পেনিসিলিন কি, সেফালোস্পোরিন কি তা নিয়ে একটি মোটাদাগের ধারণা অনেক মানুষেরই আছে। এগুলো ওষুধ। জ্বর খুব বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে ডাক্তারদেরকে এসব ওষুধ দিতে দেখা যায়। যারা আরেকটু বেশী তথ্য রাখেন, তাদের জানা আছে - পেনিসিলিন, সেফালোস্পোরিন এগুলো হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ।
অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের খুবই পরিচিত জিনিস। আমাদের দেশে প্রায় মানুষই জীবনে একবার হলেও অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স করেছেন। দেশের ঔষধ বিষয়ক নিয়মকানুন যথেষ্ট শীথিল এবং অ্যান্টিবায়োটিক লেখার বিষয়ে ডাক্তাররাও অত্যন্ত উদার হওয়ার কারণে অতি সামান্য উপসর্গ নিয়েও অ্যান্টবায়োটিক সেবন করে থাকেন আমাদের রোগীরা। যেকারণে, সফলতার সাথে, অনেক ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু উৎপাদন করা গেছে শহরের হাসপাতালগুলোতে।
এমন প্রচলিত একটি চিকিৎসার, মূল বিষয়গুলো কিন্তু অনেকেরই অজানা। অধিকাংশ মানুষ এটাও নিশ্চিত নন, অ্যান্টিবায়োটিক আসলে ঠিক কি কাজটি করে। কিভাবে সে মোকাবেলা করে রোগব্যাধিকে। অ্যান্টিবায়োটিক কি সরাসরি জ্বর কমিয়ে দেয়? নাকি ভাইরাসকে মারে? নাকি ব্যাক্টেরিয়া? আর যে বিভিন্ন কঠিন নামওয়ালা অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আমরা সেবন করে থাকি, সেগুলোর গঠনটি কিরকম এবং কিভাবে সে নিজের কাজটি করে থাকে - এসবই আমাদের আজকের আলোচনা।
ফাংগাস ঘটিত চর্মরোগের চিকিৎসা জানার জন্য পড়তে পারেন
অ্যান্টিবায়োটিক কি?
অ্যান্টিবায়োটিক এমন কতগুলো রাসায়নিক পদার্থ যেগুলি শরীরের অভ্যান্তরে ক্রিয়া করে ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এই কাজটি করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক হয় ব্যাক্টেরিয়ার কোষ প্রাচীর নষ্ট করে দেয়, অথবা ব্যাক্টেরিয়ার প্রোটিন তৈরী তথা বিভাজনকে বন্ধ করে দেয়।
অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাস মারে না :
অ্যান্টিবায়োটিকের একমাত্র কাজ এই ব্যাক্টেরিয়াকে দমন করা। অ্যান্টিবায়োটিক কখনই ভাইরাসকে মারে না। সে জ্বর বা প্রদাহও কমায় না। ভাইরাস ঘটিত রোগে, বা শরীরের আঘাত পাওয়া রোগীকে ডাক্তাররা এই জন্যেই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন, যেন - শরীরের নাজুক অবস্থার সুযোগে কোন ব্যাক্টেরিয়া শরীরকে আক্রমণ করতে না পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক মাত্র একরকম না :
অ্যান্টিবায়োটিকের বেশ কয়েকটি প্রকরণ হয়। তার মাঝে বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিকগুলো বহুল প্রচলিত। সাধারণ ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ ব্যাধির ক্ষেত্রে এই বিটা-ল্যাকটাম গ্রুপের অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিকই ব্যবহার হয়ে থাকে। আজকে তাদের বিষয়ে জানব আমরা।
