল’ রক্তের প্রবাহ ও চাপ বজায় রাখে। একে বলে উইন্ডকেসেল ইফেক্ট। এই উইন্ডকেসেল ইফেক্টের কারণেই সিস্টোলিক বিপি মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় না, অন্যদিকে  ডায়াস্টোলিক বিপিও সঠিক মাত্রায় বজায় থাকে। 

📌 ফলশ্রুতিতে, কার্ডিয়াক আফটারলোড কমে যায় এবং করোনারি পারফিউশান মেইনটেইনড হয়। বয়স এবং এডভান্সড রেনাল ডিযিযের কারণে আর্টারী দিন দিন তার ইলাস্টিক গুণাবলী হারাতে থাকে। একে বলে প্রগ্রেসিভ আর্টেরিয়াল স্টিফেনিং। আর্টেরিয়াল ট্রি বেয়ে রক্তের ধারা নেমে আসার সময় ভাস্কুলার স্মুদ মাসেল গুলির ভূমিকা প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকে ; যতক্ষণ না রেযিসটেন্স আর্টেরিওলসগুলির মুখোমুখি হয়। সিস্টেমিক ভাস্কুলার রেযিস্টেন্সে সব রক্তনালীরই কিছু না কিছু অবদান থাকে। তবে সবচেয়ে বড় অবদানটি রাখে দি রেযিস্টেন্স ভেসেলস ( ডায়মিটার ৫০-২০০ মাইক্রো মিটার)। এসব ভেসেলগুলির ডায়ামিটারে সামান্যতম পরিবর্তন রক্ত প্রবাহের ওপর লক্ষণীয় প্রভাব ফেলে থাকে। এক্ষেত্রে, রেযিস্টেন্স রক্ত নালীকার ব্যাসার্ধের চতুর্থ পাওয়ারের ব্যাস্তানুপাতিক। একে বলা হয় পোইযেয়ুলিয ল।

 📌 এই রেযিস্টেন্স ভেসেলগুলির টোন বিভিন্ন হিউমোরাল, মেকানিকাল এবং নিউরোনাল ফ্যাক্টর দ্বারা কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত। ভাস্কুলার স্মুদ মাসেলের আলফা এড্রেনোসেপ্টারের মাধ্যমে নিউরোজেনিক কন্সট্রিকশান ঘটে থাকে। এবং ডায়লাটেশান ঘটে বিটা টু এড্রেনোসেপ্টার এবং মাসকারিনিক রিসেপ্টারের মাধ্যমে। তাছাড়াও বিভিন্ন সিস্টেমিক এবং লোকালি রিলিযড ভেসোএক্টিভ সাবস্টেন্স টোনকে প্রভাবিত করে। ভেসোকন্সট্রিকারের মধ্যে রয়েছে নরএড্রেনালিন, এনজিওটেনসিন টু এবং এন্ডোথেলিন ওয়ানঅন্যদিকে ব্র্যাডিকিনিন, প্রোস্টাগ্লান্ডিন এবং নাইট্রিক অক্সাইড ভেসোডাইলেটার হিসেবে কাজ করে। ভিস্কোসিটির সাথে সাথে ব্লাড ফ্লোর প্রতি রেযিজটেন্সও বাড়তে থাকে। প্রধাণতঃ হেমাটোক্রিটের মাধ্যমে এটি প্রভাবিত হয়।

 📌 করোনারি ব্লাড ভেসেলে সিমপ্যাথেটিক এবং প্যারাসিম্প্যাথেটিক দু’ধরণের ইনার্ভেশানই হয়। এক্ষেত্রে , আলফা এড্রেনোসেপ্টারের স্টিমুলেশানের ফলে ভেসোকনস্ট্রিকশান এবং বিটা টু এড্রেনোসেপ্টারের স্টিমুলেশানের ফলে ভেসোডাইলেশান হয়। তবে করোনারি আর্টারীতে সিমপ্যাথেটিক স্টিমুলেশান প্রধানতঃ ভেসোডাইলেশান করে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্টিমুলেশানের ফলের সাধারণ করোনারি আর্টারীর একটি মোটামুটি উল্লেখযোগ্য ডাইলেশান হয়। এই সমস্ত হোমিওস্টেটিক মেকানিযমের কারণে রক্ত নালীর টোন নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকে। করোনারি আর্টারী সংকুচিত হলে বা তার স্টেনোসিস ঘটলেও, এমনকি এক্সারসাইজের সময়ও রক্ত প্রবাহে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না যতক্ষণ না ভেসেলের ক্রস-সেকশানাল এরিয়া কমপক্ষে সত্তর ভাগ হ্রাস পায়।