বিটা-ল্যাক্টাম অ্যান্টিবায়োটিক :
এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর একটি 'বিটা-ল্যাক্টাম রিং' কাঠামো থাকে। ব্যাক্টেরিয়ার কোষ প্রাচীরকে গঠন করে এমন একটি এনজাইমকে দমন করে বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিক। এই এনজাইমটির নাম 'পেনিসিলিন বাইন্ডিং প্রোটিন'। এনজাইমটি দমন করার ফলস্বরূপ ব্যাকটেরিয়াই ধ্বংস হয়ে যায়।
বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিক কিভাবে কাজ করে :
- ফুসফুস, লিভার, পেশী, হাড় এবং ফুসফুস ঝিল্লীর, অস্থিসন্ধির মধ্যকার, হৃদযন্ত্রের ঝিল্লীর মধ্যকার এবং উদরের আবরকঝিল্লীর - ভেতরকার তরলে এই ড্রাগটি সুষ্ঠু মাত্রায় বিদ্যমান হতে পারে
- সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডে এই অ্যান্টিবায়োটিক গুলো অত বেশী মাত্রায় থাকে না। তবে মেনিনজেসে প্রদাহ থাকলে ভিন্নকথা।
- অ্যাবসেস বা পুঁজ পূর্ণ ফোস্কার ভেতরেও এই অ্যান্টিবায়োটিক ভাল কাজ করতে পারে। এবসেসের কম পিএইচ, অক্সিজেনের আংশিক চাপ, উচ্চ প্রোটিন, বা নিউট্রোফিল বিটা-ল্যাকটামের কাজের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নয়।
- বিটা-ল্যাকটামগুলো "ইনঅকুলেশান" ইফেক্টের সম্মুখীন হতে পারে। অর্থাৎ, জীবাণুর পরিমাণ খুব বেশী হলে, ড্রাগগুলোর সক্রিয়তা কমে যায়। এর কারণ, জীবাণুর পরিমাণ বেশী হলে, পেনিসিলিন-বাইন্ডিং-প্রোটিন প্রকাশিত হয় কম। ফলে ব্যাকেটিয়াকে আক্রমণের সুযোগটিই পায় না বিটা-ল্যাকটাম।
- গর্ভবতীদের জন্য বিটা-ল্যাকটাম সাধারণতঃ নিরাপদ। ইমিমেনেম বা সিলাস্ট্যাটিন।
বিটা-ল্যাক্টাম অ্যান্টিবায়োটিক এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া :
- বিটা-ল্যাক্টাম অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে তাৎক্ষণিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সাধারণতঃ বিরল। তবে প্রতিক্রিয়া যদি দেখা দেয়, সেটি মারাত্নক রূপ নিতে পারে।
- অ্যান্টিবায়োটিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার লক্ষণ : তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ইমিউনোগ্লোবিউলিন-ই ঘটিত। ৯০ ভাগ রোগী , যারা একটি পেনিসিলিন অ্যালার্জির কথা জানান, তাদের প্রতিক্রিয়াটি প্রকৃত ইমিউন-ই ঘটিত নয়। অন্যান্য প্রতিক্রিয়া, যেমন ফুসকুড়ি, জ্বর এবং রক্তঘটিত সমস্যাগুলো ( যেমন, শ্বেত রক্তকণিকা কমে যাওয়া) সাধারণতঃ বেশীদিন ট্রিটমেন্ট ( যেমন দুই সপ্তাহ ধরে পেনিসিলিন পাওয়া) চললে দেখা দিতে পারে।
- ইনফেকশাস মনোনিউক্লিওসিস রয়েছে, এমন অনেকের ক্ষেত্রেই অ্যামাইনোপেনিসিলিন প্রয়োগ করলে শরীরে র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেয়া দেয়। তবে এটি কোন দীর্ঘস্থায়ী অ্যালার্জি নয়।