এন্ডোথেলিয়াম ( রক্তনালী গাত্র )

ভাস্কুলার হোমিওস্টেসিসের ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে এন্ডোথেলিয়াম। অনেক ধরণের ভেসোএকটিভ মিডিয়েটর’স তৈরী ও রিলিজ হয় এন্ডোথোলিয়াম থেকে। এই মিডিয়েটরগুলি ভেসোডাইলেশান করে, যেমন - নাইট্রিক অক্সাইড, প্রোস্টাসাইক্লিন, এন্ডোথেলিয়াম ডিরাইভড হাইপারপোলারাইযিং ফ্যাক্টর। এবং ভেসোকন্সট্রিকশান করে, যেমন- এন্ডোথেলিন ওয়ান এবং এনজিওটেনসিন টু। এক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য বিদ্যমান। এই ভারসাম্য বা ব্যালেন্সের কারণেই এই ধরণের ফ্যাক্টরগুলির রিলিযের ফলে ভাস্কুলার টোন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। এন্ডোথেলিয়াম কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে এই ভারসাম্যটি নষ্ট হয়। ফলাফল ভাস্কুলার ডিসফাংশান, টিস্যু ইশকেমিয়া এবং হাইপারটেনশান। বিভিন্ন ইনফ্লামেটোরী সেলগুলিকে কাজে নিয়োজিত করা এবং থ্রম্বাস সৃষ্টি ও দ্রবীভূত করার প্রধান নিয়ন্ত্রণমূলক ধাপগুলিকে বিশদভাবে প্রভাবিত করে এন্ডোথেলিয়াম। এক্টিভেটেড হওয়ার পর, এন্ডোথেলিয়াম বিভিন্ন ধরণের সারফেস-রিসেপ্টর এক্সপ্রেস করে; যেমন  -ই সিলেক্টিন, ইন্টারসেলুলার এডহেশান মলিকুল টাইপ ওয়ান (আইক্যাম-১) এবং প্লেটলেট এন্ডোথেলিয়াল সেল এডহেশান মলিকুল টাইপ ওয়ান (পিক্যাম-ওয়ান)। এই রিসেপ্টরগুলির মধ্যস্থতায়, সাবইনটিমাতে বিভিন্ন ইনফ্লামেটোরী মলিকুলগুলির রোলিং, এডহেশান এবং মাইগ্রেশান ঘটে। এসবের পাশাপাশি এন্ডোথেলিয়াম “ ভন উইলেব্রান্ড ফ্যাক্টর” নামক একটি মাল্টিমেরিক গ্লাইকোপ্রেটিনকে জমা রাখে এবং রিলিজ করে। ভন উইলেব্রান্ড ফ্যাক্টর থ্রম্বাস গঠনে সহায়ক। হার্টের বিভিন্ন ডিনিউডেড বা ক্ষতিগ্রস্থ সারফেসে, বিশেষ করে আর্টেরিয়াল ভাস্কুলেচারে - লিংকিং প্লেটলেট এডহেশানের মাধ্যমে থ্রম্বাস ফর্মেশান ঘটে থাকে। অন্যদিকে, একবার ইন্ট্রাভাস্কুলার থ্রম্বাস তৈরী হওয়ার সাথে সাথেই, এন্ডোথেলিয়ামের একটি ‘ ডায়নামিক স্টোরেজ পুল” থেকে দ্রুত টিস্যু প্লাযমিনোজেন এক্টিভেটোর রিলিজ হয়। এই টিস্যু প্লাযমিনোজেন এক্টিভেটর , ‘ফিব্রিনোলাইসিস’ এবং  ‘থ্রম্বাস ডিসোলিউশান’ ঘটায় বা ইনডিউস করে।  এথেরোস্ক্লেরোসিস ডেভেলপমেন্ট এবং প্রগ্রেশান দুটোর জন্যেই এন্ডোথেলিয়াম সমন্ধীয় এই ঘটনাগুলি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং বহু কার্ডিওভাস্কুলার ডিযিযের প্যাথোজেনিসিসের মূল কারণ হিসেবে দেখা হয় এন্ডোথোলিয়াল ফাংশান এবং ইনজুরিকে।