- পেনিসিলিন সেফালোস্পোরিন একসাথে ব্যবহার পেনিসিলিনের প্রতি অ্যালার্জি আর সেফালোস্পোরিনের প্রতি অ্যালার্জি-র মধ্যকার সম্পর্কটি নির্ভর করে কি ধরণের সেফালোস্পোরিন ব্যবহার হল তার ওপর। ফার্স্ট জেনারেশান সেফালোস্পোরিনের ক্ষেত্রে লক্ষনীয় ক্রস-রিয়েকটিভিটি দেখা যায়। তবে সেকেন্ড বা থার্ড জেনারেশানের ক্ষেত্রে এরকম প্রতিক্রিয়া তেমন দেখা যায় না। ক্রস রিয়েকটিভিটি অর্থ পেনিসিলিন প্রয়োগে ফলে যে প্রতিক্রিয়া (বিরূপ) শরীর দেখাচ্ছে, সেটি সেফালোস্পোরিনের ব্যবহারে আরও বাড়বে।
- যেসব রোগীদের আইজি-ই ঘটিত পেনিসিলিন অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সেফালোস্পোরিন ব্যবহার না করাই ভালো।
- পেনিসিলিন আর কার্বাপনেমের মাঝে ক্রস-রিয়েকটিভিটি সাধারণতঃ হয় না। যদি আরও কোন বিকল্প না থাকে তখনই কার্বাপেনেম ব্যবহার করতে হয়। কার্বাপেনেম ব্যবহারের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, কার্বাপেনেম ঘটিত জটিলতা থেকে উদ্ধারের মত হাসপাতাল-ব্যবস্থা হাতের কাছে আছে কি না।
- পেনিসিলিন অ্যালার্জি আছে এমন রোগদের ক্ষেত্রে "অ্যাজট্রিওনাম" ( একটি মনোব্যাকটাম) ব্যবহার করলে ক্রস রিয়েকশানের সম্ভাবনা সবচেয়ে কম।
- বেশীরভাগ বিটা-ল্যকটাম অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলেই, রোগীদের ক্ষেত্রে পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রোইন্টেসটিনাল আপসেট দেখা যায়। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে মৃদু হেপাটাইটিস লক্ষ্য করা যায় ( এটা গুরুতর কিছু নয়)।
- ফ্লুক্লক্সাসিলিন এবং কো-অ্যামোক্সিক্লেভ ব্যবহার করলে হেপাটাইটিসের রূপটি আরও গুরুতর হয়। তাছাড়া লিউকোপেনিয়া (শ্বেতকণিকা কমে যাওয়া), থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া ( প্লেটলেট কমে যাওয়া), রক্ত জমাট বাধার উপাদানগুলোর হ্রাস পাওয়া, কিডনীর প্রদাহ বা ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস, আর অ্যামিনোগ্লাকোসাইড ঘটিত কিডনীর ক্ষতিও হতে পারে এই ক্ষেত্রে।
- কিডনীর সমস্যা রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে অনেক ক্ষেত্রে খিচুনী, এনকেফালোপ্যাথি দেখা যায়।
- শিরাপথে বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিক পাচ্ছে, এমন রোগীদের ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে থ্রম্বোফ্লেবাইটিস (রক্ত-নালীর প্রদাহ ও প্রতিবন্ধকতা) দেখা দিতে পারে।
বিটা-ল্যাক্টাম অ্যান্টিবায়োটিক্স : ড্রাগ ইন্টারেকশান
টেস্টিটিউবে পরীক্ষা করলে দেখা যায় অ্যামিনোগ্লাইকোসাইড আর বিটা-ল্যাক্টাম একসাথে ব্যবহার করলে, দুটোরই কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
অ্যামপিসিলিন, মুখে খাওয়ার জন্মনিরোধক ঔষধের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
বিটা-ল্যাক্টামের সাথে প্রবেনেসিড যুক্ত করলে তাদের কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যায়। রক্তরসে ২-৪ গুণ বেড়ে যায়, বিটা-ল্যাক্টামের মাত্রা।
পেনিসিলিন : পেনিসিলিনের ব্যবহারের নিয়ম এবং পেনিসিলিনের প্রকারভেদ