রেসপিরেশান ( শ্বাসগ্রহণের সাথে হার্টের পরিবর্তন) 

📌 রেসপিরেশানের সাথে সাথে কার্ডিয়াক আউটপুট, ব্লাড প্রেশার এবং পালস রেট পরিবর্তন হয়। 

📌 রাইট এবং লেফট হার্টে ব্লাড-ফ্লো’র পরিবর্তনের ফলে ঘটে এমনটা। 

📌 ইন্সপিরেশানের সময় বা শ্বাস গ্রহণের সময় ইন্ট্রাথোরাসিক প্রেশার (বুকের ভেতরকার পরিবেশের চাপ) কমে যায়। ফলে চেস্ট এবং হার্টের রাইট সাইডে ভেনাস ব্লাডের রিটার্ণ বেড়ে যায়, যার ফলে রাইট ভেন্ট্রিকাল থেকে কার্ডিয়াক আউটপুটও বেড়ে যায়। একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রক্ত প্রবাহ চলে যায় ফুসফুসে। 

📌 তবে, পালমোনারী ভাস্কুলার বেডে , ক্যাপাসিটেন্স বা ধারণক্ষমতা বেশী। যেকারণে, হার্টের লেফট সাইডে রক্তের প্রবাহ হ্রাস পায়। এর ফলে লেফট ভেন্ট্রিকাল থেকে কার্ডিয়াক আউটপুটের পরিমাণ কমে যায়। এবং সামান্য একটু পতন লক্ষ্য করা যায় ব্লাড প্রেশারে।  


📌
অন্যদিকে, এক্সপিরেশানের সময় বিপরীত পরিক্রমায় ঘটনাগুলি ঘটতে থাকে। এক্সপিরেশান বা শ্বাস ছাড়ার সময়ে, রাইট হার্টের ভেনাস-রিটার্ন কমে যায়। রাইট ভেন্ট্রিকেলের কার্ডিয়াক আউটপুট কমে যায়। লেফট হার্টে ভেনাস রিটার্ন বাড়ে, লেফট ভেন্ট্রিকেলের আউটপুটও বাড়ে। 

📌 এই পরিবর্তনগুলির কারণে, সাধারণতঃ ইনস্পিরেশানের বা শ্বাসগ্রহণের সময় বিপি ফল করে বা রক্তচাপ কমে যায়, এবং এক্সপিরেশানের সময় বা শ্বাসছাড়ার সময় বিপি বেড়ে যায় বা  রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। 

📌 এ্যাজমা বা সিওপিডির কারণে যেসব রোগীর সিভিয়ার এয়ারওয়ে অবস্ট্রাকশান থাকে, তাদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনগুলি আরও অতিশায়িত রূপ নেয়। একে বলা হয় পালসাস প্যারাডক্সাস। 

📌 পালসাস প্যারাডক্সাসের ক্ষেত্রে ইন্সপিরেশানের সময় রক্তচাপের পতনটি অতিশায়িত রূপ নেয়। এয়ার-ওয়ে অবস্ট্রাকশানের পাশাপাশি, কার্ডিয়াক ট্যাম্পোনেডেরও একটি বৈশিষ্ট্য পালসাস প্যারাডক্সাস। এখানে, বাহ্যিক প্রেশারের কারণে কার্ডিয়াক ফিলিং বাধাগ্রস্থ (কনস্ট্রেইনড) হয়। আবার ইন্সপিরেশানের সময় রাইট ভেন্ট্রিকালের কম্প্রেশানের কারণে , ওর মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহটিও বাধাগ্রস্থ (ইমপিড) হয়। এরপর ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টামটি সরে যায় বাম দিকে। ফলে লেফট ভেন্ট্রিকুলার ফিলিং এবং কার্ডিয়াক আউটপুট বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পতন ঘটে ব্রাডপ্রেশারের ( ইন্সপিরেশানের সময় ১০ মিমি মার্কারির চেয়েও কমে যায় বিপি)।

----------------------------------------------------------------

ইসিজি কি ?

রেফারেন্স : ডেভিডসন্স মেডিসিন,  গাইটনস ফিজিওলজি

লিখেছেন : স্টাফ  রাইটার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নিউরোলজির বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষা

  লোকালাইজিং   লেশান্স   ইন দি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম - ( সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে ক্ষত বা লেশানের অবস্থান নির্ণয় )   রোগীর হিস্ট্রি নি...