পেনিসিলিন মূলতঃ গ্রাম পজিটিভ জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে। শুধুমাত্র স্ট্যাফিলোকক্কাস বাদে। (স্ট্যাফিলোকক্কাইগুলো একটি পেনিসিলিন বিধ্বংসী এনজাইম তৈরী করে - পেনিসিলিনেজ)। তাছাড়া অ্যানারোবিক জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধেও কাজ করে পেনিসিলিন।
এখনও বিশ্বের প্রায় সব এলাকাতেই 'স্ট্রেপটোকক্কাস পায়োজেন্স' পেনিসিলিনের প্রতি সংবেদনশীল।
ইউরোপীয়ান অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সার্ভিলেন্স নেটওয়ার্ক অনুসারে, ইউরোপ জুড়ে পেনসিলিনকে প্রতিরোধে সক্ষম স্ট্রোপটোকক্কাস নিউমোনিয়ার সংখ্যায় বেশ তারতম্য হয়। যেমন সাইপ্রাসে এই ধরণের স্ট্রেপটোকক্কাস প্রায় দেখাই যায় না। অন্যদিকে রোমানিয়ায় ৪৬.৭ শতাংশ স্ট্রেপটোকক্কাসের ওপরই পেনিসিলিন কাজ করে না।
স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াসের বিরুদ্ধে, প্রধান চিকিৎসা পেনিসিলিনেজ-রেজিস্ট্যান্ট পেনিসিলিন। এক মেথিসিলিন রেজিস্ট্যান্ট স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস বাদে।
অ্যামাইনোপেনিসিলিন গুলো, প্রাকৃতিক পেনিসিলিন গুলোর মতই কাজ করে। বাড়তি হিসেবে এন্টারোব্যাক্টেরিয়াসি - গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া গুলোর বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দিয়ে থাকে, অ্যামাইনোপেনিসিলিন।
অ্যামপিসিলিনের তুলনায় অ্যামোক্সিসিলিন মুখে খাওয়ার জন্য বেশী ভালো। কারণ দ্বীতিয় অ্যান্টিবায়োটিকটির ট্যাবলেট রূপে শোষণ বেশী হয় শরীরে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে এই সমস্ত ড্রাগগুলোর বিরুদ্ধেই প্রতিরোধে সক্ষম বা রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়া তৈরী হয়ে গিয়েছে। যেকারণে গ্রাম-নেগেটিভের বিরুদ্ধে তাদেকে প্রায়োগিক জ্ঞানের ভিত্তিতে ব্যবহারের সুযোগ এখন আর নেই।
অধিকাংশ জীবাণুর ক্ষেত্রে এই প্রতিরোধ বা রেজিস্ট্যান্সের কারণ, ব্যাক্টেরিয়াগুলো ‘বিটা-ল্যাক্টামেজ’ তৈরী করে। মূল অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে একটি বিটা-ল্যাক্টামেজ ইনহিবিটর যোগ করে দিলে এই বিষয়টি মোকাবেলা করা যায়। ক্ল্যাভিউলোনিক এসিড বা সালব্যাক্টাম এরকম বিটা-ল্যাক্টামেজ ইনহিবিটর।
কার্বোক্সিপেনিসিলিন ( যেমন - টিকারসিলিন) এবং ইউরেইডোপেনিসিলিন ( যেমন - পিপেরাসিলিন) মূলতঃ গ্রাম-নেগেটিভ জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে। বিশেষ করে সিউডোমোনাস গ্রুপের বিভিন্ন জীবাণু, যারা অ্যামাইনোপেনিসিলিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সক্ষম। এসব পেনিসিলিনের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য বিটা-ল্যাক্টামেজ ইনহিবিটর যোগ করা যেতে পারে। যেমন : পিপেরাসিলিনের সাথে ট্যাযোব্যাক্টাম।
টেমোসিলিন তৈরী হয়, টিকারসিলিন থেকে। এন্টারোব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে এই পেনিসিলিনগুলো বেশ ভাল কাজ করে। বিশেষ করে যেসব এন্টারোব্যাকটেরিয়া ই-এস-বি-এল এনজাইম তৈরী করে। তবে সিউডোমোনাস অরিগুনোসা এবং গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে তাদের তেমন কোন কার্যকারিতা নেই।
বিভিন্ন ঔষধগুলো শরীরে কিভাবে কাজ করে? ফার্মাকোলজি জানুন
সেফালোস্পোরিন অ্যান্টিবায়োটিক : সেফালোস্পোরিন ব্যবহারের নিয়ম এবং সেফালোস্পোরিনের জেনারেশান
সেফালোস্পেরিন গুলো হচ্ছে ব্রডস্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক। অর্থাৎ, গ্রাম পজিটিভ নেগেটিভ দুই ধরণের ব্যাক্টেরিয়াকে হত্যায় তারা সক্ষম।
সমস্যা হচ্ছে, সেফালোস্পোরিন যথেষ্ট কড়া অ্যান্টিবায়োটিক। আমাদের পাকস্থলীতে ঝিনুকের মুক্তোর মত দেখতে কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে। এগুলোর নাম এন্টারোকক্কাই। সেফালোস্পোরিন অপকারী জীবাণুদের ধ্বংসকালে, আমাদের পাকস্থলীর এই এন্টারোকক্কাইগুলোকেও ধ্বংস করে ফেলে। এন্টারোকক্কাইগুলো আমাদের শরীরের কোন ক্ষতির করে না। কিন্তু তাদের দাপটে ক্লস্ট্রিডিয়াম ডিফিসিল নিজেকে সংখ্যায় শক্তিতে প্রকাশ করতে পারে না। সেফালোস্পোরিন অ্যান্টিবায়োটিকটি পরোক্ষভাবে হলেও ক্লস্ট্রিডিয়ামকে সুযোগ করে দেয়। যেকারণে, সেফালোস্পোরিন ব্যবহার করলে ক্লস্ট্রিডিয়াম ডিফিসিল ইনফেকশান হতে পারে, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে।
ব্যাতিক্রম সেফালোস্পোরিন - সেফটোবাইপ্রোল। এই গ্রুপটির এন্টারোকক্কাইয়ের বিরুদ্ধে কোন কার্যক্রম নেই।
অ্যান্টি-অ্যারোবিক ব্যাকটেরিয়াদের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে শুধু সেফামাইসিন। সকল সেফালোস্পোরিনই , এক্সটেন্ডেড-স্পেকট্রাম-বিটা-ল্যাক্টামেজ দিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়।
সেফালোস্পোরিন অ্যান্টিবায়োটিক গুলো “জেনারেশান” হিসেবে সাজানো হয়।
ফার্স্ট জেনারেশান সেফালোস্পোরিন গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে চমৎকার কাজ করে। তবে গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে তাদের কার্যকারিতা তুলামূলক কম।
সেকেন্ড জেনারেশান সেফালোস্পোরিন গ্রাম-পজিটিভের বিরুদ্ধে সমান কাজ করে। সেই সাথে গ্রাম-নেগেটিভের বিরুদ্ধেও কিছু বাড়তি সক্ষমতা রয়েছে এই অ্যান্টিবায়োটিক -টির। সেফামাইসিন -কেও এর মধ্যে ধরা হয়। তারা অ্যানারোবিক গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া -র বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।
থার্ড জেনারেশানে সেফালোস্পোরিন -এর গ্রাম নেগেটিভের বিরুদ্ধে কার্যকারিতা আরও বেশী। কিছু থার্ড জেনারেশান সেফালোস্পোরিন, যেমন সেফটাজিডিম, সিউডোমোনাস প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়াগুলোর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে।
সেফোট্যাক্সিম এবং সেফট্রিএক্সোন , গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে। স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনিয়া এবং বিটা-হিমোলাইটিক স্ট্রোপটোকক্কাই -এর বিরুদ্ধেও এরা সুফল দেয়। সেফট্রিএক্সোন দিনে একবার দেয়া নিয়ম। যেকারণে আউট পেশেন্ট আন্তঃশিরা পথে জীবাণু ধ্বংসের চিকিৎসা হিসেবে এটি ভালো।
ফোর্থ জেনারেশান সেফালোস্পোরিন অ্যান্টিবায়োটিক গুলো দুই ধরণের ব্যাক্টেরিয়াকেই মারে। এর মধ্যে স্ট্রেপটোকক্কাই এবং কিছু গ্রাম-নেগেটিভ যেমন - সিউডোমোনাস অরিগুনোসার বিরুদ্ধে ফোর্থ জেনারেশান সেফালোস্পোরিন ভালো কাজ করে।
ফিফথ জেনারেশান সেফালোস্পোরিন গুলোর মধ্যে সেফটোবাইপ্রোল, সেফটারোলিন উল্লেখযোগ্য। এটি বহুবিধ গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়াকে মারতে পারে। এর মধ্যে মেথিসিলিন রেজিস্ট্যান্ট স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াসও রয়েছে। বিভিন্ন গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেও তারা কাজ করে। সেফটোবাইপ্রোল, সিউডোমোনাস অরিগুনোসার বিরুদ্ধে কাজ করে।
বিটা-ল্যাক্টামেজ ইনহিবিটর যোগ করে সেফালোস্পোরিনের কার্যকারিতাকে (স্পেকট্রাম বা যত ধরণের ব্যাক্টেরিয়াকে ধ্বংস করতে পারবে) আরও বাড়ানো যায়।
বিভিন্ন এন্টিফাঙ্গালক ঔষধগুলো সমন্ধে জানতে পড়ুন
বিটা-ল্যাক্টাম অ্যান্টিবায়োটিক : মনোব্যাক্টাম
অ্যাজট্রিওনাম একমাত্র প্রাপ্তিযোগ্য মনোব্যাক্টাম অ্যান্টিবায়োটিক। এটি গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর। তবে এক্টেনডেড স্পেকট্রাম বিটা-ল্যাক্টামেজ তৈরী করে যেসব জীবাণু তাদের ক্ষেত্রে এই অ্যান্টিবায়োটিক ফলপ্রসূ নয়।
গ্রাম পজিটিভ জীবাণু এবং অ্যানারোব (অক্সিজেন অনির্ভর জীবাণু_) গুলোর বিরুদ্ধেও কিছু করতে পারে না অ্যাজট্রিওনাম।
অ্যাজট্রিওনাম ব্যবহার শুধুমাত্র আন্তঃশিরায়
পেনিসিলিনের প্রতি অ্যালার্জিক এমন রোগীদের ক্ষেত্রে অ্যাজট্রিওনাম নিরাপদে ব্যবহার করা যায়। তবে যারা সেফটাজিডিমের প্রতি অ্যালার্জিক তাদের ক্ষেত্রে এই অ্যান্টিবায়োটিকটি অনিরাপদ। কারণ সেফটাজিডিম আর অ্যাজট্রিওনামের একটি সাধারণ সাইড-চেন রয়েছে।
ইমিউন সিস্টেম কি? কিভাবে শরীর বিভিন্ন জীবাণুদের প্রতিরোধ করে? জানতে পড়ুন
বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিক : কার্বাপেনেম
কার্বাপেনেম অ্যান্টিবায়োটিকগুলো শুধুমাত্র আন্তঃশিরা পথে ব্যবহার করা যায়। বিটা-ল্যাক্টামের সমস্ত অ্যান্টোবায়োটিকের মধ্যে এই অ্যান্টিবায়োটিকটি সবচেয়ে বেশী ধরণের ব্যাক্টেরিয়াকে মারতে সক্ষম ( ব্রডেস্ট স্পেকট্রাম অফ একটিভিটি)। আপাতদৃষ্টে প্রায় সমস্ত ব্যাক্টেরিয়া কেই - যেগুলো রোগব্যাধি তৈরী করতে পারে - ধ্বংস করতে সক্ষম কার্বাপেনেম। অ্যানারোবরাও এর মধ্যে পড়বে। যেমন - ইমিপেনেম, মেরোপেনেম, ইট্রাপেনেম।
মেরোপেনেম সমন্ধে জানতে চাইলে পড়তে পারেন
বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিক বলতে এগুলোই। যেকোন অ্যান্টিবায়োটিকই খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সুপরামর্শ নিন।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন